Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দিল্লিতে হুমকি বা আক্রমণ নতুন নয়

অমিত ভাণ্ডারীর ওপর আক্রমণটা আমাকে বড় একটা ধাক্কা দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু আমি বিশেষ অবাক নই। কারণ, দিল্লি এমন একটা জায়গা যেখানে সব কিছুই সম্ভব!

অমিতের (ডান দিকে) হামলাকারীর শাস্তি চান বীরু। টুইটার

অমিতের (ডান দিকে) হামলাকারীর শাস্তি চান বীরু। টুইটার

অশোক মলহোত্র
শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:২৮
Share: Save:

অমিত ভাণ্ডারীর ওপর আক্রমণটা আমাকে বড় একটা ধাক্কা দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু আমি বিশেষ অবাক নই। কারণ, দিল্লি এমন একটা জায়গা যেখানে সব কিছুই সম্ভব!

আজ ভাণ্ডারীর ওপর আক্রমণটা গোটা দেশে হয়তো তোলপাড় ফেলেছে, কিন্তু নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানি, দিল্লিতে ক্রিকেটকে ঘিরে কত রকম দুষ্কর্ম চলে। এটা মোটেই প্রথম ঘটনা নয়।

দিল্লিতে নিয়মিত নির্বাচকদের ওপর নানা ভাবে চাপ সৃষ্টি করা হয়। রাজধানী হল খুব ক্ষমতাবান লোকেদের জায়গা। মন্ত্রী-সান্ত্রী, রাজা-গজা আর কত সব ক্ষমতাবান লোকেরা আছে। দিল্লিতে যেমন লোকের ক্ষমতাও আছে, আবার প্রচুর অর্থও আছে। ওখানে কথায় কথায় হুমকি দেওয়া হয় নির্বাচকদের। তাদের প্রভাবিত করার নানা রকম চেষ্টাও চলে।

আমি যখন রাজ্য এবং জাতীয় স্তরের নির্বাচক ছিলাম, তখন দিল্লির নির্বাচকদের কাছ থেকে এ রকম অনেক ঘটনার কথা শুনেছি। কোথাও স্টাম্প তুলে মারার হুমকি দেওয়া হয়েছে, কোথাও ফোন করে হুমকি দেওয়া হয়েছে, গালাগাল দেওয়া হয়েছে। কোথাও আবার কলার ধরা হয়েছে নির্বাচকদের। দিল্লিতে এ সব নিয়মিত ঘটেছে। নানা ভাবে আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে নির্বাচকদের। তবে হকি স্টিক দিয়ে মারার ঘটনা আগে ঘটেনি।

ব্যক্তিগত ভাবে আমার সঙ্গে এ রকম কিছু কোনও দিন হয়নি। জাতীয় নির্বাচক থাকার সময় নয়, বাংলার নির্বাচক থাকার সময়ও নয়। বাংলা এমনিতে খুব শান্ত জায়গা। এখানে এ সব হয় না। তবে আমি একবার বিহার থেকে নির্বাচক মনোনীত হয়েছিলাম। তখন কিছু চিৎকার-চেঁচামেচির মুখে পড়তে হয়েছিল। একটা ঘটনা মনে পড়ছে। একটা ছেলেকে অনূর্ধ্ব ২৩ দল থেকে বাদ দিয়েছিলাম একবার। সে এসে খুব হম্বিতম্বি করছিল। আমি ওকে বলি, ‘তোর বয়স কত’? ছেলেটা বলে বসল, কেন ২৫। আমি হাসতে হাসতে বলি, তা হলে চিৎকার করছিস কেন, এটা তো অনূর্ধ্ব ২৩ দল বাছা হয়েছে।

দিল্লি ক্রিকেটের সঙ্গে আমার ভাল মতো পরিচয় থাকলেও ভাণ্ডারীকে আমি সে ভাবে চিনি না। আমি যখন নির্বাচক ছিলাম, তখন ভারতের হয়ে কয়েকটা ওয়ান ডে খেলেছিল। দিল্লির হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত খেলেছে। ওর আর ওই অভিযুক্ত ক্রিকেটারের মধ্যে কী সমস্যা হয়েছিল, আমি এখানে বসে ঠিক বলতে পারব না। ভিতরে ভিতরে কোনও কিছু ঘটেছিল কি না, কেন রেগে গিয়েছিল ছেলেটা, এ সব জানা এখানে বসে সম্ভব নয়। দিল্লিতে ক্রিকেট নির্বাচন সম্পর্কে শোনা নানা কাহিনি থেকে বলতে পারি, অনেক কিছুই ঘটে থাকতে পারে। তবে এটা বলব, এ রকম ক্ষমাহীন ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। এক জন ক্রিকেটার কী করে নির্বাচকের গায়ে হাত তুলতে পারে? তা-ও আবার দলবল নিয়ে!

সোমবারের এই ঘটনা অবশ্যই ভারতীয় ক্রিকেটের কলঙ্কজনক দিন হয়ে থাকল। এ রকম চলতে দিলে তো ক্রিকেটটা দুষ্কৃতীদের হাতে চলে যাবে। যে ছেলেটা এ রকম কাণ্ড ঘটাল, তাকে ক্রিকেটার কম, দুষ্কৃতীই বেশি বলে মনে হচ্ছে। ক্রিকেট খেলার যোগ্যই নয়। এ বার হকি স্টিক দিয়ে মারা হয়েছে, এর পরে হয়তো নির্বাচকদের দিকে পিস্তল তোলা হবে, বোমাবাজির হুমকি দেওয়া হবে। এ রকম পরিস্থিতিতে কোনও নির্বাচকের পক্ষে কাজ করা কী করে সম্ভব? দিল্লি এমনিতেই যে কোনও নির্বাচকের পক্ষে খুব কঠিন জায়গা। তার ওপর এ রকম ঘটতে থাকলে তো একটা আতঙ্ক ছড়িয়ে যাবে।

এই ঘটনার রেশ যাতে আতঙ্ক সৃষ্টি না করতে পারে, তার জন্য প্রথমেই ওই ছেলেটিকে ক্রিকেট থেকে আজীবন নির্বাসন দেওয়া হোক। তার পরে পুলিশ যা করার করুক। কিন্তু দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতেই হবে। না হলে ক্রিকেটের গা থেকে এই কলঙ্ক মোছা যাবে না।

গা জোয়ারির এই নতুন প্রক্রিয়াকেও থামানো যাবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket Violence DDCA Amit Bhandari
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE