Advertisement
E-Paper

‘ক’-এর ঘূর্ণিতে ধরাশায়ী পাকিস্তান, একতরফা ম্যাচে ঝোড়ো ব্যাটে জবাব রোহিতের

সত্যিই, এক যুগ পরে মরুশহরে ভারতের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে পাকিস্তান একেবারে  ‘গেল’!   

কৌশিক দাশ

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৩৩
রোহিত শর্মা: রোহিত কথায় নয়, ব্যাট হাতে ঔদ্ধত্য দেখিয়েছেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। অধিনায়কেরই আজ ওপেনিং করার কথা।

রোহিত শর্মা: রোহিত কথায় নয়, ব্যাট হাতে ঔদ্ধত্য দেখিয়েছেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। অধিনায়কেরই আজ ওপেনিং করার কথা।

কমেন্ট্রি বক্স থেকে বেরিয়ে পেটানো চেহারার দু’জন লোক একটু হতাশ ভাবে মাঠের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। এক জন লাল টকটকে টি শার্টে, অন্য জনের টি শার্টটা সবুজ শ্যাওলা গোছের। একটু আগেই তাঁদের দেখতে হয়েছে, দলের ব্যাটিং বিপর্যয়। এ বার দেখতে হল, মহম্মদ আমির বা হাসান আলিকে কী সহজেই বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন দুই ভারতীয় ওপেনার। অসহায় চোখে এক বার মাঠের দিকে তাকালেন তাঁরা।

কী মনে হচ্ছিল শোয়েব আখতার ও ওয়াকার ইউনিসের? দলের এই অসহায় আত্মসমর্পণ দেখে কি আর একবার বোলিং মার্কে দাঁড়াতে ইচ্ছা করছিল? আর যিনি আজ মাঠে এলেন না, তাঁর কী মনে হত? সকালে টিম হোটেলে নিয়ে যাওয়া ট্যাক্সি ড্রাইভারই হোক বা মাঠের বাইরে দাঁড়ানো অত্যুৎসাহী দর্শক— সবারই একটা প্রশ্ন ছিল, ইমরান খান কি আসছেন? ইমরান না এসে ভালই করেছেন। এ রকম একতরফা ম্যাচ নতুন পাক প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষ কষ্টই দিয়ে যেত।

আরও পড়ুন: কোমরে গুরুতর চোট পেয়ে মাঠের বাইরে হার্দিক, বাকি ম্যাচ খেলতে পারবেন তো?

সেই কষ্টটা কি রোহিত শর্মা ম্যাচের আগেই পেয়েছিলেন? দুবাইয়ে দল নিয়ে আসার পর থেকে তাঁকে শুনতে হয়েছে, বিরাট কোহালির না-থাকায় ভারতের জেতার সম্ভাবনা অনেক কমে গিয়েছে। শুনতে হয়েছে, পাক পেসাররা হুঙ্কার দিচ্ছেন, আমি পাঁচটা উইকেট চাই, আমি দশটা উইকেট চাই। যে দুই পাক পেসার ম্যাচের আগে এ সব কথা বলেছিলেন, সেই উসমান খান-হাসান আলিকে একটু বেশিই মারলেন রোহিত (৩৯ বলে ৫২, ছ’টা চার, তিনটে ছয়)। যেন বলতে চাইলেন, দশটা-পাঁচটা নয়, আগে এই একটা উইকেট নিয়ে দেখাও।

উচ্ছ্বাস: পাকিস্তানের বাবর আজ়মকে ফেরানোর পরে অধিনায়ক রোহিত শর্মার সঙ্গে কুলদীপ যাদব। বুধবার দুবাইয়ে। ছবি: এএফপি।

ভারত-পাক ম্যাচ ফিরেছে মরুভূমিতে। উৎসাহ, আনন্দের মাত্রাটা তা-ই বেশিই ছিল। খেলার মাঝপথে স্টেডিয়ামে ‘চক দে, ইন্ডিয়া’ বাজছিল মাঝে মাঝেই। খেলা শেষে হুঙ্কার উঠল, ‘ভারত মাতা কী জয়।’ আর একটা স্লোগান— ‘পাকিস্তান জিতেগা’, তখন হারিয়ে গিয়েছে।

পাকিস্তানের ইনিংস ১৬২ রানে শেষ হয়ে যাওয়ার পরে শোয়েব আখতার প্রেস বক্সের সামনে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, ‘‘পাকিস্তানের এই দলটায় শোয়েব মালিক আর বাবর আজম ছাড়া সে রকম উঁচু মানের ব্যাটসম্যান কোথায়?’’ সেই বাবরকে ফিরিয়ে দিল ম্যাচের সেরা ডেলিভারি। কুলদীপ যাদবের গুগলি। কিন্তু ফখর জমান? গত বছর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালে সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যান। শোয়েব বলে দিলেন, ‘‘ফখরের ব্যাটে যে দিন বল লাগবে, সে দিন রান উঠবে। আর না লাগলে, হাল খারাপ হবে।’’

রোহিত কথায় নয়, ব্যাট হাতে ঔদ্ধত্য দেখিয়েছেন। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা শিখর ধওয়নও ভাল খেললেন। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের এই আরামের কুশনটা দিয়ে যান বোলাররা। যে বোলাররা ২৪ ঘণ্টা আগেই হংকংয়ের মতো দলের বিরুদ্ধে প্রথম উইকেটটা ফেলেছিলেন ১৭৪ রানে! আর পাকিস্তান ব্যাটিং শেষ ১৬২-তে। যে রানটা দু’উইকেট হারিয়ে মাত্র ২৯ ওভারে তুলে দিল ভারত।

কিন্তু কী জাদুমন্ত্রে বদলে গেল ভারতীয় বোলিং? আগের ম্যাচের দল থেকে খলিল আহমেদ আর শার্দূল ঠাকুরকে বসিয়ে আনা হয়েছিল যশপ্রীত বুমরা আর হার্দিক পাণ্ড্যকে। কে এল রাহুল বাইরেই থাকলেন। তার মধ্যে পাণ্ড্য পাঁচ ওভারও শেষ করতে না পেরে কোমরে চোট লাগিয়ে স্ট্রেচারে করে বেরিয়ে গেলেন। চোট গুরুতর। এমনকী প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে গেলেও অবাক হওয়ার থাকবে না। ধারাভাষ্য দিতে আসা এক প্রাক্তন ক্রিকেটার বলে গেলেন, ‘‘মনে হচ্ছে আর এশিয়া কাপে দেখা যাবে না।’’

তা হলে পাক ব্যাটিং ভেঙে পড়ল কেন? স্কোরবোর্ড দেখাচ্ছে, চার উইকেট নিয়েছেন স্পিনাররা, আর ভুবনেশ্বর তিন, বুমরা দুই। স্পিনারদের মধ্যে তিনটে আবার কেদার যাদবের শিকার। ভারতীয় ইনিংসের সময় এক কিংবদন্তি প্রাক্তন ওপেনার আড্ডাচ্ছলে বলছিলেন, ‘‘আমাদের সময় স্পিনটা বুঝতাম বোলারের হাত দেখে। আর এখন ব্যাটসম্যানরা পিচে পড়ার পরে, সেটা বোঝার চেষ্টা করে। যে জন্য সমস্যা।’’

আরও পড়ুন: সূচি নিয়ে অভিযোগ এ বার মাশরফির

কেদার যাদব ডেলিভারির সময় যেখান থেকে হাতটা আনেন, সেটা দেখে বলটা বুঝতে গেলে ব্যাটসম্যানকে মোটামুটি স্কোয়ার লেগের কাছাকাছি একটা জায়গায় স্টান্স নিতে হবে। ব্যাটসম্যানদের পক্ষে বাঁচোয়া, কেদার বিশেষ বল ঘোরান না। কিন্তু বল না ঘুরলেও কেদারের হাত যে ভাবে ঘুরেছে, তাতেই বোধ হয় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছেন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা।

কিন্তু পাশাপাশি একটু আত্মতুষ্টি কি ছায়া ফেলেনি পাক শিবিরে? হংকংয়ের সঙ্গে ভারতের ম্যাচ দেখার পরে? সকালে পাকিস্তানের টিম হোটেলে গিয়ে দেখা গেল, খোশমেজাজে ঘুরছেন সরফরাজ আহমেদ, উসমান খানরা। ছোট্ট মেয়েকে কোলে নিয়ে লবিতে ঘুরপাক খাচ্ছেন মহম্মদ আমির। ভারত-পাক মেগা ম্যাচের আগে একেবারে নিরুত্তাপ, ফুরফুরে পরিস্থিতি। এর দুটো ব্যাখ্যা হতে পারে। এক, চাপ কাটানোর জন্য নিজেদের হাল্কা রাখার চেষ্টা। দুই, বিপক্ষকে বিশেষ পাত্তা না দেওয়া। ভারত-হংকং ম্যাচটা যে পাক ক্রিকেটারেরা দেখেছিলেন!

ভুবনেশ্বর কুমারের বিরুদ্ধে চোখ কান বুজে এগিয়ে মারতে গিয়ে ধোনিকে ক্যাচ দিলেন ইনজামাম উল হকের ভাইপো ইমাম উল হক। কাকা সামনে থাকলে হয়তো কান পাকড়ে দু’টো থাপ্পড়ই কষিয়ে দিতেন। অথচ এটা ইমামের স্বাভাবিক খেলা নয়। ভুবনেশ্বরকে যে শুরুর দিকে এ ভাবে মারা অতটা সোজা হয় না, তা তিনি বোধ হয় ভুলে গিয়েছিলেন। মারতে গিয়ে ফিরলেন ফখরও। শোয়েবের কথায়, ‘বল্লা চলা তো আচ্ছা, নহি চলা তো গয়া।’’

সত্যিই, এক যুগ পরে মরুশহরে ভারতের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে পাকিস্তান একেবারে ‘গেল’!

Cricket Rohit Sharma India-Pakistan Asia Cup Asia Cup 2018
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy