Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

সম্মানজনক বিদায় এখন কুম্বলের হাতে

ওয়াকিবহাল মহলে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, কুম্বলেকে সম্মানজনক বিদায়ের রাস্তা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কোহালি এবং দলের সিনিয়র ক্রিকেটারেরা মোটামুটি পরিষ্কারই করে দিয়েছেন, তাঁরা নতুন কোচ চান।

প্রশ্ন: ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও কি দেখা যাবে কুম্বলেকে। ফাইল চিত্র

প্রশ্ন: ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও কি দেখা যাবে কুম্বলেকে। ফাইল চিত্র

সুমিত ঘোষ
লন্ডন শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৭ ০৪:৩১
Share: Save:

ওভালে ‘জয় হো’ গান আর ভারতীয় গর্জন।

বিলেতের মাঠে আরব সাগরপাড়ের মতো, নীল জার্সিতে সমুদ্রের জলরাশির মতো ঢেউ ওঠা।

মরণবাঁচন ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে চূর্ণ করে সেমিফাইনালে পৌঁছে যাওয়া।

এমন সব মায়াবী সন্ধিক্ষণ তৈরি হওয়ার মধ্যেও চাপা দিয়ে রাখা যাচ্ছে না কোচ-বিতর্ক। বরং তা আরও এসপার-ওসপারের দিকে এগোচ্ছে। বিরাট কোহালি-রা সেমিফাইনালে পৌঁছনোর পরের দিনই জরুরি বৈঠক হল সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটরস (সিওএ)-এর। বৈঠকের পরেই সিওএ প্রধান বিনোদ রাই ঘোষণা করেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনিল কুম্বলেই কোচ হিসেবে যাবেন যদি তিনি যেতে রাজি হন।

সিওএ প্রধানের এই মন্তব্যের মতো আজগুবি এবং রহস্যময় বিবৃতি ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে আর কখনও শোনা গিয়েছে কি না সন্দেহ। বিশ্বের কোনও ক্রিকেট দলের কোচ নির্বাচন নিয়ে কখনও কোনও বোর্ডকে বলতে শোনা যায়নি যে, আমরা অমুককে কোচ হিসেবে নির্বাচন করলাম। এর পর উনি যদি যেতে রাজি হন, উনিই কোচ হবেন।

আরও পড়ুন: ছিটকে গেল টিম ‘চোকার্স’, শেষ চারে বিরাটরা

ওয়াকিবহাল মহলে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, কুম্বলেকে সম্মানজনক বিদায়ের রাস্তা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কোহালি এবং দলের সিনিয়র ক্রিকেটারেরা মোটামুটি পরিষ্কারই করে দিয়েছেন, তাঁরা নতুন কোচ চান। দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ জেতার পরে ফের তাঁরা একই রকম কট্টর বার্তা দিয়ে থাকতে পারেন।

বল তাই এখন কুম্বলের কোর্টে। ড্রেসিংরুমের আস্থা হারিয়েছেন দেখে তিনি নিজে যদি সরে দাঁড়ান, তা হলে সব ঝামেলা চুকে গেল। যদি তিনি নিজে থেকে না সরেন, তখন নতুন পথ ভাবতে হবে বোর্ড প্রশাসকদের।

তবে জনপ্রিয় মত হচ্ছে, দলের মধ্যে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা নেই দেখে কুম্বলে নিজে থেকেই সরে দাঁড়াতে পারেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শেষেই তিনি সে কথা জানিয়ে দিতে পারেন।

আর সত্যিই টিমের মধ্যে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কোনও ইতিবাচক ছবিই চোখে পড়ছে না। এমনকী, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এমন মরণবাঁচন ম্যাচের আগের দিনও কোহালি-কুম্বলে কোনও কথাই বলতে দেখা যায়নি। যুবরাজ সিংহ, রোহিত শর্মা বা শিখর ধবনের মতো অন্য সিনিয়র-রাও যে খুব কাছাকাছি আসছেন কোচের, এমন দৃশ্যও দেখা যাচ্ছে না।

একমাত্র মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে ওভালে শনিবারের প্র্যাকটিস সেশনে কিছুক্ষণ কুম্বলের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু ধোনি এবং কোহালির যে রকম মিত্রতার বন্ধন তৈরি হয়ে রয়েছে মাঠে এবং মাঠের বাইরে, কোচকে নিয়ে দুই মহাতারকার ভিন্ন মত পোষণের কোনও সম্ভাবনাই নেই।

রবিবারের ওভালেও বারবার দেখা গিয়েছে ধোনি-কোহালি দু’টো মস্তিষ্ক এক হয়ে যাচ্ছে। কখনও বুমরাকে বল দেব নাকি ওর ওভারগুলো ধরে রাখব, তা নিয়ে। কখনও ফিল্ড প্লেসিং নিয়ে। কখনও বোলার পরিবর্তন নিয়ে। ভারতীয় ক্রিকেটে অধিনায়ক, সহ-অধিনায়ক মানে খুবই বিতর্কিত আর তিক্ততার ইতিহাস। ধোনি-কোহালি উজ্জ্বল এবং সম্ভবত এক মাত্র ব্যতিক্রম।

সেমিফাইনালে ওঠার পরেও কোহালি সাংবাদিক সম্মেলনে রবিবার বলে গিয়েছেন, ‘‘ধোনির মতো মস্তিষ্ক পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছে আর পরামর্শ নেব না, এটা ভাবতেই পারি না। টিমের কাছে ও একটা সম্পদ। মাঠে অধিনায়ক হিসেবে আমি একাকী বোধ করতে চাই না।’’

দুঃখের বিষয় হচ্ছে, প্রায় এক পক্ষকাল বিলেতে কাটিয়ে দেওয়ার পরেও কোচকে নিয়ে এমন স্বতঃস্ফূর্ত আর ইতিবাচক মন্তব্য অধিনায়কের মুখ থেকে শোনা যায়নি। পাকিস্তান ম্যাচের আগে খানিকটা জোরজার করেই কোহালি বলে গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে নাকি কোনও সঙ্ঘাত নেই। কেউ সেই বক্তব্য বিশ্বাস করেনি। বরং গুরু গ্রেগ চ্যাপেল এবং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই জিম্বাবোয়েতে পুল খেলার মতোই সাজানো মনে হয়েছিল এই বক্তব্য।

বরং উল্টো ইঙ্গিত রয়েছে। যেমন রবিবার এ বি ডিভিলিয়ার্সদের উড়িয়ে দেওয়ার পর কোহালি বলে গেলেন, ‘‘সব সময় ভাল কথা বললেই হয় না, আঘাতও করতে হয়। শ্রীলঙ্কার কাছে হারের পরে সেটা আমি করেছিলাম। ছেলেদের বলেছিলাম, এই জায়গায় আমাদের ভুল হয়েছে। ভুলের মধ্যে আমিও আছি।’’ এর পরেই অধিনায়কের বক্তব্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ, ‘‘ছেলেরা পেশাদার। ওরাও জানে কী করতে হয়। ন্যাগিং হলে চলে না। আমি ওদের সকলের সঙ্গে খেলেছি। শুধু কয়েকটি কথা মনে করিয়ে দিলেই চলে। বেশি বলতে হয় না।’’

বিশেষ করে ‘ন্যাগিং’ এবং ‘বেশি বলতে হয় না’ জাতীয় কথাগুলো যদি কোচের অতিরিক্ত অনুশাসন এবং অহেতুক হস্তক্ষেপের দিকটা মাথায় রেখে বলা হয়ে থাকে, অবাক হওয়ার নেই। তেমনই তাৎপর্যপূর্ণ একটা দৃশ্য দেখা গেল রবিবারের ওভালে ম্যাচ শেষ হওয়ার পরে। ধারাভাষ্য দিতে আসা রবি শাস্ত্রীকে দেখে এগিয়ে গেলেন কোহালি। দু’জনে আলিঙ্গনবদ্ধ হলেন।

তা দেখে কারও কারও মনে হচ্ছিল— যাক, বহু দিন পরে কোনও এক প্রাক্তন কোচের সঙ্গে তো অন্তত কথা বলতে দেখা গেল ভারত অধিনায়ককে। কুম্বলের সঙ্গে এমন ছবি ওঠার তো কোনও সম্ভাবনাই নেই। শাস্ত্রী ডিরেক্টর থাকাকালীনই খোলামেলা, ফুরফুরে ড্রেসিংরুম গড়ে তোলার শপথ নিয়েছিলেন নতুন অধিনায়ক কোহালি। দু’জনের সোজাসাপ্টা, দিলখোলা ভঙ্গিতে বসন্তের হাওয়া খেলেছিল ভারতীয় ড্রেসিংরুমে। সেই খোলামেলা বাতাবরণ এখনও অটূট আছে কি না, জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না।

কোহালিকে জিজ্ঞেস করলে পছন্দের কোচ হিসেবে এখনও অবধারিত ভাবে শাস্ত্রীর নাম করবেন। শাস্ত্রী নিজে আবেদন করেননি বলে তাঁর নাম নেই বোর্ডের শর্টলিস্টে। তিনি নিজে থেকে আবেদন করবেনও না। কোচ নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা ক্রিকেট অ্যাডভাইসরি কমিটিতে রয়েছেন তিন কিংবদন্তি। সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং ভি ভি এস লক্ষ্মণ। তাঁদের অন্তত দু’জন শাস্ত্রীকে চান না। চাইছেন কুম্বলেকে রাখতে। এক বছর আগে শাস্ত্রীকে সরিয়েই তাঁরা এনেছিলেন কিংবদন্তি লেগস্পিনারকে। একান্তই কুম্বলেকে সরে যেতে হলে সৌরভদের প্রথম পছন্দ বীরেন্দ্র সহবাগ।

সব মিলিয়ে কোহালিদের কোচ নির্বাচন এখন ডাকওয়ার্থ-লুইসের থেকেও জটিল অঙ্কের মুখে দাঁড়িয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE