Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বল-বিকৃতি হচ্ছে? প্রশ্ন ওয়ার্নের

ঘটনাটি প্রথম তুলে ধরে ম্যাচের সম্প্রচার করতে থাকা চ্যানেল নাইন। তখন ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন শেন ওয়ার্ন। ‘‘জানি না, এ ভাবে বলের উপর নখ ব্যবহার করার এক্তিয়ার কারও আছে কি না।

নজরে: বলের আকৃতি দেখতে ইংল্যান্ড অধিনায়ক জো রুট-এর থেকে বল চাইছেন আম্পায়ার। ছবি: রয়টার্স।

নজরে: বলের আকৃতি দেখতে ইংল্যান্ড অধিনায়ক জো রুট-এর থেকে বল চাইছেন আম্পায়ার। ছবি: রয়টার্স।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:০০
Share: Save:

অ্যালেস্টেয়ার কুকের মহাকাব্যিক ইনিংসের মধ্যেই অ্যাশেজে একটি দৃশ্য নিয়ে উত্তাল ক্রিকেট। অস্ট্রেলিয়ার টিভি নেটওয়ার্ক চ্যানেল নাইনের সরাসরি সম্প্রচারে দেখা গিয়েছে, জেমস অ্যান্ডারসন নখ দিয়ে বল খুটছেন। প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারেরা অনেকে চ্যানেল নাইনে ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন। তাঁরা এই ঘটনাকে তুলে ধরে বল-বিকৃতির মতো বেআইনি কিছু ঘটছে কি না, সেই প্রশ্ন তুলতে থাকেন।

ঘটনাটি প্রথম তুলে ধরে ম্যাচের সম্প্রচার করতে থাকা চ্যানেল নাইন। তখন ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন শেন ওয়ার্ন। ‘‘জানি না, এ ভাবে বলের উপর নখ ব্যবহার করার এক্তিয়ার কারও আছে কি না। এটা নিয়ে কিন্তু কথা উঠতে বাধ্য,’’ সরাসরি সম্প্রচারেই ধারাভাষ্য দিতে গিয়ে বলেন ওয়ার্ন। তার পরেই দাবানলের মতো বিতর্কের আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

কমেন্ট্রিতে তখন ওয়ার্নের সতীর্থ আর এক প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার মাইকেল স্লেটার। প্রাক্তন ব্যাটসম্যান বলতে থাকেন, ‘‘এটা খুবই আকর্ষণীয় একটা ঘটনা ঘটছে মনে হচ্ছে। কিছুতেই নখ ব্যবহার করা যায় না বলের উপর।’’ চ্যানেল নাইন মানে অস্ট্রেলিয়ার চ্যানেল। পাল্টা দাবি উঠছে যে, ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারকে নিয়ে বিতর্কের ছোঁয়া দেখে অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তনরা আরও কোমর বেঁধে ঘটনার বিশ্লেষণ শুরু করেন। আর এক প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় তারকা মাইক হাসি বলতে থাকেন, দিনের খেলা শেষে অ্যান্ডারসন-কে হয়তো ম্যাচ রেফারি রঞ্জন মদুগলে নখ দিয়ে বল খোটার ব্যাখ্যা দিতে ডাকতে পারেন। যদিও পরে আইসিসি-র এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, এ নিয়ে কোনও পদক্ষেপই করা হচ্ছে না।

ইংল্যান্ড শিবির থেকে যদিও এমন প্রচারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। সেই প্রতিবাদের জেরে অস্ট্রেলিয়ার কয়েকটি সংবাদমাধ্যম তাদের শিরোনাম থেকে ‘বল-বিকৃতি’ শব্দটিও প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়েছে। ইংল্যান্ডের কোচ ট্রেভর বেলিস পরে বলে যান যে, ‘‘ফুটেজ দেখলেই পরিষ্কার বোঝা যাবে, অ্যান্ডারসনের নখ ছিল বলের চকচকে পালিশ থাকা দিকটায়। বোঝাই যাচ্ছে, নতুন একটা কাহিনি ফাঁদা হয়েছে।’’ ক্রিকেটে প্রচলিত ব্যাখ্যা হচ্ছে, বল-বিকৃতি করা হয় রিভার্স সুইং করানোর জন্য। এবং, রিভার্স সুইংয়ের ব্যাকরণই হচ্ছে, বলের একটা দিকে পালিশ তুলে দিতে হবে, একটা দিক চকচকে রাখতে হবে। সাধারণত, নখ দিয়ে বল খোটা হয় পালিশ তোলার জন্য। তাই ইংল্যান্ড শিবিরের যুক্তি, যদি অ্যান্ডারসন বল-বিকৃতিই করাতে যেতেন, তিনি পালিশওয়ালা দিকটা নয়, খটখটে দিকটায় নখ ব্যবহার করতেন। যে যুক্তি একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো নয়।

বেলিস বলেছেন, ‘‘বৃষ্টিতে যখন খেলা বন্ধ ছিল, তখনই আমি আম্পায়ারদের কাছে গিয়ে জানতে চাই, ব্যাপারটা কী? ওঁরা আমাকে বলেন, তেমন কিছুই নয়। বাড়াবাড়ি করা হয়েছে। সবাই জানে, বলে মাটি লাগলে নখ ব্যবহার করে সেটা পরিষ্কার করাই যায়। সেটা আইনসিদ্ধ। আমরা ঠিক সেটাই করছিলাম। যদি প্রতারণাই করতাম, তা হলে এতটা বুদ্ধুর মতো পালিশের দিকটায় আঁচড়াতাম না।’’ সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘‘কুক দারুণ ব্যাট করেছে। আমাদের দু’টো ভাল দিন গিয়েছে। অস্ট্রেলীয় মিডিয়াকে অনেক ইতিবাচক কিছু লিখতে হল। তাই বোধ হয় আবার এ সব নিয়ে টানাটানি করতে হল। আমরা তৈরিই ছিলাম। এখানে আসা থেকেই জানতাম, লড়াইটা ২.৪ কোটি বনাম ১১ ক্রিকেটারের।’’

আইসিসি থেকে জানানো হয়েছে, আম্পায়ার বা ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডারসনের ঘটনা নিয়ে কোনও রিপোর্ট দেননি। তবে দু’দলকেই সতর্ক করা হয়েছে, বলের পরিচর্যা নিয়ে। দ্রুত রিভার্স সুইং পাওয়ার লক্ষে অনেক সময় ফিল্ডাররা ইচ্ছা করে বাউন্স করিয়ে আউটফিল্ড থেকে বল ছোড়েন উইকেটকিপার বা বোলারের কাছে। যাতে মাঠের অসমান জায়গায় পড়ে তাড়াতাড়ি বলের পালিশ উঠে যায়। এই প্রক্রিয়া নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে দু’দলকেই।

মামলা অবশ্য এখানেই থামেনি। সোশ্যাল মিডিয়াতে ঝড় উঠেছে কারণ মিচেল জনসন অভিযোগ করেছেন, ইংল্যান্ডের বোলাররা অন্যায় পথ অনুসরণ করে খুব তাড়াতাড়ি রিভার্স সুইং করাতে পেরেছে। তা নিয়ে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ভক্তরা আবার প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় ফাস্ট বোলারকে পাল্টা আক্রমণ করেন।

জনসন লেখেন, ‘বলটা মাটিতে ছুড়ে কেউ পাঠাতে পারে। তা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। কিন্তু বল-বিকৃতি করাটাও কি ঠিক আছে? না হলে কী করে এত তাড়াতাড়ি বল রিভার্স করছে?’ এর পরেই এক ক্রিকেট ভক্তকে উত্তর জিতে গিয়ে জনসন লেখেন, ‘আমি নিজে কখনও বল-বিকৃতি করিনি। পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন।’

অস্ট্রেলিয়ায় এসে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ফ্যাফ দুপ্লেসি মুখের মধ্যে থাকা জেলি বলে লাগিয়ে বিৃকৃতি ঘটানোর জন্য শাস্তি পেয়েছিলেন। এ বারে বেলিসের কথা অনুযায়ী, আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা নাকি বলে দিয়েছেন, বল-বিকৃতির ঘটনা ঘটেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket Joe Root Ball Tampering Ashes Series
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE