প্রয়াত টেবিল টেনিস কোচ ভারতী ঘোষ। শিলিগুলির মাটিগাড়ার এক বেসরকারি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। বেশ কয়েক মাস ধরে ভুগছিলেন বার্ধক্যজনিত রোগে। প্রথাগত প্রশিক্ষকের ডিগ্রি না থাকলেও তাঁকে রাজ্যের অন্যতম সেরা টেবিল টেনিস কোচ হিসাবে বিবেচনা করা হত।
টেবিল টেনিসে অবদানের জন্য রাজ্য সরকার ২০১৯ সালে ভারতীকে ‘বঙ্গরত্ন’ সম্মান দেয়। রাজ্যের ক্রীড়া দফতর ২০২১ সালে ‘ক্রীড়াগুরু’ সম্মানে ভূষিত করে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি তাঁর অসুস্থতার খবর পেয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। তাঁর উদ্যোগেই ভারতীকে ভর্তি করানো হয় মাটিগাড়ার নার্সিংহোমে। ভারতীয় চিকিৎসার সাহায্যে এগিয়ে এসেছিলেন ক্রীড়া এবং রাজনৈতিক জগতের অনেকে।
কলেজে পড়ার সময় খেলা শেখার জন্য শিলিগুড়ির সেহগল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছিলেন ভারতী। তখন সেখানকার হাতে গোনা কয়েক জন ছাত্রীর অন্যতম ছিলেন ভারতী। সে সময় তাঁর কোনও কোচ ছিল না। মূলত সিনিয়রদের খেলা দেখে শিখতেন। পরে মহাবীর স্থানের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে টেবিল টেনিস শেখেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নিজের প্রতিভার পরিচয় দিয়েছিলেন ভারতী।
নিজে খেলার পাশাপাশি ছোটদের প্রশিক্ষণ দিতেও শুরু করেন। দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ি জেলার বিভিন্ন জায়গায় প্রশিক্ষণ দিতেন। আর্থিক ভাবে দুর্বল পরিবারের শিশুদের প্রশিক্ষণ দিতেন বিনা পারিশ্রমিকে। টেবিল টেনিসের সঙ্গ ছিন্ন হতে পারে— এই আশঙ্কায় বিয়ে করেননি। ৩০ বছর বয়সে রেলে চাকরি পান। তার পরও খেলা এবং প্রশিক্ষণ দুই চালিয়ে গিয়েছেন। চাকরি থেকে অবসর নিলেও প্রায় শেষ বয়স পর্যন্ত ছোটদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। শিলিগুড়ির দেশবন্ধু পাড়ার বাসিন্দা ছোটদের খেলা শিখিয়েছেন প্রায় ৫০ বছর ধরে।
প্রায় তিন হাজার ছাত্রছাত্রী রয়েছে ভারতীর। তাঁদের অনেকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরেও সাফল্য পেয়েছেন। তাঁর হাতে গড়া খেলোয়াড়দের অন্যতম মান্তু ঘোষ। তাঁর একাধিক ছাত্রছাত্রী প্যারালিম্পিক্সে পদক জিতেছেন। ভারতীয় দলের প্রাক্তন সদস্য মান্তু বলেছেন, ‘‘ভারতীদির প্রয়াণ ক্রীড়াজগতের অপূরণীয় ক্ষতি। ভারতীদির সব কিছুই ছিল তাঁর ছাত্রছাত্রীরা। আমার অভিভাবক ছিল। টেবিল টেনিস ছাড়া কিছু বুঝত না।’’ শোক প্রকাশ করে শিলিগুড়ি মেয়র বলেছেন, ‘‘খুব খারাপ লাগছে। সুস্থ করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু বার্ধক্যজনিত অনেক সমস্যা ছিল। কয়েক দিন আগে দেখা করে এসেছিলাম। খেতে চাইছিলেন না। আন্তজার্তিক স্তরে সফল একাধিক খেলোয়াড় তাঁর হাতে তৈরি। তাঁর কাছে প্রশিক্ষিণ নেওয়া একাধিক খেলোয়াড় প্যারালিম্পিক্সে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছে। শেষ দিকে মূলত প্রতিবন্ধীদেরই প্রশিক্ষণ দিতেন। কেন্দ্রীয় সরকার ভারতীদিকে কোনও সম্মান দেয়নি। দেওয়া উচিত ছিল।’’