Advertisement
E-Paper

গরমই আজ ওডাফাকে আটকাতে বাগানের বাড়তি ডিফেন্ডার

বারাসত স্টেডিয়ামের ভেতরের তাপমাত্রা শনিবার বিকেলে কত উঠতে পারে? আলিপুরের হাওয়া অফিসের ইঙ্গিত— ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস টপকে যেতে পারে। আপেক্ষিক আদ্রর্তা পেরোতে পারে ৯২ শতাংশ। তীব্র দাবদাহে রাজ্য জুড়ে হাঁসফাঁস। এই অবস্থায় মোহনবাগান কর্তা, সমর্থক, পিয়ের বোয়ার মতো সবুজ-মেরুনের বিদেশি ফুটবলার চাইছেন, অন্তত আজ বিকেলে ম্যাচের নব্বই মিনিট তাপমান পঞ্চাশ পেরিয়ে যাক!

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৫ ০৩:৪৪

বারাসত স্টেডিয়ামের ভেতরের তাপমাত্রা শনিবার বিকেলে কত উঠতে পারে?

আলিপুরের হাওয়া অফিসের ইঙ্গিত— ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস টপকে যেতে পারে। আপেক্ষিক আদ্রর্তা পেরোতে পারে ৯২ শতাংশ।

তীব্র দাবদাহে রাজ্য জুড়ে হাঁসফাঁস। এই অবস্থায় মোহনবাগান কর্তা, সমর্থক, পিয়ের বোয়ার মতো সবুজ-মেরুনের বিদেশি ফুটবলার চাইছেন, অন্তত আজ বিকেলে ম্যাচের নব্বই মিনিট তাপমান পঞ্চাশ পেরিয়ে যাক!

বাংলার সবাই যখন শান্তির বৃষ্টির প্রার্থনায় তখন কেন একেবারে উল্টো পথে বাগান?

কারণ একটাই। ওডাফা ওকোলি।

ফিনিক্স পাখির মতো হঠাৎ-ই জেগে উঠেছেন স্পোর্টিং ক্লুব স্ট্রাইকার। তাঁর অপ্রত্যাশিত গোল, অসাধারণ ফর্ম রীতিমতো কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছে আই লিগের ক্লাবগুলোর। যার সাম্প্রতিক ভুক্তোভোগী ওডাফার ‘প্রিয়’ পুরনো ক্লাব। মারগাওতে ওডাফার জোড়া গোলে লিগে মহাবিপজ্জনক হারের পর বাগানে তিনি এখন মূর্তিমান বিভীষিকা। দু’দিন আগে শহরে এলেও পুরনো ক্লাবমুখো হননি ওডাফা। যেমন সদ্য গিয়েছিলেন ওয়াহিংডোর প্রাক্তন বাগান কোচ কাশ্যপ। তবু শুক্রবার বাগানে সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ওডাফা-ই।

গরম বাড়লে আটত্রিশের ‘বৃদ্ধ’ নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার আরও ক্লান্তিতে কাহিল হয়ে পড়বেন, এই আশা বুকে নিয়ে শনিবার জয়ের প্রত্যাশায় মাঠ ভরাবেন সবুজ-মেরুন সমর্থকরা। কিন্তু তাঁরা ‘প্রাণ খোলা গান’ গাইতে গাইতে রাতে বাড়ি ফিরবেন কি না তা সময় বলবে।

স্পোর্টিং ক্লুব আবার কীসের অপেক্ষায় থাকবে তা এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বলে গেলেন তাদের বিশ্বকাপার স্ট্রাইকার অ্যান্টনি উলফ। ‘‘ওদের ডিফেন্স কখন ঘুমিয়ে পড়বে তার অপেক্ষায় থাকব আমরা। গোয়ায় ওই সুযোগটাই তো কাজে লাগিয়েছিল ওডাফা। এ বার তো আমিও এসে পড়েছি,’’ বলছিলেন কার্ড-সমস্যা মুক্ত উলফ।

সনি নর্ডি বনাম ওডাফা।

উলফ বনাম বোয়া।

বলবন্ত বনাম ভিক্টোরিনো।

এবং সঞ্জয় সেন বনাম ক্লিফোর্ড চুকুয়ামা।

অসংখ্য দেখানোর এবং দেখিয়ে দেওয়ার লড়াই আজ আই লিগের মহাগুরুত্বপূর্ণ রণে।

কিন্তু চৌম্বকে যেটা দাঁড়াচ্ছে তা হল, দুই বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে বাংলা আর গোয়ার দুই ক্লাব।

তেরো বছর পর জাতীয় লিগ খেতাবের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মোহনবাগানের কাছে এটা সেমিফাইনাল। জিতলে আত্মবিশ্বাসী হয়ে বেঙ্গালুরুতে গিয়ে আকাঙ্খিত ‘পূর্ণিমার চাঁদ’ আনার রাস্তা সহজ হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে ৩১ মে-র ম্যাচ ড্র করলেই কেল্লা ফতে। পাঁচ বছর সম্পূর্ণ ট্রফিহীন ক্লাবে আলো ফিরবে। আর আজ হারলে বা ড্র করলে? ফের প্রবলতম চাপে পড়ে যাওয়া। ফের অন্ধকার গলিতে ঢুকে পথ হাতড়ানো। তবে পয়েন্ট নষ্ট করলেও সনিরা অক্সিজেন পেয়ে যেতে পারেন যদি আজই মারগাওতে বেঙ্গালুরু-ডেম্পো ম্যাচে সুনীল ছেত্রীরাও পয়েন্ট নষ্ট করে বসেন।

বাগানের একেবারে উল্টো মেরুতে দাঁড়িয়ে স্পোর্টিং ক্লুব! বাগানকে হারাতে পারলেই অবনমন বাঁচিয়ে ফেলবেন ওডাফারা। অলিখিত কোচ চুকুয়ামার মতে যা, ‘ডু অর ডাই’। ‘‘এই স্লোগান তুলে আমরা নামব। এই ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট পেলেই তো অবনমন থেকে বাঁচা নিশ্চিত’’ বলছিলেন এ দিন বারাসত থেকে সন্ধেয় প্র্যাকটিস ফেরত ওডাফাদের কোচ।

যার ঘণ্টা আটেক আগে আবার বাগান তাঁবু ছাড়তে ছাড়তে টিমের অন্যতম স্টপার বেলো রজ্জাকের আত্মবিশ্বাসী মন্তব্য ‘‘ওডাফা কিন্তু এ বার পারবে না। আগের ম্যাচের ভুল আর হবে না। আগে আটকেছি, এ বারও আটকাব।’’ কিন্তু তিনি, কিংশুক, প্রীতমরা কি পারবেন বিপক্ষের গোলমেশিনকে আটকাতে? প্রশ্ন শুনে প্রায় খেপে উঠছেন বাগানের অঘোষিত মেন্টর বোয়া। ‘‘এটা আমাদের বদলা নেওয়ার ম্যাচ। টুর্নামেন্টের কার্যত সেমিফাইনাল। সবাই সেটা জানি। জান লড়িয়ে দেব।’’ গরমে হাঁসফাঁস করতে করতেই বলে চললেন সঞ্জয়ের দলের ক্যামেরুন স্ট্রাইকার। মনে হল গরমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলা বোয়া-ও এখানে ম্যাচের তিরিশ ঘণ্টা আগেই কাহিল।

ওডাফাকে আটকানোর জন্য কী করছেন বাগান কোচ?

শুক্রবার সকালের অনুশীলনে সঞ্জয় সেন সেটা অবশ্যই দেখাননি। তবে রাতে আনন্দবাজারকে বলে দিলেন, ‘‘ওর জন্য জোনাল কভারিং থাকবে। ওডাফা তো দৌড়ে কিছু করতে পারবে না। গোলের মুখটা বন্ধ করলেই ও আটকে যাবে।’’ জীবনে প্রথমবার আই লিগ জয়ের সামনে দাঁড়িয়ে বাগানের বঙ্গসন্তান কোচ বেশ শান্ত। ‘‘গোলটা আটকাতে হবে। সেটা পারলেই আমরা ঠিক গোল করে দেব,’’ বোঝাই যায় আজ হোম ম্যাচেও আগে রক্ষণ জমাট করে তবেই আক্রমণের রাস্তায় হাঁটতে চাইছে বাগান। কিন্তু সঞ্জয়ের টিমের রক্ষণ নিয়েই তো সমস্যা রয়েছে।

সেন্ট্রাল মিডিও ডেনসন চোট পেয়ে মরসুমেই আর নেই। চোট রয়েছে ধনচন্দ্র, সুখেন—দুই লেফটব্যাকেরই। ফলে একেবারে নতুন ফর্মেশন—কিংশুক, আনোয়ার, বেলো, প্রীতমকে নিয়ে নামতে হতে পারে। তাতে সনিদের কোচ অবশ্য কাঁপছেন না। বলে দিলেন, ‘‘চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে সব পরিস্থিতির সঙ্গে মানাতে হবে।’’

সনি আর কাতসুমিকে পরের মরসুমে বাগানে ফের সই করানোর জন্য তাঁদের এজেন্টরা নাকি শহরে এসে গিয়েছেন। কিন্তু লিগ নিয়ে এতটাই ফোকাসড দু’জনেই যে এখন এ সব নিয়ে কথাই বলতে রাজি হচ্ছেন না। যা দেখে অবাক কর্তারা। যেমন তাঁরা চমকে গিয়েছেন নির্বাচনে সচিব পদে হেরে যাওয়ার পরেও বলরাম চৌধুরীকে মাঠে এসে আগের ম্যাচের গোলদাতাদের প্রতিশ্রুতি মতো টাকা তুলে দিতে দেখে।

মাঠের বাইরেও ধুন্ধুমার যুদ্ধের সব রসদ মজুত। চলছে নানা অঙ্ক কষা। কিন্তু সব কিছুই যে ওলট-পালট করে দিচ্ছে গরম। ম্যানেজার্স মিটিংয়ে জানিয়ে দেওয়া হল, প্রয়োজনে চার বার জল-বিরতি দেওয়া হবে আজ মাঠে। দেখেশুনে মনে হচ্ছে ওডাফা, সনিরা নন, ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হতে চলেছে বারাসত স্টেডিয়ামের তেতে থাকা অ্যাস্ট্রোটার্ফ-ই।

ratan chakraborty odafa odafa fear factor mohunbagan ileague 2015 mohunbagan i league champion sony norde vs odafa
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy