Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
স্কোয়ার কাট
Ashok Malhotra

Rohit Sharma: ওভালে রোহিত রোশনাই

ওভাল টেস্টের প্রথম দিন যে ভারতীয় ব্যাটিং ভেঙে পড়েছিল, তৃতীয় দিন কিন্তু সেই ব্যাটিংই প্রত্যাঘাত করল।

জুটি: রোহিত ও পুজারার ব্যাটেই লড়াইয়ে ফিরল ভারত। গেটি ইমেজেস

জুটি: রোহিত ও পুজারার ব্যাটেই লড়াইয়ে ফিরল ভারত। গেটি ইমেজেস

অশোক মলহোত্র
শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৭:৩৭
Share: Save:

ঠিক ৪২ বছর আগে এই মাঠে স্বপ্নের একটা ইনিংস খেলেছিলেন এক ভারতীয় ওপেনার। শনিবার ওভালে আর এক ভারতীয় ওপেনারের ব্যাট থেকে পাওয়া গেল দুরন্ত সেঞ্চুরি। ১৯৭৯ সালে ওভালে ২২১ রান করেও ভারতকে জেতাতে পারেননি সুনীল গাওস্কর। বিদেশে তার প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি এ দিন পেয়ে গেল রোহিত শর্মা। প্রশ্ন হচ্ছে, আরও এক বার ওভাল জয়ের স্বপ্ন কি এ বার সত্যি হবে?

ওভাল টেস্টের প্রথম দিন যে ভারতীয় ব্যাটিং ভেঙে পড়েছিল, তৃতীয় দিন কিন্তু সেই ব্যাটিংই প্রত্যাঘাত করল। যে প্রত্যাঘাতের মধ্যে সেই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক ইডেন টেস্টের ছায়া কেউ কেউ দেখতে পেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। রানের বিচারে রাহুল দ্রাবিড়-ভি ভি এস লক্ষ্মণের জুটির সঙ্গে রোহিত শর্মা-চেতেশ্বর পুজারার তুলনা হয় না। কিন্তু দ্বিতীয় উইকেটের জুটিতে এ দিন এই দু’জনের ১৫৩ রান ভারতীয় শিবিরে নিঃসন্দেহে জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছে।

ইংল্যান্ডের পেস আক্রমণ সামলে শনিবার দিনের শেষে ভারতের রান তিন উইকেটে ২৭০। বিরাট কোহালির দল এগিয়ে ১৭১ রানে। হাতে সাত উইকেট। ক্রিজ়ে রয়েছে স্বয়ং অধিনায়ক। সঙ্গী আবারও পাঁচ নম্বরে নামা রবীন্দ্র জাডেজা। এই অবস্থায় আর ঘণ্টা তিনেকের ভাল ব্যাটিং কিন্তু সিরিজ়ে ভারতকে এগিয়ে
দিতেই পারে।

অতীতের রোহিত আর এই রোহিতের মধ্যে বেশ কয়েকটা পার্থক্য নজরে পড়ল। যেমন, আগে রোহিতের ব্যাটের মুখটা কভারের দিকে খোলা থাকত। যে কারণে বল সুইং করলে ব্যাটের কানায় লেগে স্লিপ বা গালি অঞ্চলে চলে যাওয়ার একটা আশঙ্কা থাকত এবং সেটা ঘটত। আরও একটা জিনিস করত রোহিত। বলের দিকে ব্যাটটা জোরের সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যেত। যে কারণে কানায় লাগা বল স্লিপ ফিল্ডারদের হাতে সহজেই চলে যেত। এ বার এই দুটোর একটাও করছে না ও। ব্যাটের মুখটা সোজা নামছে। আর বলটাকে আসতে দিচ্ছে ব্যাটের কাছে। পাশাপাশি বদলে গিয়েছে রোহিতের মানসিকতাও। টেস্টে এর আগে সাতটা সেঞ্চুরি হয়ে গেলেও বিদেশের মাঠে একটা সেঞ্চুরিও ছিল না এ দিনের আগে পর্যন্ত। নিজেকে প্রমাণ করার একটা তাগিদ নিয়েই যেন এই সফরে এসেছে ও। আর মানসিকতা বদলে গেলে তার প্রভাবটা টেকনিকের উপরেও পড়ে। রোহিতের খেলায় যেটা ধরা পড়ছে। দুটো পরিসংখ্যান দিচ্ছি। তাতেই বোঝা যাবে নিজেকে কতটা বদলে নিয়েছে এই রোহিত। এক, রোহিতের করা টেস্ট সেঞ্চুরির মধ্যে এটাই মন্থরতম। ‘স্ট্রাইক রেট’ (প্রতি একশো বলে কত রান) ৪৮.৮০। এত কম স্ট্রাইক রেটে এর আগে টেস্টে সেঞ্চুরি করেনি রোহিত।

দুই, প্রথম পঞ্চাশ রান করতে রোহিত নিয়েছে ১৪৯ বল। দ্বিতীয় পঞ্চাশ এসেছে ৫৯ বলে। ডট বল (যে বলে রান হয় না) দেড়শোর উপরে। একটা সময় স্ট্রাইক রেটে রোহিতকে অনেকটাই পিছনে ফেলে দিয়েছিল চেতেশ্বর পুজারাও! বোঝাই যাচ্ছে, সাদা বলের ক্রিকেট থেকে নিজেকে কতটা পরিমার্জিত করে নিয়েছে টেস্টের রোহিত। কিন্তু হাফসেঞ্চুরি হয়ে যাওয়ার পরে ওভালে রোহিতের ব্যাটে শটের রোশনাইও দেখা গেল।

হেডিংলের দ্বিতীয় ইনিংসের পর থেকে নিজেকে বদলে নিয়েছে পুজারাও (১২৭ বলে ৬১)। এ দিনও দেখলাম বেশ আগ্রাসী ভঙ্গিতে ব্যাট করল। নেমেই কাট করল, পুল করল, ড্রাইভ মারল। রোহিত এবং কে এল রাহুল মিলে প্রথম নতুন বলটা ভালই সামলে নিয়েছিল। এই দুই ওপেনার যখনই ভাল রান তুলে দিয়েছে, ভারতের মাঝের সারির ব্যাটসম্যানরা স্বস্তিতে খেলতে পেরেছে। পুজারার জন্যও তৃতীয় দিন ভাল মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছিল রোহিত-রাহুল।

অবাক লাগলেও এটা ঘটনা যে, পুজারা নামার পরে রানের গতিটাও বেড়ে যায়। রোহিতও চাপমুক্ত থেকে খেলাটা খেলতে পারে। অফস্পিনার মইন আলি আক্রমণে আসার পরে শট খেলতে শুরু করে। মইনকে ছয় মেরে সেঞ্চুরি পাওয়ার মধ্যে দেখা গেল গেল সাদা বলের সেই রোহিতকে।

দেখার ছিল, দ্বিতীয় নতুন বলে ইংল্যান্ড লড়াইয়ে ফিরে আসতে পারে কি না। অলি রবিনসন প্রথম ওভারেই ফিরিয়ে দিল দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যানকে। এতটা সময় সংযত থাকা রোহিত আলগোছে একটা পুল মারতে গেল। বলের বাউন্সটা বুঝতে না পারায় ব্যাটের উপরের দিকে লেগে ডিপ স্কোয়ারলেগে ক্যাচ চলে গেল। পুজারাও এই অতিরিক্ত বাউন্সের শিকার। বলটা ব্যাটের ভিতরের কানায় লেগে, পায়ে লেগে তৃতীয় স্লিপে থাকা মইনের হাতে চলে যায়।

ওভালের পিচে আমার খেলার অভিজ্ঞতা না থাকলেও ইংল্যান্ড সফরে যাওয়ার সুবাদে এই মাঠের গতিপ্রকৃতির একটা আঁচ পাই। ইংল্যান্ডের সব ক’টা টেস্ট কেন্দ্রের মধ্যে ওভালকেই সেরা ব্যাটিং উইকেট বলা যায়। চতুর্থ দিনের শেষ দিক থেকে বলটা একটু ঘুরতে থাকে। তবে এই মাঠের আর একটা ব্যাপার আছে। বাউন্সটা বেশ ভাল। যে কারণে শক্ত নতুন বল থেকে সাহায্য পায় পেসাররা। নতুন ডিউকস বলটা পাওয়ার পরে যে সাহায্য পেল রবিনসন-অ্যান্ডারসনরা।

রবিবার, চতুর্থ দিনে ১২ ওভার পুরনো বল নিয়ে আক্রমণ শুরু করবে ইংল্যান্ড। কোহালি এবং জাডেজার কাজটা হবে অন্তত আরও ১০ ওভার জুটিটা টিকিয়ে রাখা। তা হলে পাঁচ নম্বরে নামার মর্যাদা কিছুটা হলেও দিতে পারবে জাডেজা।

পিচ এখনও ব্যাটিংয়ের পক্ষে যথেষ্ট ভাল। ২৭৫ থেকে ৩০০ রানের চ্যালেঞ্জ দিতে হবে ইংল্যান্ডকে। এখনও বলছি, এই ইংল্যান্ড দলে জো রুট ছাড়া বড় রান তোলার ব্যাটসম্যান সে ভাবে নেই। তা ছাড়া শেষ দিনে যে শুধু পিচকেই সামলাতে হবে, তা তো নয়। স্কোরবোর্ডের চাপও বড় প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায়।

শুধু একটাই আক্ষেপ। এই দলে যদি আর অশ্বিন থাকত!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE