মর্মান্তিক: ভেঙে পড়া হেলিকপ্টার। চলছে উদ্ধারকাজ (বাঁ দিকে)। মেয়ে জিয়ান্নার সঙ্গে কোবি। এপি, ফাইল চিত্র
বাস্কেটবল কোর্টে বিপক্ষকে চূর্ণবিচূর্ণ করে জয় ছিনিয়ে আনার জাদু দেখিয়েই তিনি পরিণত হয়েছিলেন কিংবদন্তিতে। ভারতীয় সময় রবিবার রাতে আকস্মিক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রয়াত হলেন সেই কিংবদন্তি খেলোয়াড় কোবি ব্রায়ান্ট। কুয়াশাচ্ছন্ন পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে ভেঙে পড়ে তাঁর হেলিকপ্টার। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় এই প্রাক্তন মার্কিন বাস্কেটবল খেলোয়াড়ের। তাঁর বয়স হয়েছিল ৪১ বছর।
সংবাদ সংস্থার খবর অনুযায়ী, দুর্ঘটনার সময়ে ব্রায়ান্টের সঙ্গে সেই অভিশপ্ত কপ্টারে ছিলেন তাঁর ১৩ বছরের কন্যা জিয়ান্না। যে ব্রায়ান্টের মতোই বাস্কেটবল খেলোয়াড় হওয়ার দিকে এগোচ্ছিল। এ ছাড়াও ছিলেন চালক-সহ সাত যাত্রী। যাঁর মধ্যে ছিলেন স্থানীয় কলেজের বেসবল কোচ জন আলতোবেলি, তাঁর স্ত্রী কেরি ও কন্যা অ্যালিসা। জিয়ান্না ও অ্যালিসা—দু’জনেই ব্রায়ান্টের অ্যাকাডেমি মাম্বা স্পোর্টস অ্যাকাডেমিতে সতীর্থ ছিল। সেখানেই যাচ্ছিল এই দুই পরিবার। উল্লেখ্য, কোর্টে ক্ষিপ্রতার জন্য ব্রায়ান্টের নাম হয়ে গিয়েছিল ‘ব্ল্যাক মাম্বা’। সেই নামেই এই অ্যাকাডেমি। বিবিসির খবর, এঁরা ছাড়াও কপ্টারটিতে ছিলেন জিয়ান্নার বিদ্যালয়ের বাস্কেটবল কোচ ক্রিস্টিনা মোজেরও। এ ছাড়াও সারা চেস্টার নামে এক অভিভাবক ও তাঁর কন্যা পেটনের নামও জানা গিয়েছে।
দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। তবে প্রাথমিক কারণ হিসেবে উঠে এসেছে খারাপ আবহাওয়ার কথা। আরও জানা গিয়েছে, কুয়াশার মধ্যে লস অ্যাঞ্জেলেস শহরতলির পাহাড়ি এলাকা কালাবাসাস অঞ্চলের খুব নিচু দিয়েই উড়ে যাচ্ছিল কপ্টারটি। সংবাদ সংস্থা লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসকে উদ্ধৃত করে আরও জানিয়েছে, বিমানবন্দরের স্থানীয় পুলিশ কুয়াশার জন্যই কপ্টারটিকে দুপুরে উড়তে বলেছিল। কিন্তু সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে চালক ব্রায়ান্ট, ও বাকিদের নিয়ে উড়ে যান ৮৫ মাইল দূরের নিউবারি পার্কে অবস্থিত মাম্বা স্পোর্টস অ্যাকাডেমির উদ্দেশে। নিচু দিয়ে ওড়ার জন্য সতর্কও করা হয়েছিল কপ্টারটির চালককে। ওড়ার কিছুক্ষণ পরেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কুয়াশায় ঢাকা পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে ভেঙে পড়ে কপ্টারটি। সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়। লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির শেরিফ অ্যালেক্স ভিয়ানুয়েভা জানিয়েছেন, ‘‘চালক-সহ সব যাত্রীই প্রয়াত।’’
আরও পড়ুন: কোহালি থেকে রোনাল্ডো, শোকস্তব্ধ ক্রীড়াবিশ্ব
শেরিফের দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, মার্কিন সময় রবিবার সকাল ৯ টা ৬ মিনিটে স্থানীয় জন ওয়েন বিমানবন্দর থেকে উড়েছিল কপ্টারটি। বিবিসি এই মর্মান্তিক ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শীকে উদ্ধৃত করেছে। গাভিন মাসাক নামে সেই ব্যক্তির কথায়, ‘‘দুর্ঘটনার মুহূর্তে বিস্ফোরণের মতো না হলেও বিকট শব্দ শুনেছিলাম। বাড়ির বাইরে এসে দেখি সামনের পাহাড়ে যেটি আছড়ে পড়েছে। পাহাড়ের ওই জায়গা থেকে তখন ধোঁয়া বেরোচ্ছিল।’’
আরও পড়ুন: জিতেও কোবি প্রয়াণের শোকে আচ্ছন্ন নাদাল
ঘটনার দু’মিনিটের মধ্যেই দুর্ঘটনাস্থলে চলে আসেন দমকলকর্মীরা। কিন্তু তখন কিছুই করার ছিল না। ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে গিয়েছেন উদ্ধারকারী ও ১৮ সদস্যের তদন্তকারী দল। কী ভাবে, কার গাফিলতিতে এই দুর্ঘটনা, তা খতিয়ে দেখছেন তাঁরা। একই সঙ্গে এই দুর্ঘটনা নিয়ে তৈরি হয়েছে রহস্যও। ডট নোসো নামে জনৈক ব্যক্তি ২০১২ সালের ১৪ নভেম্বর টুইট করে জানিয়েছিলেন, ‘‘হেলিকপ্টার ভেঙে পড়েই মৃত্যু ঘটবে কোবির।’’ এ দিন সেই টুইটের সত্যতা নিয়েও সোশ্যাল মিডিয়াতে আলোড়ন পড়েছে।
তদন্তকারী দলের সদস্য জেনিফার হোমেন্ডি বলেছেন, ‘‘চালকের অতীত খতিয়ে দেখছি আমরা। কপ্টারটি যে সংস্থার, তার মালিকের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। কী ভাবে হেলিকপ্টারটি রক্ষণাবেক্ষণ করা হত, তার বিশদ তথ্য নেওয়া হচ্ছে। খোঁজ চলছে ব্ল্যাক বক্সেরও।’’ জানা গিয়েছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত কপ্টারটি ছিল সিকোরস্কি এস-৭৬ মডেলের।
মার্কিন মুলুকের বাস্কেটবল প্রতিযোগিতা এনবিএ-র ইতিহাসে করিম আবদুল-জব্বার, শাকিল ও’নিল, ম্যাজিক জনসন, মাইকেল জর্ডানদের সঙ্গে তারকা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয় কোবি ব্রায়ান্টের নামও! ২০০৮ ও ২০১২ অলিম্পিক্সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে সোনাও জিতেছিলেন কোবি। ১৯৯৬-২০১৬—দু’দশকে লস অ্যাঞ্জেলেস লেকার্সের হয়ে ১,৩৪৬টি এনবিএ ম্যাচে তাঁর অর্জিত পয়েন্টের সংখ্যা ৩৩,৬৪৩। এই প্রতিযোগিতায় তিনি পাঁচ বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি ১৮ বার এনবিএ অলস্টার খেতাব পেয়েছিলেন।
ব্রায়ান্টের বাবা জো ‘জেলিবিন’ ব্রায়ান্টও ছিলেন বাস্কেটবল খেলোয়াড়। অবসরের পরে ২০১৮ সালে স্বল্পদৈর্ঘের অ্যানিমেটেড ফিল্ম ‘ডিয়ার বাস্কেটবল’-এর জন্য অস্কারও পেয়েছিলেন কোবি ব্রায়ান্ট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy