Advertisement
E-Paper

লড়াই এখন কার্তিকের সঙ্গে পন্থের

কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী তীব্র আগ্রহের তরঙ্গ বইতে শুরু করেছে যে, কোন পনেরো জন শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের উড়ানে উঠবেন।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:২৩
প্রতিদ্বন্দ্বী: ইংল্যান্ডগামী বিমানে দীনেশ কার্তিক (ডানদিকে) এবং ঋষভ পন্থের মধ্যে কে শেষ পর্যন্ত উঠবেন, তা নিেয় কৌতূহল বাড়ছে। ফাইল চিত্র।

প্রতিদ্বন্দ্বী: ইংল্যান্ডগামী বিমানে দীনেশ কার্তিক (ডানদিকে) এবং ঋষভ পন্থের মধ্যে কে শেষ পর্যন্ত উঠবেন, তা নিেয় কৌতূহল বাড়ছে। ফাইল চিত্র।

আইপিএল নিয়ে উত্তেজনার পারদ চড়ার মধ্যেই ভারতীয় ক্রিকেটের মহালগ্ন হাজির। মাঝে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। সোমবার দুপুর তিনটে নাগাদ মুম্বইয়ে ক্রিকেট বোর্ডের সদর দফতরে বসে বিশ্বকাপের ভারতীয় দল ঘোষণা করে দেবেন জাতীয় নির্বাচকেরা।

কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী তীব্র আগ্রহের তরঙ্গ বইতে শুরু করেছে যে, কোন পনেরো জন শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের উড়ানে উঠবেন। নির্বাচনী বৈঠকের দু’দিন আগে যা ইঙ্গিত পেয়েছে আনন্দবাজার, তাতে মোটামুটি ভাবে পনেরো জনের মধ্যে তেরো জন নিশ্চিত। এই তেরো জন হলেন — রোহিত শর্মা, শিখর ধওয়ন, বিরাট কোহালি (অধিনায়ক), বিজয় শঙ্কর, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি (উইকেটকিপার), কেদার যাদব, হার্দিক পাণ্ড্য, ভুবনেশ্বর কুমার, যুজবেন্দ্র চহাল, কুলদীপ যাদব, যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামি, কে এল রাহুল। চোদ্দোতম সদস্য হিসেবে প্রায় নিশ্চিত রবীন্দ্র জাডেজা।

দল নির্বাচনী সভায় প্রশ্ন উঠতে পারে, চার পেসার নেওয়া হবে নাকি তিন স্পিনার? জাডেজার পক্ষে জোরালো হয়ে উঠতে পারে এই যুক্তি যে, দু’জন অলরাউন্ডার তো যাচ্ছেনই। তাঁরা মিডিয়াম পেসারের কাজ করে দিতে পারবেন। তা হলে বাড়তি পেসার না নিয়ে জাড্ডুর কথা ভাবা হোক। একে তো তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা স্পিনার-অলরাউন্ডার। ইংল্যান্ডে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সঙ্গে অসাধারণ ফিল্ডার।

বিশ্বকাপের দল নির্বাচনে সেরা আকর্ষণ হতে যাচ্ছে দীনেশ কার্তিক বনাম ঋষভ পন্থের দ্বৈরথ। সভায় সব চেয়ে বেশি সময় ব্যয় হতে পারে দ্বিতীয় উইকেটকিপার বাছা নিয়েই। কার্তিকের পক্ষে রয়েছে অভিজ্ঞতা। কারও কারও মনে হচ্ছে, মহেন্দ্র সিংহ ধোনির পরে তিনি দ্বিতীয় ‘ফিনিশার’ হিসেবে বেশি নির্ভরযোগ্য। ধোনির মতোই ঠান্ডা মাথায় কাজ সারতে পারেন। নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে ভাবে জিতিয়েছিলেন, তা এখনও কেউ ভুলতে পারেননি।

আবার এটাও ঠিক যে, ঋষভ পন্থের মতো আগ্রাসী ভঙ্গিতে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা নেই কার্তিকের। জনতার ভোট পন্থের দিকে। পণ্ডিতদের একাংশেরও রায়, ওয়ান ডে ক্রিকেট পাল্টাচ্ছে। তিনশোর জায়গায় এখন সাড়ে তিনশো বা এমনকি, চারশোও তাড়া করতে হতে পারে। তখন কার্তিককে দিয়ে হবে না, ঋষভের ব্যাটিংই চাই।

চলতি আইপিএলে খুব একটা ভাল ছন্দেও নেই কার্তিক। এখনও পর্যন্ত সাত ম্যাচে মাত্র ৯৩ রান করেছেন। গড় ১৮.৬০। একটি হাফ সেঞ্চুরি। সেখানে ঋষভ করেছেন ৭ ম্যাচে ২২২ রান। তাঁরও একটা পঞ্চাশ। গড় ৩৭। যদিও অধিনায়ক কোহালি বা জাতীয় নির্বাচকেরা বিশ্বকাপের দল বাছতে বসে আইপিএলকে মানদণ্ড হিসেবে ধরছেন না। কুড়ি ওভারের ক্রিকেট দেখে পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচের দল তৈরিতে রাজি নন কোহালিরা। ঋষভের বিপক্ষে যেতে পারে, মোক্ষম সময়ে উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসার প্রবণতা। ম্যাচ শেষ করার মতো পরিস্থিতি পেয়েও তিনি কয়েক বার হেলায় তা নষ্ট করে এসেছেন। সেই রোগ কি বিশ্বকাপের টিকিটও দূরে সরিয়ে দিল? সোমবারই পরিষ্কার হয়ে যাবে।

তেমনই একেবারে শেষ দৌড়ে এসে ছিটকে যাওয়ার মুখে অম্বাতি রায়ডু। দু’তিন মাস আগেও মনে হচ্ছিল, রায়ডু হতে যাচ্ছেন বিশ্বকাপে কোহালিদের ব্যাটিং অর্ডারে চার নম্বর। আরব সাগরের পারে যখন জাতীয় নির্বাচকেরা পনেরো জনের চূড়ান্ত দল বাছতে বসবেন, সেই রায়ডুই অনেকটা পিছিয়ে থাকবেন। গত কয়েকটি সিরিজে তাঁর ব্যাটিংয়ে আত্মবিশ্বাসের ছাপ কমতে দেখা গিয়েছে। অনেকের মনে হচ্ছে, হায়দরাবাদের ডান-হাতি ব্যাটসম্যান দলের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি করে নিজের জায়গা রক্ষা করার জন্য ব্যাট করছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে শেষ এক দিনের সিরিজে শেষ দু’টি ম্যাচে তাঁকে বসিয়েও দেওয়া হয়। সেটাই বড় ইঙ্গিত ছিল যে, দলছুট হয়ে পড়ছেন তিনি।

বিশ্বকাপে বিরাটদের চার নম্বর ব্যাটসম্যান তা হলে কে? গত কয়েক মাস এই প্রশ্ন নিয়ে সব চেয়ে বেশি আলোড়িত হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট। দেখা যাচ্ছে, বিশ্বকাপের দল নির্বাচনের অন্তিম লগ্নে এসেও জনতার মনে সেই প্রশ্ন থেকে গিয়েছে। তবে সম্ভাব্য সমাধান হিসেবে এক জন উঠে এসেছেন। তিনি— বিজয় শঙ্কর। ভারতের হয়ে এখনও পর্যন্ত মাত্র ৯টি ওয়ান ডে খেলে তাঁর সংগ্রহ ১৬৫ রান। সর্বোচ্চ ৪৬। গড় ৩৩। আহামরি কিছুই নয়, খুব জোর বলা যেতে পারে ভদ্রস্থ। কিন্তু রানসংখ্যা বা গড় দিয়ে নয়, শঙ্কর আস্থা অর্জন করে নিয়েছেন তাঁর শৃঙ্খলাপরায়ণ, লড়াকু ব্যাটিংয়ে।

প্রয়োজনে তাঁকে চার নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সঙ্গে ইংল্যান্ডের পরিবেশে কাজে আসতে পারে তাঁর মিডিয়াম পেস বোলিং। কপিল দেবের দৈত্যরা যখন তিরাশিতে বিশ্বকাপ জিতে চমকে দিয়েছিল, সব চেয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন মোহিন্দর অমরনাথ। কারও কারও মতে, বিজয় শঙ্করকে ‘মিনি মোহিন্দর’ ভাবা যেতেই পারে। শনিবার পর্যন্ত বিশ্বকাপের সম্ভাব্য যে তালিকা নির্বাচকদের হাতে হাতে ঘুরছে, তাতে হার্দিক পাণ্ড্যর পাশাপাশি দ্বিতীয় অলরাউন্ডার হিসেবে জায়গা করে নিতে পেরেছেন শঙ্কর। রাতারাতি নাটকীয় পরিবর্তন না ঘটলে ইংল্যান্ড যাত্রা আটকাবে না।

সম্ভাব্য চার নম্বর হিসেবে অবশ্য আরও এক জন থাকছেন। তিনি— কে এল রাহুল। বিশেষ করে রায়ডুর প্রতি দল আস্থা হারানোয় রাহুলের সম্ভাবনা আরও বেড়ে গিয়েছে। নির্বাচনী সভায় কেউ কেউ রায়ডুকে নিয়ে শেষ চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু রাহুলের পক্ষে যাবে তাঁর সাম্প্রতিক ফর্ম এবং নানা জায়গায় ব্যাট করার ক্ষমতা। প্রয়োজনে ওপেনার হিসেবে তাঁকে খেলানো যাবে, আবার মিডল-অর্ডারেও ব্যবহার করা যেতে পারে।

সোমবার যেখানে বসে এম এস কে প্রসাদ এবং তাঁর সতীর্থরা বিশ্বকাপের দল বেছে নেবেন, সেই ক্রিকেট সেন্টার অবস্থিত ওয়াংখেড়েতে। ২ এপ্রিল, ২০১১ যেখানে বিশ্বকাপ জিতেছিল মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভারত। আর সেই বিশ্বজয়ের সব চেয়ে স্মরণীয় দৃশ্য হয়ে আছে, এক তরুণ ক্রিকেটারের কাঁধে চড়ে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে সচিন তেন্ডুলকরের সারা মাঠ ঘোরা।

আট বছর পরে সচিনকে কাঁধে নিয়ে ঘোরা সেই তরুণ এ বারের বিশ্বকাপে দেশকে নেতৃত্ব দেবেন— বিরাট কোহালি। আর জিতেও আবেগকে বশে রাখতে পারা সেই দলের স্থিতধি অধিনায়ক এ বারও অন্যতম ভরসা— মহেন্দ্র সিংহ ধোনি!

Cricket ICC Cricket World Cup 2019 BCCI India Dinesh Karthik Rishabh Pant
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy