Advertisement
E-Paper

যেন ব্যালন হারানোর বদলা নিতে নেমেছিল

খেলার শুরুতে রিয়াল সমর্থকদের আনা বিশাল একটা ব্যানার বার বার দেখাচ্ছিল টিভি-তে। তাতে লেখা ছিল, ‘হোয়াইট ক্রিসমাস’। খেলা শেষে রোনাল্ডোদের ম্লান করে ম্যাচটা ৩-০ জিতে বরং মেসিরা চলল আনন্দের বড়দিন যাপন করতে।

সুব্রত ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:০৫
হুঙ্কার: সচরাচর এমন আগ্রাসী উৎসব করতে দেখা যায় না তাঁকে। একে তো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে হারালেন। তার উপর জয় রিয়াল মাদ্রিদের ঘরের মাঠ বের্নাবাউতে। গোল করে বিরল উচ্ছ্বাস মেসির।

হুঙ্কার: সচরাচর এমন আগ্রাসী উৎসব করতে দেখা যায় না তাঁকে। একে তো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে হারালেন। তার উপর জয় রিয়াল মাদ্রিদের ঘরের মাঠ বের্নাবাউতে। গোল করে বিরল উচ্ছ্বাস মেসির।

স্প্যানিশ ফুটবলে দুই মহাশক্তি বার্সেলোনা আর রিয়াল মাদ্রিদের সম্মুখসমরে শিল্প বনাম শক্তির লড়াই দেখতে বসেছিলাম শনিবার বিকেলে। এল ক্লাসিকো-র ম্যাচটা শুরু হওয়ার আগে আমার কেন জানি না মনে হচ্ছিল, ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হয়ে দাঁড়াবে শক্তি আর গতি বনাম শিল্প আর ইচ্ছাশক্তির।

শেষমেশ তা-ই হতে দেখলাম রিয়াল মাদ্রিদের ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বের্নাবাউ-তে। যেখানে রোনাল্ডোদের গতি, শক্তি-কে পর্যুদস্ত করে সিংহের গুহায় ঢুকে সিংহ শিকার করে নিয়ে এল লিওনেল মেসি-রা।

খেলার শুরুতে রিয়াল সমর্থকদের আনা বিশাল একটা ব্যানার বার বার দেখাচ্ছিল টিভি-তে। তাতে লেখা ছিল, ‘হোয়াইট ক্রিসমাস’। খেলা শেষে রোনাল্ডোদের ম্লান করে ম্যাচটা ৩-০ জিতে বরং মেসিরা চলল আনন্দের বড়দিন যাপন করতে।

বার বার কেন ইচ্ছাশক্তির কথা বলছি? তা হলে মনে করুন, চলতি মাসের শুরুতে নিজের পঞ্চম ব্যালন ডি’ওর জেতার পর রোনাল্ডোর সেই বিখ্যাত মন্তব্য। যেখানে রোনাল্ডো বলেছিল, ওর চেয়ে ভাল কোনও ফুটবলার সে খুঁজে পাচ্ছে না। নিজে অল্পস্বল্প ফুটবল খেলেছি বলে জানি, সমসাময়িক দুই বিখ্যাত ফুটবলারের মধ্যে কেউ একজন এ রকম মন্তব্য করলে অন্য জন খুবই তেতে থাকে মাঠে নেমে বদলা নেওয়ার জন্য। মাদ্রিদে এ দিন যেন ঠিক সেই প্রেরণাতেই গোল করে ও করিয়ে লিও মেসি তাঁর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ঘরের মাঠে এসে দেখিয়ে দিল নিজের শ্রেষ্ঠত্ব। এ দিন যেন ব্যালন ডি’ওর-এর বদলা নিতেই এসেছিল মেসি।

এল ক্লাসিকোতে সেই তেতে থাকা মেসি এ দিন জেতার মরিয়া তাগিদকে জুড়ে দিয়েছিল তার দলের দক্ষতার সঙ্গে। আর তার অনুকূল পরিবেশও ছিল। একেই ক্যাটালোনিয়া নিয়ে স্পেনের রাজনৈতিক আবহ উত্তপ্ত। স্বাধীনতার কথা বলতে গিয়ে কয়েক মাস আগেই জেরার পিকে বলেছিল, মাদ্রিদে গেলে তার নাকি মানসিক ভাবে ভাল লাগে না। মেসি ও বার্সেলোনার এই ক্ষোভ, আক্ষেপ, চাপা রাগটাই এ দিন প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকার পরে দ্বিতীয়ার্ধে প্রায় ভষ্ম করে দিল রোনাল্ডোদের।

এ প্রসঙ্গে আমার মহম্মদ হাবিবের কথা মনে পড়ছে। এ দিন সাইড লাইনের ধার থেকে স্লাইড করে (মনে হয়েছে বলটা মাঠ পেরিয়ে গিয়েছিল। যদিও মাঠে রেফারির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত) বলটা নিজের দখলে এনে মেসি যখন ভিদালকে দিয়ে তৃতীয় গোলটা করাল তখন কিন্তু আমার সেই হাবিবদা-র মরিয়া প্রয়াসগুলো মনে পড়ছিল।

জানি না, মেসি-সুয়ারেজের বার্সেলোনার বিরুদ্ধে কেন রিয়াল কোচ জিনেদিন জিদান এই ম্যাচে গ্যারেথ বেল এবং ইস্কো-কে প্রথম দলে রাখেননি। ইস্কোর জায়গায় মাঝমাঠে যে কোভাসিচ খেলল, সে প্রথম থেকেই উইং ধরে আক্রমণ গড়ার বদলে কখনও বুস্কেৎস কখনও বা মেসিকে পালা করে মার্কিং করছিল। খেলা যত এগিয়েছে ততই মেসির গায়ে ও ডাকটিকিটের মতো সেঁটে যাছিল। ফলে উইং দিয়ে আক্রমণ প্রথমার্ধে বেশি শানাতে পারেনি রিয়াল মাদ্রিদ। আর জিদানের এই ম্যান মার্কিং স্ট্র্যাটেজিতেই মাঝমাঠে অনেকটা করে ফাঁকা জায়গা পাচ্ছিল পাওলিনহো ও বুস্কেৎস।

তবুও প্রথম মিনিট পঁচিশেক রোনাল্ডো ও বেঞ্জিমা তাদের গতি ও শক্তি ব্যবহার করে বার্সেলোনা রক্ষণে চাপটা রেখেছিল। যেখান থেকে গোলের সুযোগ পেয়েছিল দু’জনেই। কিন্তু এই ধরনের বড় ম্যাচে যেখানে ‘হাফ চান্স’-কেও কাজে লাগাতে হয়, সেখানে সহজ সুযোগ নষ্ট করে রিয়াল মাদ্রিদ জিতে ফিরবে কী করে? আর এই হতাশা থেকেই বোধহয় রোনাল্ডো দ্বিতীয়ার্ধে খেলাটা থেকে কেমন যেন ফিকে হয়ে গেল।

এ প্রসঙ্গে বার্সেলোনা কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দে-র কথা বলতে হবে। তিনি জানতেন রিয়াল লিগ টেবলে তাঁদের চেয়ে পিছিয়ে ১১ পয়েন্টে। ফলে শুরু থেকেই ওরা আক্রমণে আসবে। তাই শুরুতে আটকে গেলে রোনাল্ডোরা হতোদ্যম হবেই। তখন জয়ের জন্য ঝাঁপাও। এটাই ছিল মেসিদের রণনীতি।

প্রথম গোলটার সময় রিয়ালের সেই হতোদ্যম ছবিই চোখে পড়ল। জর্ডি আলবা-র থেকে নিজেদের মাঝমাঠে বলটা ধরে রাকিতিচ উঠে এল রিয়ালের মাঝমাঠ পর্যন্ত। কেউ ট্যাকলে এল না। তার পরে রাকিতিচ যখন ডানদিকে রবের্তো-কে বলটা বাড়াল তখনও সেখানে কেউ নেই। আর রবের্তোর এক টাচে বাড়ানো বল ধরে সুয়ারেসও যখন এক টাচে দলের প্রথম গোল করছে, তখন রিয়ালের রাইট ব্যাক কার্ভাহাল কোথায়?

জিদান এর পরেও দেখলাম বেল আর মার্কো অ্যাসেনসিওকে নামাতে দেরি করে ফেললেন। সেই সুযোগে রিয়াল বক্সে প্রায় তাণ্ডব শুরু করেছিল মেসি-সুয়ারেসরা। আর সেখান থেকেই গোলমুখী বলে হাত লাগিয়ে পেনাল্টি উপহার দিল কার্ভাহাল। নিজে দেখল লাল কার্ড। আর রিয়ালের দশ জন হয়ে যাওয়া। যেখান থেকে মেসির গোল।

ম্যাচ জেতার পরে বের্নাবাউতে হাজির বার্সেলোনা সমর্থকদের উদ্দেশ্য করে নিজের বুকে চাপড় মেরে আগ্রাসী ভঙ্গিতে জয়ের উৎসব করছিল মেসি। যা ফের প্রমাণ করে দিচ্ছিল, এই ম্যাচটা জিততে ও কতটা মরিয়া ছিল। একই সঙ্গে প্রমাণ হল এই ফুটবল ব্রহ্মাণ্ডে এখনও সেরা মেসি-ই। সে ব্যালন ডি’অর যে-ই জিতুক না কেন!

ছবি: গেটি ইমেজেস।

Lionel Messi El Clasico Football Barcelona
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy