Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ফিকরুদের পয়েন্ট হারানো চলছে, হাবাসের রেফারি আক্রমণও

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় গ্যালারিতে এসে বসার সঙ্গে সঙ্গেই টিভি ক্যামেরা তাঁকে ধরল। দু’টো জায়ান্ট স্ক্রিনে সেই ছবি দেখাতেই গ্যালারি জুড়ে চিত্‌কার, “গোল মারো এটিকে।” নেহরু স্টেডিয়াম থেকে কিছুটা দূরে ফিরোজ শাহ কোটলায় বহু ম্যাচ খেলেছেন প্রিন্স অব কলকাতা। তাঁর ব্যাটে রানের তুফান ওঠার সময় সেখানে চিত্‌কার হত। তাঁকে সমর্থন জানিয়ে। ফুটবল মাঠে তাঁর প্রথম আসার অভ্যর্থনাটা উল্টোমুখী দেখে হাসলেন আটলেটিকো দে কলকাতার অন্যতম মালিক।

দিল্লিতেও গোল পেলেন না ফিকরু। ছবি: পিটিআই

দিল্লিতেও গোল পেলেন না ফিকরু। ছবি: পিটিআই

রতন চক্রবর্তী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:০৩
Share: Save:

আটলেটিকো ০
দিল্লি ০

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় গ্যালারিতে এসে বসার সঙ্গে সঙ্গেই টিভি ক্যামেরা তাঁকে ধরল। দু’টো জায়ান্ট স্ক্রিনে সেই ছবি দেখাতেই গ্যালারি জুড়ে চিত্‌কার, “গোল মারো এটিকে।”

নেহরু স্টেডিয়াম থেকে কিছুটা দূরে ফিরোজ শাহ কোটলায় বহু ম্যাচ খেলেছেন প্রিন্স অব কলকাতা। তাঁর ব্যাটে রানের তুফান ওঠার সময় সেখানে চিত্‌কার হত। তাঁকে সমর্থন জানিয়ে। ফুটবল মাঠে তাঁর প্রথম আসার অভ্যর্থনাটা উল্টোমুখী দেখে হাসলেন আটলেটিকো দে কলকাতার অন্যতম মালিক। কিন্তু বেরোনোর সময় দেখা গেল আন্তোনিও হাবাসের মতোই সৌরভের চোখেমুখেও চিন্তার বলিরেখা। বোঝাই যায়, সেমিফাইনালে ওঠার নতুন অঙ্কটাই কোচ আর মালিককে এক বিন্দুতে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। কলকাতার অবস্থা যেন, ওয়ান ডে ম্যাচের শেষ ওভারের মতো। এক নম্বর থেকে আগেই তিনে চলে গিয়েছিল হাবাস বিগ্রেড। মঙ্গলবারও সেই তিনেই থেকে গেল। তাতে কী? লিগ টেবিলের অঙ্ক বলছে শেষ চার নিশ্চিত করতে, শেষ দু’ম্যাচে আরও দু’পয়েন্ট দরকারই। বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই বেরিয়ে গিয়েছেন সৌরভ। তিনি কিছু বলেননি। হাবাস অবশ্য চিন্তাটা সামনে আনতে চাইছেন না টিম চাপে পড়ে যাওয়ার ভয়ে। “আমি আশাবাদী পরের দু’টো ম্যাচ জিতে আমরা লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব।” বলে দিয়েই টিম বাসের দিকে পা বাড়িয়েছেন। কিন্তু সেটা কি সম্ভব? কেরলে হার, পুণেতে ড্র, দিল্লিতেও দু’পয়েন্ট নষ্ট। এর পর বাইরের মাঠে মুম্বই আর ঘরের মাঠে গোয়া। দুটোই কঠিন ম্যাচ। দু’পয়েন্ট হবে তো! টিমের সঙ্গে নিয়মিত ঘোরা কর্তাদের কিন্তু পাংশু মুখ।

ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে দু’ম্যাচ সাসপেন্ড হয়েছিলেন হাবাস। তাতে কিছুটা শান্ত হয়েছেন ঠিকই। কিন্তু পুরোটা নয়। এ দিন সারাক্ষণ রেফারির নানা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাত-পা ছুড়লেন রিজার্ভ বেঞ্চে দাঁড়িয়ে। বিরতির সময় দেখা গেল, ম্যাচের রেফারি রাওয়ান ও সহকারী রেফারিদের ফেরার রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। শুরু করেছেন তর্কাতর্কি। সেটা অবশ্য বেশি দূর গড়ায়নি। সাংবাদিক সম্মেলনে এসে অবশ্য ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি। “কেন জানি না টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই কলকাতা খারাপ রেফারিংয়ের শিকার হচ্ছে। আজও তো দু’টো পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত হলাম। ফিকরুকে ওভাবে ফেলে দিল তাতেও পেনাল্টি পাব না?” রেফারির বিরুদ্ধে হাবাসের এই বিষোদগারে আইএসএলের নিয়মে শৃঙ্খলাভঙ্গ হল কি না তা নিয়ে ম্যাচের পর তুমুল বিতর্ক কিন্তু শুরু হয়েছে। কিন্তু কোন রেফারির বিরুদ্ধে হাবাস কামান দাগলেন তা নিয়েও চলছে হাসাহাসি। কারণ বিশ্ব ফুটবলে জানা নেই। ভারতীয় ফুটবল ইতিহাসে সম্ভবত প্রথমবার এমন একটি প্লেয়ার লিস্ট তুলে দেওয়া হয়েছিল যেখানে রেফারি, সহকারী রেফারি বা ম্যাচ কমিশনারের নাম-ই নেই। বোঝাই যাচ্ছে আইএসএলে আলোর নিচে অন্ধকার অনেক। এবং যা ক্ষমাহীন। তুবড়ি, ড্রাম বাদন, ডিজে থেকে বিপনণ--যত আড়ম্বরই থাক, টেকনিক্যাল দিকটার দিকে নজর দেওয়ার লোক কম।

দেল পিয়েরো দিল্লি টিমের প্রথম একাদশে থাকবেন না জানাই ছিল। তা বলে লুই গার্সিয়া? কেরল ম্যাচেও শুরুতে ছিলেন না কলকাতার স্প্যানিশ বিশ্বকাপার। হারের মুখে নামানো হয়েছিল তাঁকে। তাতে প্রচণ্ড সমালোচিত হয়েছিলেন হাবাস। এ দিনও কলকাতা কোচ দলের মার্কি ফুটবলারকে বসিয়ে রাখলেন রিজার্ভ বেঞ্চে। বিরতির পর ওয়ার্ম আপ করতে দেখা গেল স্প্যানিশ বিশ্বকাপারকে। কিন্তু তখনই বিশ্বজিত্‌ সাহা চোট পাওয়ায় বেঞ্চেই ফিরে যেতে হয় গার্সিয়াকে। হাবাস স্বীকার করলেন, গার্সিয়াকে পরে নামানোর ইচ্ছে ছিল তাঁর। পাশাপাশি অবশ্য এটাও বললেন, “কাকে কখন খেলাব সেটা আমার ব্যাপার।”

গার্সিয়া থাকলে কলকাতার মাঝমাঠটা জমাট বাঁধত ঠিক। সাপ্লাই লাইনেরও আরও উন্নতি হত। কিন্তু তা সত্ত্বেও লিখতেই হচ্ছে ম্যাচটা জেতা উচিত ছিল কলকাতার। বলজিত্‌ সাইনি নিশ্চিত গোল নষ্ট করার পর এত রেগে গেলেন পদানি যে, তেড়ে যাচ্ছিলেন রাগে। তাঁকে আটকান ফিকরু। হোফ্রে বা বোরহাও সহজ সুযোগ নষ্ট করেন। বোরহার শট পোস্টে লেগে ফেরে। দিল্লি যে গোলের সুযোগ পায়নি তা নয়। শৌভিক চক্রবর্তী যে সুযোগ নষ্ট করলেন তার জন্য জরিমানা হওয়া উচিত্‌। দিল্লি টিমের হৃদপিন্ড বলা হচ্ছিল যাঁকে সেই ব্রাজিলিয়ান গুস্তাভো ডস সান্তোস গোল নষ্ট করেন। তা সত্ত্বেও দিল্লির এই মিডিও সত্যিই ভাল মানের বিদেশি। তাঁর ড্রিবল আর গতি চোখ টানল। আই লিগের ক্লাবগুলো তাঁর জন্য ঝাঁপাচ্ছে বলে খবর। দু’দলের নিশ্চিত সুযোগ দাঁড়িপাল্লায় তুললে কিন্তু কলকাতার পাল্লা ভারি। ফল হতেই পারত ৪-২। তবে একটা কথা লিখতেই হবে কলকাতা এবং দিল্লির দুই কিপার বেটে এবং ফান হাউট ড্র ম্যাচেও আলো জ্বালালেন। ক্ষিপ্রতা এবং দুর্দান্ত কিছু সেভ করে।

দু’টো টিমের প্রথম এগারো বাছা এবং স্ট্র্যাটেজিতে একটা জিনিস পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল-- তা হল, বিপক্ষের সেরা অস্ত্র-কে থামিয়ে দিয়ে যা করার করো। সেজন্যই ফিকরুর পিছনে যেমন দিল্লি কোচ লাগালেন শৌভিক চক্রবর্তীকে। তেমনই দিল্লির সান্তোসকে পালা করে ধরা শুরু করলেন মাসি আর নাতো। তার মধ্যেও খেলাটা উপভোগ্য হল। কারণ দু’টো দলই নিজের মতো করে জিততে চাইছিল। বেশ কিছু ভাল আক্রমণ হল। দিল্লির তাগিদটা ছিল বেশি। কারণ এই ম্যাচটা তাদের কাছে ছিল ডু অর ডাই। না জেতায় শেষ চারের দৌড় থেকে অনেকটাই পিছিয়ে পড়ল তারা। কলকাতা শেষ দিকে অবশ্য ড্র-র দিকে ঝুঁকল। রক্ষণে লক গেট তুলে দিয়ে প্রতিআক্রমণে গেলেন বোরহা-হোফ্রেরা। দিল্লি কোচ হার্ম ফান ভেল্দহোভেন টিমটা সাজিয়েছিলেন অদ্ভুত ফর্মেশনে। ২-৩-২-৩। যেটা মাঝে মধ্যে বদলে যাচ্ছিল ৪-৪-২ ছকে। আর হাবাসের পাল্টা ছিল ৪-২-৩-১। ফিকরুদের শারীরিক সক্ষমতার সঙ্গে পাল্লা দিতে মাটিতে বল রেখে খেলার স্ট্র্যাটেজি আঁকড়ে ধরেছিলেন দিল্লি কোচ। হাবাসও লং বল ফর্মুলা ছেড়ে মাটিতে নেমে এলেন।

দিল্লিতে এ বার শীত পড়েও এখন উধাও। তা সত্ত্বেও মাঠে এসেছিলেন প্রায় হাজার কুড়ি দর্শক। তাঁদের মধ্যে প্রচুর মহিলাও। ক্রিকেট ছাড়া যা সাধারণত রাজধানীর মাঠে কম দেখা যায়। দেখা গেল ম্যাঞ্চেস্টার-বার্সা নিয়ে ডাইনিং টেবলে তর্কের তুফান তোলা কিছু বহু তাজা মুখ। দিল্লির জন্য যাঁরা গলা ফাটালেন। নিজের শহরের জন্য চিত্‌কার হোক গ্যালারিতেআইএসএলের সংগঠকরা এটাই চাইছেন। দেখা যাচ্ছে সেদিকেই অভিমুখ ঘুরছে দর্শকদের। কিন্তু তাদের বুড়ো মার্কি ফুটবলার এনে বাজার ধরার পরিকল্পনা হয়তো পরের বার বদলাতে হবে। সবথেকে দামি মার্কি তো এদিনও মাঠে নামার সুযোগ পেলেন না। ‘ইতালিয়ান ডার্লিং’-এর খেলা দেখার সুযোগ হল না দর্শকদের। লুই গার্সিয়ার মতো দেল পিয়েরোও ওয়ার্ম আপ করছিলেন। তা দেখে হইহই-ও হল গ্যালারিতে। কিন্তু বিশ্বকাপজয়ী স্ট্রাইকার খোঁড়াচ্ছেন দেখে তাঁর দিকে তাকালেনই না দিল্লি কোচ। খেলা শেষ হওয়ার দু’মিনিট আগে দলের তিন নম্বর পরিবর্তনটাও হচ্ছে দেখে ওয়ার্ম আপ জোন থেকেই ড্রেসিংরুমে চলে গেলেন ইতালিকে বিশ্বকাপ দেওয়া ফুটবলার।

দেল পিয়েরো ওরকম করলেন কেন? সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে দিল্লির বেলজিয়ান কোচ মাছি তাড়ানোর ভঙ্গীতে বললেন, “ও কী করছিল দেখিনি। দেখার সময়ও ছিল না।”

দেল পিয়েরো কি তা হলে এখন শো পিস হওয়ার যোগ্যও নন?

আটলেটিকো: বেটে, কিংশুক, অর্ণব, হোসেমি, বিশ্বজিত্‌ (মোহনরাজ), মাসি, নাতো, পদানি (হোফ্রে), বলজিত্‌ (রফি), বোরহা, ফিকরু।

প্রথম ছয়

১) চেন্নাইয়ান এফসি (ম্যাচ ১২, জয় ৬, ড্র ৪, হার ২, গোল পার্থক্য+৬, পয়েন্ট ২২)

২) এফসি গোয়া (ম্যাচ ১২, জয় ৫, ড্র ৩, হার ৪, গোল পার্থক্য +৭, পয়েন্ট ১৮)

৩) আটলেটিকো দে কলকাতা (ম্যাচ ১২, জয় ৪, ড্র ৬, হার ২, গোল পার্থক্য +৪, পয়েন্ট ১৮)

৪) কেরল ব্লাস্টার্স (ম্যাচ ১২, জয় ৪, ড্র ৩, হার ৫, গোল পার্থক্য -৩, পয়েন্ট ১৫)

৫) দিল্লি ডায়ানামোস এফসি (ম্যাচ ১২, জয় ৩, ড্র ৫, হার ৪, গোল পার্থক্য +১, পয়েন্ট ১৪)

৬) নর্থইস্ট ইউনাইটেড (ম্যাচ-১২, জয় ৩, ড্র ৪, হার ৫, গোল পার্থক্য -২, পয়েন্ট ১৩)

আটলেটিকো দে কলকাতার বাকি ম্যাচ: বনাম মুম্বই সিটি এফসি (৭ ডিসেম্বর), বনাম এফসি গোয়া (১০ ডিসেম্বর)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE