মুম্বই-এটিকে ম্যাচের ফাইল চিত্র।
গুয়াহাটিতে আজ এটিকে বেঞ্চে জোসে মলিনা থাকছেন না। ম্যাচের সময় মাঠে কোচ না থাকলে তার প্রভাব হিউম-অর্ণবদের খেলার উপর পড়বে কি না, তা নিয়ে দেখছি অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করছেন।
জানি প্রশ্নটা করার কারণ কী। গত বার আই লিগে আমি যখন মোহনবাগানের চারটে ম্যাচে সাসপেন্ড ছিলাম, সেই সময় নানা ঘটনায় ট্রফিটা হাতছাড়া হয়েছিল আমাদের। এখনও আমার নিজের বিশ্বাস, ওই ম্যাচগুলোতে আমি মাঠে থাকলে হয়তো আই লিগ খেতাব মোহনবাগানের হাত থেকে বেরিয়ে যেত না।
কিন্তু আমার টিমের সেই সময়ের সঙ্গে এটিকের এখনকার লিগ টেবলের পরিস্থিতির অনেক ফারাক। মোহনবাগান তখন আই লিগে চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে ছিল। কলকাতা সেখানে আইএসএলে ওদের সাত নম্বর ম্যাচ খেলতে নামছে। চ্যাম্পিয়নশিপের কোনও চাপ নেই। ফলে শুক্রবার মাঠে মলিনার না থাকাটা তেমন কোনও ফ্যাক্টর হবে বলে আমি মনে করি না। তবে মলিনার টিমের মনোবল ফেরাতে নর্থ-ইস্ট ম্যাচটা জেতা খুব দরকার। কেন জানি না মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে আগের ম্যাচেও দেখলাম মলিনা ৪-৩-২-১ ফর্মেশনে খেলালেন এটিকে-কে। রক্ষণাত্মক ফর্মেশন। শেষ পর্যন্ত হেরেও গেলেন।
আক্রমণেও বৈচিত্র ছিল না হিউমদের। সেই স্ট্রাইকারের পিছন থেকে জাভি লারার পেনিট্রেটিভ জোনে ঢোকার চেষ্টা! হিউম-দ্যুতির মাঝেমধ্যে জায়গা বদল করে খেলা। সেই উইং দিয়ে বেশির ভাগ আক্রমণ তোলার চেষ্টা। একেবারে চেনা ফর্মেশন। মলিনার ‘প্ল্যান বি’ বলে কিছু খুঁজে পেলাম না। এটিকের খেলার দিকে নজর দিলে বোঝা যাবে ওদের কোচ কী চাইছেন। নিজের ডিফেন্সে তালাচাবি মেরে তবেই গোল করতে যাওয়ার ভাবনা! আগে তো ড্র। জেতার ভাবনা হারা কোনও মতেই চলবে না।
যদিও এটা এটিকের আগের কোচ আন্তোনিও হাবাসের মধ্যেও দেখতাম। মলিনার টিম ছ’টা ম্যাচের তিনটে ড্র করেছে। হাবাসের আমলেও এ রকমই হয়েছিল। প্রথম বছর লিগে সাতটা ম্যাচ ড্র করেছিল কলকাতা। গত বার প্রথম তিন ম্যাচের দু’টো জিতে, একটা ড্র করার পরে টানা তিনটে ম্যাচ হেরেছিল হিউমরা।
যেখানে বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদের মতো ক্লাবের খেলা গোটা ফুটবলদুনিয়া কাঁপায়, সেই স্পেন থেকে আসা কোচেরা কেন এখানে টিমকে এত ডিফেন্সিভ ফুটবল খেলতে বলেন, সেটা নিয়ে আমার প্রায়ই নানা প্রশ্ন জাগে মনে।
হাবাস-মলিনার মধ্যে কে ভাল, তা মাপার সময় এখনও আসেনি। তবে এটিকে বেঞ্চে দু’জনের মানসিকতায় অনেক ফারাক দেখছি। হাবাস সাইডলাইনে এমন অঙ্গভঙ্গি করতেন, চিৎকার করতেন যে, পুরো টিমটা চার্জড হয়ে যেত। মলিনা তুলনায় অনেক শান্ত। চিৎকার করেন, কিন্তু মেপে। নিজে একজন কোচ হিসেবে আমি কিন্তু হাবাসের আগ্রাসী মনোভাবকে বেশি পছন্দ করি। কারণ খেলার সময় নিজের ফুটবলারদের তাতাতে কোচেদের একটা আগুনে মেজাজ নিয়ে সাইডলাইনে ঘোরাফেরার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি।
পস্টিগা না ফেরা পর্যন্ত পুরনো ফর্মেশন ছেড়ে মলিনা বেরোবেন বলে আমার মনে হয় না। নর্থ-ইস্টে বিরুদ্ধেও হয়তো এক স্ট্রাইকারেই খেলাবেন কলকাতাকে। তবে আজ কলকাতার লড়াইটা বেশ কঠিন হতে পারে। শেষ ছ’দিন বিশ্রাম পেয়েছে কাতসুমিরা। ওরা অনেক চাঙ্গা এটিকের চেয়ে। কলকাতাকে পরপর খেলার ধকল সামলে লড়াইয়ে নামতে হবে।
সব শেষে ম্যাচের বাইরের প্রসঙ্গে একটা কথা না লিখে পারছি না। থিয়েরি অঁরি-র মতো প্রাক্তন তারকাদের আইএসএলে দর্শক করে এনে কী লাভ হচ্ছে? পেলে যখন কলকাতায় খেলতে এসেছিলেন তখন সারা ভারত উত্তাল হয়ে গিয়েছিল। ক্লাস টেনের ছাত্র আমিও কসমস ম্যাচ দেখতে ইডেনে গিয়েছিলাম। তার পর তো মারাদোনা থেকে মেসি, রজার মিল্লা থেকে অলিভার কান—কত বিশ্বখ্যাত তারকা এলেন ভারতে। তাতে এ দেশের ফুটবল কি একটু হলেও এগিয়েছে? ওঁদের কেউ এসে তো এক দিনের একটা ক্লিনিকও করেননি ভারতীয় ছাত্র-ফুটবলারদের উন্নতির জন্য! তা হলেও অন্তত ভারতীয় ফুটবল সমৃদ্ধ হত!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy