বছরে চার বার গ্র্যান্ড স্ল্যাম আসে। কিন্তু তার জন্য এক-এক রকম সারফেসে এক-এক রকম প্রস্তুতির দরকার পড়ে। প্লেয়ারদের চূড়ান্ত রকমের সহনশীলতা দাবি করে। লাগাতার দু’সপ্তাহ নিজেকে সুপার কন্ডিশনে রাখতে হয়।
প্রায়শই টুর্নামেন্টের সিংহভাগ সময়ে ভাল ফর্মে দেখানো প্লেয়ারের ভেতর মোক্ষম সময়ে দমের ঘাটতি দেখা যায়। আর সে তখন নিজের তুলনায় গ্র্যান্ড স্ল্যামে বেশি সফল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মুখ থুবড়ে পড়ে।
নোভাক জকোভিচের বিরুদ্ধে উইম্বলডন সেমিফাইনালে খুব সম্ভবত সেটাই ঘটেছে রিচার্ড গাস্কের কপালে। অল ইংল্যান্ডের দর্শকদের ওর অনবদ্য এক হাতে মারা ব্যাকহ্যান্ডে মোহিত করে দেওয়া এই ফরাসিকে দ্বিতীয় সেটের শেষের দিক থেকে যেন কেমন ম্লান হয়ে পড়তে দেখলাম। নোভাক সে জন্য স্রেফ সঠিক সময়টায় বিপক্ষের উপর চাপ তৈরি করে একটা সহজ স্ট্রেট সেট জয়ের মাধ্যমে ফাইনালে উঠে গেল। যেটা ওর খেতাব অটুট রাখার অন্তিম যুদ্ধক্ষেত্র এখন।
তবে আশা করব উইম্বলডনে গাস্কের চমৎকার অভিযান আর ওয়ারিঙ্কার বর্তমান ফর্ম সর্বত্র টেনিস কোচেদের বোধোদয় ঘটাবে যে, আধুনিক যুগেও প্লেয়ারদের বন্দুকে ওয়ান হ্যান্ডেড ব্যাকহ্যান্ড একটা মারণ-গুলি হতে পারে। ওদের দু’জনের মধ্যে কোয়ার্টার ফাইনাল লড়াইয়ে মুহুর্মুহু এই শটটা দেখে আমি চমৎকৃত। আশা করি এ বার থেকে সার্কিটে এই শটটা আরও বেশি করে দেখতে পাব।
যদিও আপাতত আমাদের কাছে টেনিসের সবচেয়ে বড় শো— সাত বারের উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন রজার ফেডেরারের এমন এক জনের চ্যালেঞ্জ নেওয়া, যে গত বারই ফাইনালে ওকে হারিয়েছে।
আজকের ম্যাচটাকে আরও একটা তকমা দেওয়া যায়— সবচেয়ে ধারাবাহিক সার্ভ ভার্সাস সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রিটার্ন! ফেডেরার অবিশ্বাস্য রকমের নিখুঁত আর বৈচিত্রে ভরা সার্ভিস করছে এখন। গোটা টুর্নামেন্টে এখনও পর্যন্ত ওকে এক বার ব্রেক করাকেই যথেষ্ট মনে হচ্ছে। ব্যাপারটা ওকে যেমন কিছু বাড়তি পয়েন্ট দিচ্ছে, তেমনই বেশি সংখ্যক লম্বা পয়েন্ট খেলার হাত থেকেও রেহাই পাওয়ার সুযোগ দিচ্ছে।
আমার মতে ঘাসের কোর্টে সর্বকালের সেরা স্বাভাবিক টেনিসটা সুইস মহাতারকাই খেলে। গ্রাস কোর্টে ফেডেরারের মুভমেন্ট অতুলনীয়। এবং এটা বেশি করে প্রচারে এসেছে সেই জমানায় যখন গ্রাস কোর্ট প্লেয়ারের সংখ্যা কম। তাৎপর্যের এটাই যে, এ বারের টুর্নামেন্টে ফেডেরার যে একটাই মাত্র সেট খুইয়েছে সেটা স্যাম গ্রসের কাছে। যার হাতেও বিগ সার্ভ আর ভলি আছে। বাকিদের মধ্যে খুব কম প্লেয়ারই ছিল যাদের ফেডেরারকে গেমপ্ল্যান পাল্টাতে বাধ্য করার ক্ষমতা রয়েছে।
সবচেয়ে বিস্ময়কর অ্যান্ডি মারে। এত ভাল সার্ভিস রিটার্ন ওর। কিন্তু শুক্রবার ফেডেরারের বিরুদ্ধে ওকে স্রেফ জলে পড়া অবস্থায় দেখাল! বিপক্ষের বারবার নেটে আসার পরিকল্পনাকে বরং সাহায্যই করে গেল মারে। স্থানীয় মহানায়ক ওর বিখ্যাত পাসিং শটগুলো ফেডেরারের পাশ দিয়ে পাঠাতে ব্যর্থ। ব্যর্থ নিজের গেমপ্ল্যান দেখাতেও। অ্যান্ডির কোচিং টিমের ভেতরের খবর আমার জানা নেই। তবে তাদের পরিকল্পনাগুলো হয় খুব স্পষ্ট ছিল না, কিংবা সেগুলো ঠিকঠাক কাজে লাগেনি।
ফেডেরার বলতে গেলে কোনও ভুলই করেনি। তবে সেটা তাকে মারে করতে দেয়নি বলেই। বিপক্ষকে নিজের ইচ্ছেমতো খেলার সুযোগ করে দিয়েছে মারে।
নোভাকের সামনে আরেকটা উইম্বলডন ফাইনাল। কিন্তু ওর কোচ হিসেবে আমি যথেষ্ট ঠান্ডা আর আত্মবিশ্বাসী রয়েছি। ফেডেরারের বিরুদ্ধে খেলাটা ও উপভোগ করে। এবং ওদের দু’জনের লড়াই দুজনেরই সেরাটা বার করে আনে।
প্যারিসে আমি একটু চাপে ছিলাম। কিন্তু এখানে আমি বেশ ভালই আত্মবিশ্বাস পাচ্ছি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy