Advertisement
E-Paper

‘বেঙ্গালুরু দেখিয়ে দিল পেশাদারদেরই জয়’

এ দিন দশ জন হয়ে যাওয়ার পরেও অবশ্য আশা ছিল ইস্টবেঙ্গল জিতবে। কারণ, সেমিফাইনালে দশ জনে খেলেই তো মোহনবাগানকে হারিয়েছিল বেঙ্গালুরু।

শিশির ঘোষ

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:৫৪
উৎসব: ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে সুপার কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ট্রফি নিয়ে উচ্ছ্বাস বেঙ্গালুরু ফুটবলারদের। নিজস্ব চিত্র

উৎসব: ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে সুপার কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ট্রফি নিয়ে উচ্ছ্বাস বেঙ্গালুরু ফুটবলারদের। নিজস্ব চিত্র

বেঙ্গালুরু এফ সি-কে সুপার কাপ উপহার দিল ইস্টবেঙ্গল!

আনসুমানা ক্রোমার অসাধারণ ব্যাকভলিতে ২৮ মিনিটে ইস্টবেঙ্গল এগিয়ে যাওয়ার পরে ভেবেছিলাম, সুপার কাপ বাংলাতেই আসছে। কিন্তু সামাদ আলি মল্লিকের একটা ভুল সব শেষ করে দিল। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ঠিক আগে অকারণে বেঙ্গালুরু ডিফেন্ডার শুভাশিস বসুর মুখে মেরে লাল কার্ড দেখে বেরিয়ে গেলেন সামাদ। ম্যাচটা তখনই শেষ হয়ে গেল। কারণ, নিকোলাস সুনীল ছেত্রী, ফেদর ফ্লোরেস (মিকু), উদান্ত সিংহদের বিরুদ্ধে দশ জনে খেলা আত্মহত্যারই সামিল। ভাবছিলাম, মোহনবাগানের মতোই হাল হবে না তো মহম্মদ আল আমনাদের। শেষ পর্যন্ত আমার আশঙ্কাই সত্যি হল।

সামাদকে রেফারি শ্রীকৃষ্ণের লাল কার্ড দেখানোর সিদ্ধান্তে কোনও ভুল নেই। কিন্তু বেঙ্গালুরুর গোলরক্ষক গুরপ্রীত সিংহকে কেন লাল কার্ড দেখালেন না রেফারি? সাত মিনিটে বক্সের বাইরে বেরিয়ে ক্রোমার হাতে পা তুলে দিয়েছিলেন গুরপ্রীত। নিশ্চিত লাল কার্ড। অথচ রেফারি আশ্চর্যজনক ভাবে শুধু হলুদ কার্ড দেখালেন। ওই সময় বেঙ্গালুরু দশ জন হয়ে গেলে হয়তো ম্যাচটা অন্য রকম ভাবে লিখতে হত। ফুটবলাররা অন্যায় করলে শাস্তি পান। রেফারিরা কেন ছাড় পাবেন? বাংলার দলগুলো রেফারির জন্যই বার বার ভুগছে। এ রকম চলতে থাকলে ভবিষ্যতে সর্বভারতীয় স্তরে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান কোনও ট্রফি জিতবে বলে মনে হয় না।

এ দিন দশ জন হয়ে যাওয়ার পরেও অবশ্য আশা ছিল ইস্টবেঙ্গল জিতবে। কারণ, সেমিফাইনালে দশ জনে খেলেই তো মোহনবাগানকে হারিয়েছিল বেঙ্গালুরু। কিন্তু দু’দলের গুণগত মানের পার্থক্য এতটাই বেশি যে, বেঙ্গালুরুর সঙ্গে ইস্টবেঙ্গলের কোনও তুলনা করা যায় না। কেন এই মুহূর্তে ভারতের সেরা দল বেঙ্গালুরু তা আরও এক বার প্রমাণ হয়ে গেল সুপার কাপে। যে কোনও পরিস্থিতির সঙ্গেই সুনীলরা লড়াই করার জন্য তৈরি। চ্যাম্পিয়ন দলের ফুটবলারদের মানসিকতা এ রকমই হওয়া উচিত।

ইস্টবেঙ্গল অবশ্য ম্যাচটা দুর্দান্ত শুরু করেছিল। আমনা ও কেভিন লোবো আক্রমণে ঝড় তুলছিলেন। ইস্টবেঙ্গল এগিয়েও গিয়েছিল ক্রোমার গোলে। একটা দল যখন এ রকম খেলে, তখন প্রতিপক্ষ স্বাভাবিক ভাবেই চাপে পড়ে রক্ষণাত্মক রণনীতি নেয়। ব্যতিক্রম বেঙ্গালুরু। মিকুরা নিজেদের মধ্যে পাস খেলেই ইস্টবেঙ্গলের ছন্দ নষ্ট করে দিয়েছিলেন। ওঁরা জানতেন, আরও একটা গোল খেলে ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব। তাই রক্ষণ সামলে ধীরে ধীরে ম্যাচটা নিজেদের মধ্যে যথাসম্ভব বেশি পাস খেলে ঘুরে দাঁড়াল বেঙ্গালুরু। পেনাল্টি বক্সের ভিতর থেকে হেডে গোল করলেন রাহুল ভেকে। ওঁকে আটকানোর চেষ্টাই করলেন না ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্ডাররা!

দ্বিতীয়ার্ধেও শুরুটা ভাল করেছিল ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু হঠাৎই লোবোকে কেন তুলে নিলেন টেকনিক্যাল ডিরেক্টর (টিডি) সুভাষ ভৌমিক ও কোচ খালিদ জামিল, বোধগম্য হল না। মাঝমাঠে লোবো-আমনাই খেলছিলেন। লোবোকে বসিয়ে নামান হল ডিফেন্ডার দীপক কুমারকে! ইস্টবেঙ্গলের টিডি ও কোচ হয়তো মনে করেছিলেন, নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ ড্র রেখে টাইব্রেকারে নিয়ে যাবেন। আত্মঘাতী পরিকল্পনা। যে দলে মিকু-সুনীলের মতো ফুটবলার রয়েছেন, তাদের এ ভাবে আটকানো যায় না। ইস্টবেঙ্গলের উচিত ছিল লোবোকে মাঠে রেখে প্রতি আক্রমণে গোলের জন্য ঝাঁপানো। পাশাপাশি মিকু ও সুনীলের ছন্দ নষ্ট করে দেওয়া। হল তার ঠিক উল্টো। লোবো না থাকায় খোলা মনে খেলতে শুরু করলেন ওঁরা। সেই চাপ সামলাতে না পেরে বক্সের মধ্যে বলে হেড না করে হাত লাগালেন ইস্টবেঙ্গলের আর এক ডিফেন্ডার গুরবিন্দর সিংহ। সামাদের চেয়ে ওঁর অপরাধ কোনও অংশে কম নয়। ৬৯ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করলেন সুনীল। ঠিক দু’মিনিট পরে গোল মিকুর। সৌজন্যে এদুয়ার্দো ফেরিরা! লাল-হলুদ ডিফেন্ডারকে কোমরের দোলায় ছিটকে দিয়ে জালে বল জড়িয়ে দেন মিকু। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে সুনীলের দ্বিতীয় গোলও ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের ভুলে। রাইটব্যাক লালরাম চুলোভা জানেনই না দু’প্রান্ত থেকে বল উড়ে এলে কী ভাবে দাঁড়াতে হয়। সুনীল কখন পিছন থেকে উঠে এসেছেন, দেখতেই পাননি। ডিফেন্ডারের কাজ হচ্ছে, একই সঙ্গে বল ও প্রতিপক্ষের ফুটবলারদের দিকে নজর রাখা। চুলোভার নজর ছিল শুধু বলের দিকে। সুনীল কার্যত বিনাবাধায় হেডে গোল করে গেলেন। বেঙ্গালুরু দলটা অনেক বেশি পেশাদার। বিদেশি ফুটবলার নির্বাচন থেকে উৎসবের ভঙ্গি— সর্বত্রই পরিকল্পনার ছাপ। ম্যাচ শেষ হওয়ার পরে সুনীলরা এগিয়ে গেলেন গ্যালারির দিকে। এত দিন যে ছবি আমরা দেখে এসেছি বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের মাঠে।

কলকাতার দুই প্রধানে পেশাদারিত্ব বলে কিছুই নেই। যদি থাকত, তা হলে ডুডু ওমাগবেমিকে এই ম্যাচে আঠারো জনের তালিকাতেই রাখা হত না। চোটের অজুহাত দিয়ে যা করলেন লাল-হলুদ স্ট্রাইকার, তা এক কথায় অমার্জনীয় অপরাধ। পল্টুদা (প্রয়াত ইস্টবেঙ্গল কর্তা দীপক দাস) বেঁচে থাকলে ডুডুকে ট্রেনের সাধারণ কামরায় কলকাতায় ফেরত পাঠাতেন। তা ছাড়া ইস্টবেঙ্গল তো ম্যাচের আগেই মানসিক ভাবে হেরে বসেছিল। যে দলে টিডি ও কোচের মধ্যেই সংঘাত চলছে, তারা কী করে জিতবে? লাল-হলুদ সমর্থকদের হয়তো খারাপ লাগবে কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি, ইস্টবেঙ্গল যে সুপার কাপের ফাইনালে উঠেছিল সেটাই অনেক!

Super Cup Bengaluru FC JSW Sunil Chhetri Football
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy