Advertisement
E-Paper

সুপ্রিম কোর্টের ধাক্কায় আবার চাপে বোর্ড

আইসিইউ থেকে জেনারেল বেড। চার দিনের মধ্যে অবস্থার দ্রুত অবনতি এবং ফের আইসিইউ। লোঢা কমিশনের সঙ্গে যুদ্ধে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে ভারতীয় বোর্ডের যা দশা চলছে, তা বোধহয় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা যে কোনও মুমূর্ষুর সঙ্গে তুলনীয়! যার অবস্থা পাল্টাচ্ছে দিন-দিন। একদিন ভাল। পরের দিন খারাপ।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৪৪
বোর্ড সভাপতি অনুরাগ ঠাকুর

বোর্ড সভাপতি অনুরাগ ঠাকুর

লোঢা কমিশনের সঙ্গে যুদ্ধে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে ভারতীয় বোর্ডের যা দশা চলছে, তা বোধহয় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা যে কোনও মুমূর্ষুর সঙ্গে তুলনীয়! যার অবস্থা পাল্টাচ্ছে দিন-দিন। একদিন ভাল। পরের দিন খারাপ।

শুক্রবার যেমন সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর অনুরাগ ঠাকুরের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় বোর্ডের ভবিষ্যৎ ফের প্রবল মেঘাচ্ছন্ন দেখাতে শুরু করল। গত ১৭ অক্টোবর দেশের প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুরের বেঞ্চ যে রায় মুলতুবি রেখেছিল, সেটা এ দিন ঘোষণা হল। পঁচিশ পাতার রায়ে টিএস ঠাকুর সহ তিন বিচারপতির বেঞ্চ পরিষ্কার বলে দিল, যত দিন না রাজ্য ক্রিকেট সংস্থারা লোঢা কমিশনের নির্দেশিত সংস্কার নিঃশর্তে মেনে নিচ্ছে, তত দিন বোর্ড থেকে তারা কোনও অনুদান পাবে না। ম্যাচ আয়োজনের টাকা নয়। একটা টাকাও নয়। সব বন্ধ।

সুপ্রিম কোর্টের রোষানল যে শুধুমাত্র রাজ্য ক্রিকেট সংস্থাদের উপর সীমাবদ্ধ থাকল, তা ভাবার কারণ নেই। অনুরাগ ঠাকুররাও এতে সমান আক্রান্ত হলেন। শুক্রবারের পর বোর্ড আর কোনও আর্থিক লেনদেন নিজের ক্ষমতায় করতে পারবে না। আদালতের নির্দেশ, যাবতীয় ক্ষমতা এ বার থেকে লোঢা কমিশনের। বোর্ড কত টাকা পর্যন্ত নিজে চুক্তি করতে পারবে, তা-ও ঠিক করবে লোঢা কমিশন। তার উপরের অঙ্কের কোনও চুক্তি করতে হলে, সেখানেও কমিশন। তাদের অনুমতি ছাড়া সেই চুক্তি পাশ হবে না। তাদের ঠিক মনে হলে, চুক্তি হবে। নইলে নয়। বোর্ডের সমস্ত অ্যাকাউন্ট এ বার থেকে খতিয়ে দেখবেন কমিশন নিযুক্ত অডিটর।

এক কথায় শুক্রবার থেকে ভারতীয় বোর্ডের আর্থিক-পক্ষাঘাত হয়ে গেল। লোঢা কমিশনের আবেদন মেনে অনুরাগ ঠাকুরদের বোর্ড-মসনদ থেকে হঠানোর মতো চরম সিদ্ধান্ত এখনই নেওয়া হল না ঠিকই। কিন্তু ক্রিকেট প্রশাসনে রক্ত চলাচলের প্রধান শিরাটাই কেটে দেওয়া হল।

যার নাম টাকা।

ঘটনা হল, এটা প্রথম নয়। দিন পনেরো আগে ভারতীয় বোর্ডের দু’টো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে চিঠি পাঠিয়ে লোঢা কমিশন বলে দিয়েছিল, বোর্ডের তরফে কোনও লেনদেনের অনুমতি যেন দেওয়া না হয়। তা নিয়ে প্রবল নাটকও হয়। বোর্ড কর্তারা মিডিয়ার একাংশের কাছে বলে দেন যে, টাকা না পেলে ভারত-নিউজিল্যান্ড সিরিজ করা যাবে না। টেস্ট সিরিজ মাঝপথেই বন্ধ করে দিতে হবে। রঞ্জি ট্রফির ম্যাচও করা যাবে না। কমিশন যার উত্তরে বলে যে, কোথাও তারা ভারত-নিউজিল্যান্ড সিরিজের টাকা বন্ধ করে দিতে বলেনি। বলেছিল, দু’টো নির্দিষ্ট পেমেন্ট বন্ধ করতে।

তখনকার মতো ব্যাপারটা কিছুটা চাপা পড়লেও এ দিন তা আবার আগুন হয়ে ফিরে এসেছে। কারণ, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সময় ঠিক দু’সপ্তাহ। দু’সপ্তাহের মধ্যে রাজ্য ক্রিকেট সংস্থাদের হলফনামা পেশ করে জানাতে হবে যে, লোঢা সংস্কার তারা মানছে। না জানালে, টাকা বন্ধ। বোর্ড প্রেসিডেন্ট অনুরাগ ঠাকুর এবং সচিব অজয় শিরকে— তাঁদের আগামী ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে সেটা লিখিত ভাবে জানাতে হবে আদালতকে। জানাতে হবে, কোন কোন সংস্কার বোর্ড আজ পর্যন্ত কার্যকর করেছে। রাজ্য সংস্থাদের কোন উপায়ে বোর্ড বাধ্য করছে লোঢা সংস্কার মানতে।

তার পর আবার শুনানি ৫ ডিসেম্বর।

ক্রিকেট মহলের কেউ কেউ এই রায় দেখার পর বলতে শুরু করেছেন, এর পর বোর্ডের ‘বিদ্রোহের’ যাবতীয় রাস্তা বন্ধ হয়ে গেল। এটাই শেষ সুযোগ। দু’টো রাস্তা। এক, সংস্কার মেনে নিয়ে পড়ে থাকা সম্মানটুকু বাঁচানো। দুই, এত দিনের ঔদ্ধত্য ধরে রেখে পরবর্তী শুনানির দিন ‘শিরশ্ছেদের’ অপেক্ষা করা। অর্থাৎ অনুরাগ ঠাকুর-সহ শীর্ষ বোর্ড পদাধিকারীদের অপসারণ। যার সম্ভাবনা ওড়ানো যায় না। আদালত তো এ দিন বলে দিয়েছে যে, এই মুহূর্তে কমিশনের সুপারিশ মেনে বোর্ড শীর্ষকর্তাদের হঠানো হচ্ছে না একটাই কারণে। বোর্ড আইনজীবী বলে গিয়েছিলেন রাজ্য সংস্থারা যাতে লোঢা সংস্কার মানে তার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে বোর্ড, তাই। নির্যাস পরিষ্কার। বোর্ড নতুন টালবাহানা করলে অনুরাগ ঠাকুরদের অপসারণ যে ঘটবে না তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।

নয়াদিল্লি থেকে ফোনে এ দিন সন্ধেয় মামলার পিটিশনার আদিত্য বর্মা বলছিলেন, ‘‘বোর্ড এর পরেও না মানলে, বুঝবে। এত দিন ওদের গর্ব ছিল টাকা নিয়ে। আজ তো সুপ্রিম কোর্ট সেই কোষাগারেও তালা ঝুলিয়ে চাবিটা লোঢা কমিশনের হাতে তুলে দিল!’’ আদিত্য মনে করিয়ে দিতে চান, এই যে বোর্ড আগামী জানুয়ারিতে নতুন প্রধান বিচারপতি আসার অপেক্ষায় দিন গুনছে, তাতে লাভ হবে না। বললেন, ‘‘কেউ কোনও দিন শুনেছে প্রধান বিচারপতি পাল্টালে আগের রায়ও পাল্টে যায়? ও সব স্বপ্ন ছেড়ে দেওয়া ভাল।’’

আদিত্য বলছেন। কিন্তু বোর্ড শুনবে? এত দিনের ঔদ্ধত্য ছে়ড়ে তারা মেনে নেবে সংস্কার? এ দিন বোর্ড প্রেসিডেন্ট অনুরাগ ঠাকুর বলেছেন যে, তাঁরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করছেন না। ‘‘দেশের বিচারব্যবস্থাকে অসম্ভব সম্মান করি আমরা। কারও বিরুদ্ধে লড়ছিও না। শুধু বলছি যে, কয়েকটা ব্যাপার নিয়ে সংশয় আছে।’’ সঙ্গে বোর্ড প্রেসিডেন্টের সংযোজন, ‘‘রাজ্য সংস্থাদের লোঢা সংস্কার কার্যকর করতে হবে। রায়ের কপি ওরা পাক। ওদের সঙ্গে কথা বলব। বলব, কার্যকর করতে।’’

কিন্তু সেটা কত দূর হবে, তা নিয়ে ঘোরতর সংশয় আছে কোনও কোনও মহলে। কোনও কোনও কর্তা বললেন যে, সংস্কারের অধিকাংশ মানা যে হবে না আগেই তো বোর্ডকে বলে দিয়েছে রাজ্য সংস্থারা। নতুন করে মানার প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে? বরং এঁরা মনে করেন, ম্যাচের টাকা যদি বন্ধ হয়ে যায় তা হলে আবার আন্তর্জাতিক ম্যাচ থেকে রঞ্জি— সব কিছু নিয়ে ফের অনিশ্চয়তা দেখা দিলেও দিতে পারে।

রাজেন্দ্র মাল লোঢা— তিনিও নিঃসন্দেহ নন বোর্ডের পরবর্তী কর্মপন্থা নিয়ে। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘নিজের রায় কার্যকর করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট যেটা সঠিক ভেবেছে, তাই করেছে। এখন বোর্ড কতটা কী করে, সেটাই দেখার।’’ লোঢা আরও বলেন, অনুরাগ ঠাকুরের সঙ্গে বসে সংস্কারের রোডম্যাপ তৈরিতে তাঁর কোনও আপত্তি নেই। ‘‘উনি এলে অবশ্যই কথা বলব। তবে ওঁকে আমরা ডেকেছিলাম গত ৯ অগস্ট। উনি আসেননি।’’

ফিরোজ শাহ কোটলার পরে ভারত-নিউজিল্যান্ড ওয়ান ডে সিরিজ যতই উত্তেজক দেখাক, ভারতীয় বোর্ড বনাম লোঢা কমিশনের আসন্ন যুদ্ধের শিরশিরানির পাশে সেটা আসলে ফুটনোট মাত্র।

কড়া দাওয়াই

• লোঢা কমিশনের রিপোর্ট নিঃশর্তে মানতে হবে রাজ্য ক্রিকেট সংস্থাগুলিকে

• যত দিন তারা তা না মানছে, তত দিন বোর্ড থেকে কোনও অর্থ নয়

• বোর্ডের হিসেব পরীক্ষা করতে অডিটর বসাবে লোঢা কমিশন

• কত টাকা পর্যন্ত চুক্তি বোর্ড করতে পারবে, তা-ও ঠিক করবে কমিশন

Anurag Thakur BCCI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy