Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
অঙ্কিত-প্রদীপ্তর হাত ধরে স্বপ্নপূরণ

গুজরাতকে উড়িয়ে অনূর্ধ্ব-২৩ ক্রিকেটে ভারতসেরা বাংলা

টসে হেরে শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছিলেন অধিনায়ক কাজি জুনেইদ সৈফি। কনকনে শীতের সকালে ব্যাট করার কঠিন কাজটি করতে হয় বাংলাকে।

উচ্ছ্বাস: আগের দু’বারের রানার্স বাংলা এ বার দেহরাদূনে অনূর্ধ্ব ২৩ জাতীয় ওয়ান ডে টুর্নামেন্টের ফাইনালে গুজরাতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন। রবিবার ট্রফি নিয়ে উল্লসিত ক্রিকেটাররা। নিজস্ব চিত্র

উচ্ছ্বাস: আগের দু’বারের রানার্স বাংলা এ বার দেহরাদূনে অনূর্ধ্ব ২৩ জাতীয় ওয়ান ডে টুর্নামেন্টের ফাইনালে গুজরাতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন। রবিবার ট্রফি নিয়ে উল্লসিত ক্রিকেটাররা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৪০
Share: Save:

অক্লান্ত পরিশ্রম ও হার-না-মানা মনোভাবই ছিল অস্ত্র। সেই অস্ত্রে শান দিয়ে শেষ দু’বছর দু’টি প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠেছিল বাংলার অনূর্ধ্ব-২৩ দল। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন থেকে গিয়েছিল অধরা। রবিবার দেহরাদূনে সব অঙ্কই পাল্টে দিলেন প্রদীপ্ত প্রামাণিক, অঙ্কিত মিশ্র, ঈশান পোড়েলরা। অনূর্ধ্ব-২৩ ওয়ান ডে-র ফাইনালে গুজরাতকে ৬৪ রানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন বাংলা।

টসে হেরে শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছিলেন অধিনায়ক কাজি জুনেইদ সৈফি। কনকনে শীতের সকালে ব্যাট করার কঠিন কাজটি করতে হয় বাংলাকে। কিন্তু ওপেনারদের দুরন্ত শুরু বিপক্ষের পরিকল্পনায় কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। ৭০ রানের জুটি গড়ে নতুন বলকে নির্বিষ করার কাজ করতে সফল সুদীপ ঘরামি (৫১) ও অঙ্কুর পাল (২৫)। দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান রণজ্যোৎ সিংহ খারিয়ার। ৬৪ বলে ৫২ রান করেন তিনি। শেষে আকাশ দীপের ১৬ বলে ঝোড়ো ৩০ রানের ইনিংস ৫০ ওভারে ২৫৭-৮ স্কোরে পৌঁছে দেয় বাংলাকে।

কিন্তু শেষ ম্যাচের তুলনায়, এ ম্যাচে শুরুতে উইকেট তুলতে ব্যর্থ ঈশান ও আকাশ দীপ। বল সুইং করলেও উইকেট আসছিল না। ২১তম ওভারে গুজরাতের রান যখন ১০৭-০, তখনই ফেরানো হয় ঈশানকে। ওপেনার কথন পটেলকে (৪৫) ফেরানোর পরেই হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পায় বাংলা। পরের ৮৬ রানের মধ্যে বাকি ন’টি উইকেট হারায় গুজরাত। ৪৪.১ ওভারে ১৯৩ রানে শেষ বাংলার বিপক্ষ।

বাংলার হয়ে তিনটি করে উইকেট নেন দুই বাঁ-হাতি স্পিনার। ৫৩ রানে তিন উইকেট প্রদীপ্তর। ৪৩ রানে বিপক্ষের তিন ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দেন অঙ্কিত মিশ্র। অনূর্ধ্ব-২৩ প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকদের তালিকার প্রথম দুই স্থানে তাঁরাই। প্রদীপ্তর প্রাপ্তি ২৪টি উইকেট। ২১টি উইকেট অঙ্কিতের ঝুলিতে।

সদ্য বাংলার সিনিয়র দল থেকে বাদ পড়েছেন প্রদীপ্ত। বিজয় হজারে ও সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফির পরে রঞ্জির প্রাথমিক দলেও তিনি নেই। দল থেকে বাদ পড়ার যন্ত্রণা হয়তো আরও তাতিয়ে দিয়েছে প্রদীপ্তকে। দেহরাদূন থেকে ফোনে বলছিলেন, ‘‘বিশ্বাস করুন, বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় মা, বাবাকে বলেছিলাম, ‘ট্রফি জিতিয়েই বাড়ি ফিরব।’ সেই কথা রাখতে পেরেছি। এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।’’

কোচ সৌরাশিস লাহিড়ীও উচ্ছ্বাস ঢেকে রাখতে পারেননি। উৎসব ও চিৎকারের প্রভাব পড়েছে তাঁর কণ্ঠে। ভাঙা কণ্ঠস্বরেই বলছিলেন, ‘‘এত দিনের পরিশ্রম কখনও বিফলে যায় না। শেষ দু’বছরে ওয়ান ডে ও সি কে নাইডু ট্রফির ফাইনাল খেলেছি। কিন্তু ট্রফি জেতার স্বাদ পাইনি। এ বার তা হাতছাড়া হতে দেয়নি আমার দল।’’

কী ভাবে দল এত ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠল? সৌরাশিসের উত্তর, ‘‘প্রত্যেককে বলে দেওয়া হয়েছিল, ‘কারও ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স দলকে জেতাতে না পারলে, সেই পারফরম্যান্সের কোনও মূল্য নেই। আগে দল, তার পরে সব। এই মনোভাব প্রত্যেকের খেলায় ফুটে উঠেছে। শুরুর চাপ কাটিয়ে ফাইনালে অসাধারণ ভাবে ম্যাচে ফিরে এসেছি আমরা।’’

সোমবার রাতে শহরে পৌঁছচ্ছেন ঈশানরা। তাঁদের ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন সিএবি যুগ্মসচিব দেবব্রত দাস। তাঁর কথায়, ‘‘যুগ্মসচিব হওয়ার পরেই সাফল্য। তাই আনন্দের মাত্রা অনেক বেশি। অনূর্ধ্ব-২৩ দলের জন্য আমরা গর্বিত। কাল বিমানবন্দরে ফুলের তোড়া দিয়ে প্রত্যেককে বরণ করে নেওয়া হবে।’’ সচিব অভিষেক ডালমিয়ার ঘোষণা, ‘‘দলের প্রত্যেক সদস্যকে পুরস্কারমূল্য হিসেবে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। বাংলার এই পারফরম্যান্সে আমরা গর্বিত। বিশেষ ধন্যবাদ জানাব কোচ সৌরাশিসকে। গত তিন বছর একই ভাবে দলের জন্য পরিশ্রম করেছে ও।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE