সোমবার এটিকে প্র্যাকটিসে দেবজিৎ। ছবি: উৎপল সরকার
ঘরের মাঠে এ পর্যন্ত পাঁচটা হোম ম্যাচের মাত্র একটা থেকেই পুরো পয়েন্ট তুলেছে আটলেটিকো দে কলকাতা! হোম ম্যাচেই কি তা হলে জোসে মলিনার দল বেশি নড়বড়ে?
স্টিভ কপেলের কেরল ব্লাস্টার্স আবার তাদের ছ’টা অ্যাওয়ে ম্যাচের চারটেতে কোনও গোল করতে পারেনি। সব মিলিয়ে মেহতাবদের অ্যাওয়ে ম্যাচে গোল মাত্র তিন!
অঘ্রাণের দুপুরে রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামের প্রেসরুমে বসে এই সব তথ্য শুনে হেসে ফেলেন কেরল কোচ কপেল। বিরাশির বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা উইঙ্গার বলে ওঠেন, ‘‘তাতে কী যায় আসে? সেমিফাইনালের জন্য আমাদের এখান থেকে তিন পয়েন্ট চাই। তবে কলকাতার ফরোয়ার্ডরা দুরন্ত ফর্মে। কাজেই জেতা সহজ হবে না।’’
আধঘণ্টা পর মলিনাকে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে ঢুকলেন এটিকের মার্কি পস্টিগা। প্রশ্ন উড়ে গেল, এই ম্যাচে ড্র, না জয় কোনটা চাইছেন? পস্টিগা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন প্রশ্নকর্তাকে। তার পর বললেন, ‘‘সেমিফাইনাল প্লে অফের জন্য নিজেদের ছন্দ ধরে রাখাটা খুব জরুরি। মাঠে নামি জিততেই। কেরলের বিরুদ্ধেও জিততেই নামবে এটিকে।’’
উদ্দেশ্যটা স্পষ্ট। কেরলের পর কলকাতাকে শুক্রবারই খেলতে হবে পুণের সঙ্গে। কলকাতারই প্রাক্তন কোচ হাবাস যে দলের কোচের চেয়ারে বসে হোম ম্যাচে হারিয়েছেন কলকাতাকে। কলকাতাকে তাঁর হাতের তালুর মতো চেনা। তাই সেমিফাইনাল সরণিতে ওঠার যাবতীয় টেনশন হাবাসের সামনে পড়ার আগেই মঙ্গলবার শেষ করে দিতে চায় মলিনার কলকাতা।
বারো রাউন্ডের পর কলকাতা এবং কেরল—দু’দলেরই পয়েন্ট ১৮। গোল পার্থক্যে কলকাতা লিগ টেবলে তিন নম্বরে থাকলেও কেরলও ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলে দাঁড়িয়ে রয়েছে চার নম্বরে। এই পরিস্থিতিতে পস্টিগা-হিউমরা আর শেষ চারের দরজায় কড়া নেড়েই ক্ষান্ত থাকতে চান না। মঙ্গলবার রাতেই ঢুকে পড়তে চান সেমিফাইনালের কক্ষে।
এ বার কেরলের এগারো গোলের মধ্যে ন’টা এসেছে দ্বিতীয়ার্ধে। যে কারণে অ্যারন হিউজদের টিমকে বলা হচ্ছে দ্বিতীয়ার্ধের সেরা টিম। যা শুনে কেরল কোচ কপেলের রসিকতা, ‘‘তাই নাকি? তা হলে তো ছেলেদের সেকেন্ড হাফটাই আগে খেলতে বলব কাল!’’ কলকাতা কোচ অবশ্য ‘দ্বিতীয়ার্ধ’ নিয়ে রসিকতার অবস্থায় নেই। মলিনা বললেন, ‘‘জানি আমরা শেষের দিকে গোল খেয়েছি গত কয়েকটা ম্যাচে। কিন্তু তার জন্য কোনও বিশেষ ফুটবলারকে দায়ী করা যায় না। শেষ ম্যাচে গোয়াকে হারালেও আমি সন্তুষ্ট নই। তা ছাড়া ও সব অতীত। মঙ্গলবার নতুন করে শুরু করতে হবে।’’
পরক্ষণেই চব্বিশ ঘণ্টা আগে দিল্লির দুরন্ত জয়ের উদাহরণ তুলে এনে মলিনা যেন বুঝিয়ে দেন, কেরলের রক্ষণে গোলের উৎসব করতে মুখিয়ে রয়েছেন তিনিও। যেমন আগের দিন গোয়া রক্ষণে ‘উৎসব’ করেছে দিল্লি। সঙ্গে নিজের টিমের মনোবল ধরে রাখতে এটাও বলতে ভোলেন না, ‘‘সুযোগ তৈরি না হলে চিন্তা করতাম। কিন্তু সে রকম কিছু হয়নি আমাদের।’’
টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে কোচিতে মেহতাব-সন্দীপদের হারিয়ে এসেছিল এটিকে। কিন্তু সেই কেরলে বিনীত, রিনো অ্যান্টো, অ্যারন হিউজরা ছিলেন না। এ বার পুরো দল নিয়েই সিংহের গুহায় ঢুকে সিংহ শিকার করতে এসেছেন মহম্মদ রফিকরা। রফিক এ দিন বলছিলেন, ‘‘ওদের মাঝমাঠ আর ডিফেন্স বেশ শক্তিশালী। এই ম্যাচ থেকে আমাদের এক পয়েন্ট পেলেও হবে। এ বার বিনীত, হিউজরা থাকায় আমরা দুর্বলও নই।’’ সেখানে এটিকে শিবিরে জ্বর সমীঘ দ্যুতির। মঙ্গলবার তিনি অনিশ্চিত। তাঁর মতোই অনিশ্চয়তা লালরিন্দিকা, সেরেনো নিয়েও।
এ বার আইএসএলে জাভি লারা গোল লক্ষ্য করে ২৫টা শট নিয়েছেন। ১৮টা থেকেছে তেকাঠির মধ্যে। তিনি মঙ্গলবার থাকতে পারেন মলিনার প্রথম দলে। কিন্তু লারা যাতে প্রথম পর্বের মতো দূরপাল্লার শটে গোল করতে না পারেন সে জন্য কেরলের মিডল থার্ডে আজ মামাতকে রাখবেন কেরল কোচ। আর কলকাতার আক্রমণ আটকাতে হিউজ-সন্দেশ-হেঙ্গবার্টদের রক্ষণ তো আছেই। যার স্তুতি গেয়ে কেরলের বঙ্গসন্তান কিপার সন্দীপ নন্দী অবশ্য স্বীকার করছেন, ‘‘লড়াইটা ওদের অ্যাটাকের সঙ্গে আমাদের ডিফেন্সেরই।’’
মলিনা আবার কেরলের সাম্প্রতিক ভাল পারফরম্যান্সের ব্যাখ্যায় বলছেন, ‘‘টিমটা শুরুর দিকে লং বল খেলছিল। কিন্তু টুর্নামেন্ট যত এগিয়েছে ততই ঠিক কম্বিনেশনটা খুঁজে পেয়েছে ওরা। কেরলের ডিস্ট্রিবিউশন বন্ধ করতেই হবে।’’
মঙ্গলবারে
আইএসএল— আটলেটিকো দে কলকাতা: কেরল ব্লাস্টার্স (রবীন্দ্র সরোবর, ৭-০০)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy