Advertisement
E-Paper

তথ‍্য গোপনের অভিযোগে সহযোগীকে ফেরত পাঠাল ভারত, খেলতে এসে বিপাকে বাংলাদেশের ৮০ বছরের দাবাড়ু

বিমানবন্দর থেকে দেশে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে রানি হামিদের সঙ্গী আশিয়া সুলতানাকে। বাংলাদেশের দাবাড়ুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, শেষ বার মেডিক্যাল ভিসা নিয়ে ভারতে এসে কলকাতায় প্রতিযোগিতা খেলেন।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২৫ ১৯:২৯
Picture of Rani Hamid

রানি হামিদ। ছবি: এক্স (টুইটার)।

বয়স ৮০। এখনও দাপিয়ে দাবা খেলে চলেছেন সৈয়দা জসিমুন্নেসা খাতুন। তিনি অবশ্য পরিচিত রানি হামিদ নামে। বাংলাদেশের প্রথম মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টার ভারতে প্রতিযোগিতা খেলতে এসে খানিকটা বিপাকে পড়েছেন। তথ্য গোপনের অভিযোগে বিমানবন্দর থেকেই দেশে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁর সঙ্গী এবং সতীর্থকে।

দিল্লি ইন্টারন্যাশনাল ওপেন গ্র্যান্ডমাস্টার দাবা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে ভারতে এসেছেন হামিদ। আসার সময় সঙ্গে ছিলেন তাঁর সহকারী এবং সতীর্থ আশিয়া সুলতানা। ৩৭ বছরের আশিয়া বহু প্রতিযোগিতাতেই ৮০ বছরের দাবাড়ুর সঙ্গী হন। তাঁরা এক সঙ্গে অনুশীলন করেন। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। তা ছাড়া প্রবীণা দাবাড়ুর খেয়ালও রাখেন আশিয়া। বাংলাদেশ থেকে তাঁরা দিল্লির বিমানে ওঠেন নির্বিঘ্নে। কিন্তু বিপত্তি হয় দিল্লি বিমানবন্দরে। হামিদকে ভারতে প্রবেশ করতে দেওয়া হলেও আশিয়াকে এ দেশে ঢুকতে দিতে রাজি হননি দিল্লি বিমানবন্দরে দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট আধিকারিকেরা। তাঁকে বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশে ফিরে যেতে বলা হয়। কারণ ভারতের ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসের (এফআরআরও) কালো তালিকায় রয়েছে আশিয়ার নাম। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, শেষ বার তিনি ভারতে এসেছিলেন মেডিক্যাল ভিসা নিয়ে। কিন্তু কোনও চিকিৎসা করাননি। কলকাতায় একটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ফিরে যান। অসত্য তথ্য দিয়ে ভারতের আসার অভিযোগে কালো তালিকাভুক্ত হয়েছেন আশিয়া। বাংলাদেশের দাবাড়ুকে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়, সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তিনি ভারতে ঢুকতে পারবেন না। সারারাত দিল্লি বিমানবন্দরেই থাকতে হয় আশিয়াকে। হাতে পাননি ব্যাগও। সব কিছু নিজেদের হেফাজতে রেখে দেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। পরের দিন তাঁকে ঢাকাগামী বিমানে ফেরত পাঠানো হয় বাংলাদেশে।

সতীর্থ এবং সহযোগীকে ফিরে যেতে হওয়ায় মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হামিদ। খেলায় এই ঘটনার প্রভাব পড়ছে বলে জানিয়েছেন ৮০ বছরের দাবাড়ু। সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমকে হামিদ বলেছেন, ‘‘খুব খারাপ লাগছে। আমার মন ভাল নেই। আমার সঙ্গে যিনি এসেছিলেন, তাঁকে ভারতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তাঁকে সারারাত বিমানবন্দরের অভিবাসন কেন্দ্রে বসিয়ে রাখা হয়। ব্যাগগুলোও দেওয়া হয়নি ওকে। পরের দিন ওকে দ্বিগুণ দামে ফেরার টিকিট কিনতে বাধ্য করা হয় এবং বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। এই ঘটনায় আমি মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত। খেলায় মন দিতেই পারছি না।’’

বয়সের কারণে একা বিদেশে খেলতে যেতে ভরসা পান না হামিদ। গত কয়েক বছর ধরেই কাউকে সঙ্গে নেন তিনি। অনেক সময় তাঁর সঙ্গী হন আশিয়া। এ বার ভারতে একা হয়ে যাওয়ায় কিছুটা উদ্বেগে রয়েছেন। হামিদ বলেছেন, ‘‘কখনও একা সফর করি না। সব সময় সঙ্গে কেউ না কেউ থাকে। যেমন এ বার আশিয়া সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু ওকে দেশে ফিরে যেতে হওয়ায় আমি একা হয়ে গিয়েছি।’’ কেন এমন হল বুঝতে পারছেন না ৮০ বছরের দাবাড়ু। তিনি বলেছেন, ‘‘ওর পাসপোর্টে কোনও সমস্যা ছিল না। প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্রও ছিল। অভিবাসন আধিকরিকেরা জানান, মেডিক্যাল ভিসা নিয়ে আগের প্রতিযোগিতা খেলে যাওয়ায় কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে ওকে। এমন কিছু হতে পারে উনি জানতেনই না। জানানো হয়নি আগে। তা হলে ভারতে আসতেনই না। বাংলাদেশের দাবা সংস্থাকে বিষয়টি তখনই জানানো উচিত ছিল ভারতীয় কর্তৃপক্ষের।’’

হামিদ নিজেও কথা বলেছিলেন বিমানবন্দরের অভিবাসন আধিকারিকদের সঙ্গে। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি নিজেও কথা বলি। বলেছিলাম, নিয়ম ভেঙে থাকলে যা জরিমানা হয় করুন। ওকে অন্তত সাত দিনের প্রতিযোগিতাটা খেলতে দেওয়া হোক। আশিয়া তো অপরাধী নন। এ দেশে অপরাধও কিছু করেননি। না কাউকে খুন করেছেন, না কিছু চুরি করেছেন, না ছিনতাই করেছেন। ওর অপরাধ, এখানে এসে দাবা খেলেছেন।’’

সতীর্থের ঘটনায় বিরক্ত হলেও দিল্লি দাবা সংস্থার ব্যবস্থায় মুগ্ধ হামিদ। তাঁর বয়সের কথা ভেবে বিশেষ ব্যবস্থা করেছেন প্রতিযোগিতার আয়োজকেরা। যে রিসর্টে প্রতিযোগিতা হচ্ছে, সেখানেই তাঁর থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাঁর সুবিধা-অসুবিধার দিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। হামিদ বলেছেন, ‘‘এখানে ভালই আছি। বেশ স্বচ্ছন্দ বোধ করছি। শুধু এ জন্যই খেলছি। আয়োজকদের আতিথেয়তা দুর্দান্ত। আমাদের জন্য টিকিট পাঠিয়েছিলেন তাঁরা। এখানে এসে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছি।’’

এই ঘটনা নিয়ে দিল্লি দাবা সংস্থার সভাপতি ভরত সিংহ চৌহান বলেছেন, ‘‘বিদেশি খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে ভিসা সমস্যা খুব সাধারণ। এ ক্ষেত্রে আমাদের তেমন কিছু করার থাকে না। আশিয়া এআরআরও-র কালো তালিকাভুক্ত হওয়ায় কিছুই করা সম্ভব নয় আমাদের। জানি না উনি কেন আগের বার মেডিক্যাল ভিসা নিয়ে খেলতে এসেছিলেন। নিশ্চই কেউ অভিযোগ জানিয়েছিলেন। সে জন্যই আশিয়াকে এ বার ভারতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বড় প্রতিযোগিতায় এমন সমস্যা নতুন কিছু নয়।’’ আশিয়া তথ্য গোপন করে ভারতে এসে ঠিক করেননি বলেও জানিয়েছেন চৌহান। উল্লেখ্য, ৭ জুন থেকে শুরু হওয়া প্রতিযোগিতা শেষ হবে ১৪ জুন।

Bangladesh chess Visa Policy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy