Advertisement
E-Paper

সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে সংঘাতের রাস্তাই বেছে নিল ক্রিকেট বোর্ড

নয়াদিল্লির নির্যাস। বিশেষ সাধারণ সভায় সদস্যদের সঙ্গে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। (মাঝে) মার্কণ্ডেয় কাটজু, যাঁকে নিয়ে লোঢা কমিশনের সঙ্গে বসতে চাইছে বোর্ড। (ডান দিকে) লড়াই ছাড়ছেন না বোর্ড প্রেসিডেন্ট অনুরাগ ঠাকুর।

গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৬ ০৪:২৭
নয়াদিল্লির নির্যাস। বিশেষ সাধারণ সভায় সদস্যদের সঙ্গে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। (মাঝে)।

নয়াদিল্লির নির্যাস। বিশেষ সাধারণ সভায় সদস্যদের সঙ্গে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। (মাঝে)।

নয়াদিল্লির নির্যাস। বিশেষ সাধারণ সভায় সদস্যদের সঙ্গে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। (মাঝে) মার্কণ্ডেয় কাটজু, যাঁকে নিয়ে লোঢা কমিশনের সঙ্গে বসতে চাইছে বোর্ড। (ডান দিকে) লড়াই ছাড়ছেন না বোর্ড প্রেসিডেন্ট অনুরাগ ঠাকুর।

শিরোনামটা অবিশ্বাস্য লাগতে পারে! কিন্তু শুক্রবার নয়াদিল্লিতে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বিশেষ সাধারণ সভার তাই মূল সুর। ক্রিকেটমহলে একটা অংশ সন্ত্রস্ত আর ভয়ার্ত হয়ে মনে করছে, সংঘাতের পথে গিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের অবমাননা মানে আরও ভোগান্তি অপেক্ষা করে থাকবে। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ সেই ভয়ের তোয়াক্কা করতে রাজি নয়।

এ দিনের সভা যেমন রীতিমতো গলা চড়িয়ে ঐক্যমতে এল যে, বিনা যুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতের কাছে কিছুতেই নতিস্বীকার করবে না ক্রিকেট বোর্ড। প্রেসিডেন্ট অনুরাগ ঠাকুর এবং সচিব অজয় শিরকে-কে সভা এ ব্যাপারে যথাবিহিত করার দায়িত্ব সমর্পণ করল।

বোর্ডের আপত্তি আর এম লোঢা কমিটির সুপারিশ মেনে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া দু’টো রায় প্রসঙ্গে। এক, সত্তর বছরের বেশি বয়সি কেউ ক্রিকেট প্রশাসনে থাকতে পারবেন না। দুই, তিন বছর হলেই কুলিং অফ পিরিয়ডে চলে যেতে হবে। অর্থাৎ, ঠান্ডা ঘরে চলে যাবে প্রশাসনিক জীবন।

এ দিনের সভায় প্রেসিডেন্ট অনুরাগ ঠাকুর উত্তেজিত বক্তব্য রাখলেও আদালত বিরোধী আলোচনার মূল সুর বেঁধে দেন শরদ পওয়ারের মতো প্রবীণরা। অনেকেই বলেন যে, এই আইন কার্যকর হলে তুমুল বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। ক্রিকেট পরিচালনা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। কোনও যোগ্য লোক প্রশাসনে আসতে চাইবে না। কারণ সে জানে তিন বছর পরে বাইরে চলে যেতে হবে। আইন প্রণয়নেও এত জটিলতা যে পুরো সিস্টেমটা বেকার হয়ে যাবে। এই জিনিস মেনে নেওয়া যায় না।

বোর্ড তিন সদস্যের আইনজীবী টিমকে নিয়ে আগামী দিনে লোঢা সমস্যার মোকাবিলা করবে ঠিক করেছে। কিন্তু তার বাইরে তীব্র জল্পনা শুরু হয়েছে যে বোর্ড কর্তারা সম্ভবত চাইছেন, ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা চালাতে গিয়ে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে, এমন তীব্র শোরগোল তুলে বিষয়টা লোকসভায় আনতে।

তার পর তাদের লক্ষ্য হবে লোকসভা থেকে নতুন স্পোর্টস বিল প্রণয়ন করে সুপ্রিম কোর্টের রায় সংশোধন। আপাতত অবশ্য আইন মেনে তাঁদের সুপ্রিম কোর্টেই রিভিউ পিটিশনের রাস্তায় যেতে হচ্ছে।

ওয়াকিবহাল মহল বোর্ডের শুক্রবারের যুদ্ধং দেহি মনোভাবে স্তম্ভিত। এদের মনে হচ্ছে পার্লামেন্ট থেকে বিল প্রণয়ন করতে হলে নতুন স্পোর্টস বিল তৈরি করতে হবে। তিন বছর পুরনো স্পোর্টস বিলই তো এখনও লোকসভায় পাশ হয়নি। সেই বিলে আবার সত্তর বছরের উপর হয়ে গেলে অবসর নেওয়া এবং নির্দিষ্ট সময়ের পর ঠান্ডা ঘরে চলে যাওয়া— দু’টো শর্তের কথাই বলা ছিল।

আরও চাঞ্চল্যের বিষয় হল, বোর্ড কর্তারা তাঁদের আইনি সেনাপতি হিসেবে নিযুক্ত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি বিতর্কিত মার্কণ্ডেয় কাটজুকে। কেউ কেউ এ দিন এমন প্রস্তাব দেন যে, মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে লোঢার সঙ্গে বোর্ড সচিব আর প্রেসিডেন্টের যে বহু প্রতীক্ষিত বৈঠক আছে তাতে কাটজুকে নিয়ে যাওয়া হোক। লোঢার এই বৈঠকে বোর্ডকর্তাদের বলার কথা কী ভাবে তাঁরা রায় অনুযায়ী আইনগুলো কার্যকর করবেন। সেখানে প্রেসিডেন্ট-সচিবের বাইরে কাউকে তিনি ডাকেনওনি।

তৃতীয় অ-নিমন্ত্রিত সদস্য হয়ে কাটজু যেতে পারেন শুনে আইনজীবী মহলে ঘোর বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে। আর্টিকল ১৪৮ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি কোনও কমিটির সামনে হাজির হতে পারেন না। সেক্ষেত্রে লোঢার সামনে সরকারি ভাবে হাজির হওয়ার কোনও এক্তিয়ারই নেই কাটজুর।

তা ছাড়া কাটজু খুব বিতর্কিত চরিত্র। এক সময় প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ছিলেন। লোঢা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি থাকার সময় তাঁর তীব্র বিরোধিতা করেছেন। ঠিক এক বছর আগে লোকসভা এবং রাজ্যসভা একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্যের বিরুদ্ধে নিন্দাসূচক প্রস্তাব গ্রহণ করে। কী না, কাটজু তাঁর ব্লগে লিখেছিলেন গাঁধী ছিলেন ব্রিটিশ এজেন্ট আর নেতাজি জাপানি গুপ্তচর।

তখন সেই নিন্দাসূচক প্রস্তাবের বিরুদ্ধে কাটজু সুপ্রিম কোর্টে যান। তিন সদস্যের যে বেঞ্চ তীব্র তিরস্কারে তাঁর আবেদন খারিজ করে দেয়, তাঁর অন্যতম ছিলেন টিএস ঠাকুর। আপাতত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। আরও সহজ করে বললে, ক্রিকেট বোর্ড মামলার প্রধান বিচারপতি।

বোর্ড রিভিউ পিটিশন করলে আইন অনুযায়ী যিনি রায় দিয়েছেন সেই বিচারপতির কাছেই আবেদন যাবে। অর্থাৎ ঠাকুরই ঠিক করবেন নিজের অর্ডার তিনি বদলাবেন কি না। সাধারণ ভাবে রায়দানে আইনি গোলযোগ থাকলে তবেই রিভিউ পিটিশন সফল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

অনেকের তাই মনে হচ্ছে, বোর্ড কর্তারা পাল্টা লড়াইতে গিয়ে আরও হিতে বিপরীত করছেন। লোঢা এর ফলে আরও অনমনীয় হয়ে যাবেন।

ক্রিকেট বোর্ডের একটা অংশ অবশ্য খুব আশাবাদী। এঁদের মনে হচ্ছে, যুদ্ধ এখনও শেষ হয়ে যায়নি। ও আদালত যতই বলুক, আমরা এত সহজে ঘাড় বেঁকাব না।

ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে অনেক বেশি উত্তেজক আর সুদূরপ্রসারী লড়াই আগামী ক’সপ্তাহ যে নয়াদিল্লিতে অপেক্ষা করে রয়েছে, তা বোঝার জন্য ক্রিকেট-বোদ্ধা হওয়ার দরকার নেই।

BCCI Supreme court
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy