Advertisement
১৬ জানুয়ারি ২০২৫

বাবার অপূর্ণ স্বপ্ন সফল করাই লক্ষ্য সুমিতের

সেই সমীরবাবুর ছেলে সুমিত-ই এ বার সন্তোষ ট্রফিতে বাংলার বড় ভরসা। প্রথম ম্যাচে মণিপুরের বিরুদ্ধে জোড়া গোল করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন।

নায়ক: বাংলাকে সন্তোষ ট্রফিতে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন সুমিত। ফাইল চিত্র।

নায়ক: বাংলাকে সন্তোষ ট্রফিতে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন সুমিত। ফাইল চিত্র।

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৮ ০৪:১০
Share: Save:

ময়দানের প্রবাদপ্রতিম কোচ অচ্যুত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছাত্র। খিদিরপুর ক্লাবের হয়ে কলকাতা ফুটবল লিগে আশির দশকে খেলেছেন। কিন্তু কার্টিলেজ ছিঁড়ে যাওয়ায় বাংলা বা ভারতের হয়ে খেলার স্বপ্ন আর সত্যি হয়নি অশোকনগরের সমীর দাসের।

সেই সমীরবাবুর ছেলে সুমিত-ই এ বার সন্তোষ ট্রফিতে বাংলার বড় ভরসা। প্রথম ম্যাচে মণিপুরের বিরুদ্ধে জোড়া গোল করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন। বাংলা কোচ রঞ্জন চৌধুরীও তাঁর এই লেফ‌্ট উইঙ্গার সম্পর্কে বলছেন, ‘‘ছেলেটার ফুটবল-জ্ঞান প্রখর। নিজেকে সামলে রাখতে পারলে অনেক দূর যাবে সুমিত। দু’টো গোল করেই সুমিতের যাতে মাথা না ঘুরে যায়, সেটা দেখতে হবে।’’

সমীরবাবু হাবড়ার একটি শাড়ির দোকানের কর্মচারী। মাসিক রোজগার হাজার ছ’য়েক টাকা। মাসে তিরিশ দিনই কাজে যেতে হয়। সেই সমীরবাবু এখন পড়েছেন ঘোরতর সমস্যায়। সোমবার মণিপুরের বিরুদ্ধে ছেলের জোড়া গোল স্ত্রী পাপিয়া-র সঙ্গে মাঠে বসে দেখেছেন। কিন্তু বুধবার মহারাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাংলার ম্যাচে হাজির থাকতে পারবেন কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন। ফোনে তাই হতাশ গলায় সমীরবাবু বলে দেন, ‘‘সন্তোষ ট্রফিতে বাংলার হয়ে মাঠে নেমে ছেলে আমার একটা অপূর্ণ স্বপ্ন সফল করেছে। সোমবার স্ত্রী-কে নিয়ে বাংলার প্রথম ম্যাচটা দেখতে গিয়েছিলাম। মনে হয় না বুধবার যেতে পারব। দোকানেও তো বসতে হবে। না হলে সংসার চলবে না।’’

যাঁর জন্য সমীরবাবুর অপূর্ণ একটি স্বপ্ন সফল হল, সেই সুমিত মঙ্গলবার সকালে রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মহারাষ্ট্র ম্যাচের। অনুশীলন শেষে সুমিত বলছিলেন, ‘‘বাবার জন্যই এত দূর আসতে পেরেছি। রোজ তো আসতে পারবেন না। আমাদের সংসারে যে নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যাওয়ার অবস্থা। জানি না মঙ্গলবার বাড়ির লোক মাঠে থাকবে কি না।’’

অশোকনগর ফুটবল কোচিং সেন্টার-এ কোচ সৌরদীপ দাস-এর হাতে ফুটবলের হাতেখড়ি তেইশ বছরের এই বঙ্গসন্তান লেফ‌্ট উইঙ্গারের। সুব্রত কাপে স্থানীয় স্কুলের হয়ে রানার্স হওয়ার পরেই তাঁর সুযোগ এসেছিল কলকাতা ময়দানে কাস্টমস-এর জার্সি গায়ে খেলার। যে প্রসঙ্গে সুমিত বলছেন, ‘‘সে বার ভোরবেলা লোকাল ট্রেন ধরে কলকাতা এসেছিলাম ট্রায়াল দিতে। কাউকে চিনতাম না। ট্রায়াল থেকেই আমাকে বেছে নিয়েছিলেন কাস্টমস কোচ।’’

দু’বছর কাস্টমস ক্লাবে খেলার পরে গত বছর সই করেছিলেন রেনবো-য়। কলকাতা প্রিমিয়ার লিগে সেই রেনবো-র জার্সি গায়েই গতবছর মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন সুমিত। যে ম্যাচে ড্র করে দুই পয়েন্ট হারিয়েছিলেন কামো-ক্রোমা-রা। সে প্রসঙ্গ টেনে এনে সুমিত বলছেন, ‘‘সেই ম্যাচও বাবা যে দোকানে কাজ করেন সেখানকার টিভিতে দেখেছিলেন।’’ কলকাতা লিগে গোটা চারেক গোল করার পাশাপাশি গোল করিয়েছেনও সুমিত। আর সেই পারফরম্যান্সের জন্যই এ বার বাংলা দলে সুযোগ।

দ্বিতীয় ডিভিশন আই লিগের আগে মহমেডান ক্লাবের প্রস্তাব গিয়েছিল অসীম বিশ্বাসের ভক্ত এই ফুটবলারের কাছে। কিন্তু সুমিত সটান বলে দেন, ‘‘দ্বিতীয় ডিভিশন আই লিগ পরেও খেলার সুযোগ পাব। আগে সন্তোষ ট্রফিতে খেলতে চাই। তা হলে নিজেকে চেনানোর একটা সুযোগ পাব।’’

তাই বড় দলের প্রস্তাব ফিরিয়ে সন্তোষ ট্রফিকে-ই বেছে নিয়েছেন সুমিত। বলছেন, ‘‘প্রথম ম্যাচে গোল করে থেমে গেলে চলবে না। মহারাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও গোল করতে হবে। বাংলার হয়ে সন্তোষ ট্রফি জিততে পারলে বড় দলে খেলার সুযোগ আসতে পারে। আমার লক্ষ্য, দেশের হয়ে খেলা। সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি। বাবার আরও একটা স্বপ্ন, আমাকে জাতীয় দলে খেলতে দেখা। সেটাও সফল করতেই হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Sumit Das Santosh Trophy Football Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy