দাপট: পাঁচ উইকেট অশোক ডিন্ডার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
রঞ্জি নক আউটের দরজা খুলেও যেন খুলছে না।
শেষ আটের দরজা খুলে ফেলার কথা ছিল সোমবারই। কিন্তু এমন দিনেই ঘরের মাঠে যে স্বরূপ দেখা গেল বাংলার ক্রিকেট দলের, তাতে অন্য দুশ্চিন্তা ঢুকে পড়াটাই স্বাভাবিক বাংলার ড্রেসিংরুমে। শেষ আটে উঠলেও তার বেশি এগোনো যাবে তো? রবিবার ইডেনে বাংলার পারফরম্যান্সে কিন্তু এই প্রশ্নই উঠে গেল।
জঘন্য বোলিং। কুৎসিত ফিল্ডিংয়ের পর দিনের শেষে ব্যাটিংয়েরও বেহাল দশা দেখা গেল। তাও আবার কাদের বিরুদ্ধে? না গোয়া। যাদের এ বারের রঞ্জি ট্রফিতে কোনও জয় নেই। সেই তারাই ১৩০-৫ হয়ে যাওয়ার পরেও বাংলার ৩৭৯ রানের জবাবে প্রথমে ফলো-অন বাঁচাল ও পরে ৩১০ রানও তুলল। সৌজন্যে বাংলার বোলিং ও ফিল্ডিং।
অশোক ডিন্ডার ২৫তম পাঁচ উইকেটের কীর্তিস্থাপন সত্ত্বেও এ দিন বাংলা শিবিরে খুশির হাওয়া দেখা গেল না। দিনের শেষে বাংলা ১৭৭ রানে এগিয়ে। রামন, সুদীপ, মনোজ ফিরে গেলেন ৮৯ রানের মধ্যেই। মঙ্গলবার ম্যাচের শেষ দিন সকালে যদি অভাবনীয় কিছু হয়? এই আশঙ্কাতেই এখনই বলা যাচ্ছে না তিন পয়েন্ট ও শেষ আটে জায়গা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে বাংলার।
সোমবারই যা সব অভাবনীয় কাণ্ড ঘটল! বঙ্গ বোলার ও ফিল্ডারদের পারফরম্যান্স কতটা তলানিতে গিয়ে ঠেকতে পারে, সোমবার তার স্পষ্ট নমুনা দেখতে পাওয়া গেল ইডেনে। গোয়াকে ৩১০-এ অল আউট করা পর্যন্ত যা ছিল অব্যাহত।
আগের দু’দিন সকালের যে কন্ডিশন কাজে লাগিয়ে গোয়ার বোলাররা অনেকগুলো উইকেট তুলেছিলেন, সেই কন্ডিশনকে সোমবার সকালে কাজে লাগাতেই পারলেন না বঙ্গ বোলাররা। দিনের প্রথম উইকেটই এল খেলা শুরুর এক ঘণ্টা ৪০ মিনিট পরে। দিনের ২৩তম ওভারে। নতুন বল নেওয়ার তিন ওভার পরে। তাও সেট ব্যাটসম্যান কিনান ভাজ জঘন্য শট নিয়ে প্রায় আত্মঘাতী হওয়ায়।
যে গোয়া এ বারের রঞ্জি ট্রফিতে এর আগে মাত্র একটা ইনিংসে তিনশোর বেশি রান তুলতে পেরেছে, সেই দলকে এ দিন ৩১০ রান তুলতে দিল বঙ্গ বোলিং। তা সত্ত্বেও পাঁচ উইকেট পাওয়া পেসার অশোক ডিন্ডা বলে গেলেন, ‘‘আমাদের বোলিং ভালই হয়েছে। নতুনরা যতটুকু করার করেছে। ওরা যতটুকু জানে ততটুকুই করেছে।’’ ডিন্ডার কথাতেই স্পষ্ট, এই বোলিং বিভাগ নিয়ে শেষ আট থেকে শেষ চারে ওঠা মোটেই সোজা হবে না। যদিও তাও মানতে রাজি নন ইতিবাচক থাকতে মরিয়া ডিন্ডা।
গোয়ার সেঞ্চুরিয়ন অমোঘ দেশাই ছাড়া কোনও ব্যাটসম্যানই এ দিন দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিং করেননি। তবু ৩১০ রান উঠল কী করে? অশোক ডিন্ডা ছাড়া বাংলার আর কোনও বোলারকেই ঠিকমতো লাইন ও লেংথে বল করতে দেখা যায়নি। কণিষ্ক শেঠ, সায়ন ঘোষরা ফিল্ডিং সাজিয়েছেন এক রকম, বোলিংয়ের লাইন ছিল অন্য রকম। রঞ্জি ট্রফি স্তরে যা অভাবনীয়।
ডিন্ডাও সকাল থেকে দুই স্পেলে ১৩ ওভার বল করে যান। তিনি আরও হতাশ হয়ে যান তাঁর বলে তিন-তিনটে ক্যাচ পড়ায়। এক সময় মাঠে মেজাজ হারাতেও দেখা যায় তাঁকে। সকালে দেশাই যখন ৫৩-য়, তখন স্লিপে তাঁর ক্যাচ ফেলেন ঈশ্বরন। লাঞ্চের পরে থার্ড ম্যানে সহজ ক্যাচ ফেলেন ঈশ্বরন ও ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায়। যা দেখে ডিন্ডাকে দৃশ্যতই বিরক্ত মনে হচ্ছিল।
ডিন্ডার বলে তিনটে ক্যাচ না পড়লে অনেক আগেই গোয়া শেষ হয়ে যেত হয়তো। আবার দেশাই ও টেলএন্ডারদের খুচরো রান নেওয়ার অনিচ্ছা ও মধ্যপ্রদেশের আম্পায়ার সঞ্জীব দুয়ার লকসে গর্গকে ভুল কট বিহাইন্ড দেওয়া না থাকলে গোয়া রান আরও বাড়িয়ে নিতে পারত।
ওদের ন’নম্বর ব্যাটসম্যান হেরম্ব পরব তেমন কোনও ফুটওয়ার্ক ছাড়াই চালিয়ে খেলে গোটা সাতেক চার হাঁকান। এই সময়ে তাঁকে বাংলার কোনও বোলার একটা ভাল, সোজা বল দিতে পারেননি। যা পারেন সেই ডিন্ডাই। একটা ভাল বলেই তাঁর স্টাম্প ছিটকে দেন বাংলার সেরা স্ট্রাইক বোলার।
মঙ্গলবার আর অঘটন না ঘটলে হয়তো বাংলা শেষ আটে উঠবে। কিন্তু অনেক প্রশ্ন ও দুশ্চিন্তা নিয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy