আইসিসি অ্যাকাডেমি গ্রাউন্ডের থেকে দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের দূরত্ব বেশি নয়। তিন মাস আগে বড়দের এশিয়া কাপে সেই মাঠেই তিন বার হয়েছিল ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ। পহেলগাঁওকাণ্ড এবং অপারেশন সিন্দুরের প্রেক্ষাপটে দু’দলের ম্যাচে হয়েছিল একাধিক বিতর্ক। যুব এশিয়া কাপে প্রথম ম্যাচে এত বিতর্ক না হলেও সেখানে দু’দল হাত মেলায়নি। রবিবারও তার ব্যতিক্রম হবে বলে মনে হয় না।
বিতর্কের আরও সম্ভাবনা আছে। বড়দের প্রতিযোগিতায় এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের সভাপতি মহসিন নকভির ট্রফি তুলে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান এবং সে দেশের মন্ত্রী বলে ভারতীয় দল তাঁর থেকে ট্রফি নেয়নি। সেই নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছিল। ছোটদের প্রতিযোগিতায় পুরস্কার বিতরণের মঞ্চে কে থাকবেন, জানা যায়নি। নকভি বা পাক বোর্ডের কেউ থাকলে এবং ভারত চ্যাম্পিয়ন হলে বৈভব সূর্যবংশীরা তাঁর থেকে ট্রফি নেবে কি না, সন্দেহ থেকে যাচ্ছে।
দীর্ঘ দিন ধরেই এই ম্যাচে লড়াই হয় ভারতের ব্যাটিং বনাম পাকিস্তানের বোলিংয়ের। যুবদের ম্যাচেও সেই জিনিসই দেখার সম্ভাবনা। বৈভব সূর্যবংশী, অভিজ্ঞান কুণ্ডুরা কী ভাবে আলি রাজ়া, মহম্মদ সায়ামদের খেলেন, সে দিকে নজর থাকবে। প্রথম ম্যাচে বিশেষ দাগ কাটতে পারেননি পাকিস্তানের বোলারেরা। তাঁরা নিশ্চিত ভাবেই শিক্ষা নিয়ে নামবেন।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ সামনেই। তার আগে আরও এক বার নিজেদের শক্তি দেখাতে মরিয়া থাকবে ভারত। গত কয়েক দশকে অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে বহু ক্রিকেটার উঠে এসে তারকা হয়েছেন। এই পর্যায়ে ভাল খেলতে পারলে পরবর্তী দিনে সিনিয়র দলে নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অভিজ্ঞানেরা সেই সুযোগ নিতে মরিয়া হয়ে থাকবেন।
আমিরশাহির বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে ১৭১ করে ঝড় তুলেছিল বৈভব। পরের ম্যাচে দ্বিশতরান করেন অভিজ্ঞান। এ ছাড়া টপ অর্ডার বিশেষ সাফল্য পায়নি। ঘরোয়া ক্রিকেটে ফর্মে থাকলেও অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে এখনও রান পাননি আয়ুষ। কোনও ম্যাচেই ভাল খেলতে পারেননি। তবে প্রতি বারই মিডল অর্ডার রুখে দাঁড়িয়ে ভাল খেলে দিয়েছে।
মিডল অর্ডারে সকলের আগে রয়েছেন অ্যারন জর্জ। হায়দরাবাদের ক্রিকেটার টানা তিনটি ম্যাচে অর্ধশতরান করে দলকে জিততে সাহায্য করেছেন। মাঝের দিকের ওভারে কঠিন পরিস্থিতিতে ব্যাট করেও স্ট্রাইক রেট ১০০-র উপর রেখেছেন। সঙ্গে রয়েছেন বিহান মলহোত্র। সম্প্রতি আইপিএলে দল পেয়েছেন। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে বিহানের অপরাজিত ৬১ রান দলকে জিতিয়েছে।
এর পরেও যদি কাউকে দরকার হয়, তা হলে কণিষ্ক চৌহান রয়েছেন। তিনি ম্যাচ শেষ করে আসতে পারেন। এশিয়া কাপে ছ’উইকেট নিয়ে অলরাউন্ডারের দায়িত্বও পালন করছেন। বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল ফর্মে রয়েছেন দীপেশ দেবেন্দ্রন। তিনি ১১টি উইকেট নিয়ে প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। পাকিস্তানের আবদুল সুভানেরও ১১টি উইকেট রয়েছে। দীপেশ নতুন বলে একটানা ১৩০-এর বেশি গতিতে বল করতে পারেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গ্রুপের ম্যাচে বিপক্ষের টপ অর্ডারকে একাই সাজঘরে ফিরিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন:
অন্য দিকে, পাকিস্তান দলে সুভান ছাড়াও রাজ়া এবং সায়াম রয়েছেন। লম্বা চেহারার রাজ়ার বলে যেমন গতি রয়েছে, তেমনই সুইংও আছে। তিনি ভারতের টপ অর্ডারকে পরীক্ষায় ফেলতে পারেন। বাঁ হাতি পেসার সায়াম আগুনে গতিতে বল করেন। ডান হাতি ব্যাটারদের ক্ষেত্রে তাঁর ইন সুইং খুবই কার্যকরী। গ্রুপে ভারতের বিরুদ্ধে দু’জনেই ছাপ ফেলতে পারেননি। গতির দিকে নজর দিয়েছিলেন বেশি। ভারতীয়েরা তা কাজে লাগিয়ে বল বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়েছিলেন। স্পিন বিভাগে নিকাব শফিক রয়েছে। আহমেদ হুসেনের বলেও বৈচিত্র রয়েছে।
ব্যাটিংই পাকিস্তানের আসল চিন্তা। সমীহ মিনহাস ফর্মে থাকলেও, ফাইনালে ব্যর্থ হলে কী হবে তা কারও জানা নেই। উসমান খান, আলি হাসান বোলাচ এবং অধিনায়ক ফারহান ইউসাফ, সকলকে নিয়েই চিন্তা রয়েছে।