Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আজ কোরিয়ার রক্ষণাত্মক ছকই চিন্তা ব্রাজিলের

উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে সোমবার সন্ধ্যায় কোচির মহারাজা কলেজের মাঠে প্রস্তুতি শেষ করে বিসন্ন কার্লোস বলছিলেন, ‘‘ব্রাজিলের ফুটবলের সংস্কৃতিটাই নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে।

কোরিয়ার বিরুদ্ধে জিততে মরিয়া ব্রাজিল দল।

কোরিয়ার বিরুদ্ধে জিততে মরিয়া ব্রাজিল দল।

শুভজিৎ মজুমদার
কোচি শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৫৩
Share: Save:

তিন বছর আগে বিশ্বকাপ ফুটবল। গত বছর অলিম্পিক্সের আয়োজন— নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল ব্রাজিলবাসী। যদিও সেই স্বপ্ন ভেঙে যেতে সময় লাগেনি

ক্রমাগত বেড়ে চলা হিংসাত্বক ঘটনা, অস্থিরতায় ফুটবলের আঁতুর ঘরেই ব্রাত্য ফুটবল!

পেলে, গ্যারিঞ্চা, রোমারিও, রোনাল্ডো থেকে দানি আলভেজ, নেমার দ্য সিলভা স্যান্টোস (জুনিয়র)— প্রত্যেকেই উঠে এসেছেন রাস্তায় ফুটবল খেলে। দারিদ্র ভুলতে ফুটবলই যে ছিল ব্রাজীলবাসীর একমাত্র অস্ত্র। আশ্রয়ও। কোচেরা রাস্তা থেকেই রত্ন খুঁজে আনতেন। অথচ গত কয়েক বছরে ব্রাজিলে অ্যাকাডেমির সংখ্যা বাড়লেও প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছে রাস্তায় ফুটবল। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নের মধ্যেও যা যন্ত্রণা দিচ্ছে ব্রাজিল কোচ কার্লোস আমাদেউ-কে।

উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে সোমবার সন্ধ্যায় কোচির মহারাজা কলেজের মাঠে প্রস্তুতি শেষ করে বিসন্ন কার্লোস বলছিলেন, ‘‘ব্রাজিলের ফুটবলের সংস্কৃতিটাই নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে। হিংসাত্বক ঘটনা এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, রাস্তায় খেলা প্রায় বন্ধ। অথচ বরাবরই রাস্তার ফুটবলই হচ্ছে ব্রাজিলের আঁতুর ঘর। পরিস্থিতি এতটাই জটিল, আতঙ্কে কোনও অভিভাবকই সন্তানদের রাস্তায় খেলতে দিতে চান না। অধিকাংশ শিশুই এখন বাড়িতে বসে ভিডিও গেম খেলে।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘দারিদ্রের কারণে অল্প বয়স থেকেই অনেকে জড়িয়ে পড়ছে অপরাধমূলক কাজে। বাড়ছে নেশার প্রতি আসক্তিও। পরিস্থিতি যদি না বদলায়, তা হলে ভবিষ্যতে বিশ্ব শাসন করার মতো ফুটবলার কিন্তু ব্রাজিল থেকে উঠে আসা কঠিন।’’ কার্লোসের কথা যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে পনেরো বছর আগে তৈরি ফের্নান্দো মিয়েরিলেসের ‘সিটি অফ গড’ চলচ্চিত্র।

ব্রাজিলের সামাজিক অবক্ষয়ের মতোই কার্লোস উদ্বিগ্ন মঙ্গলবারের প্রতিপক্ষ উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে। নিজারের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচেও উত্তর কোরিয়া রক্ষণাত্মক স্ট্র্যাটেজি নিয়ে নেমেছিল। এ বার তো সামনে ব্রাজিল। বিশ্ব ফুটবলের সেরা শক্তিকে আটকানোর জন্য আরও মরিয়া হয়ে ঝাঁপাবে কিম জং উন-এর ছেলেরা। ঠিক যে রকম হয়েছিল ইংল্যান্ডে ১৯৬৬-র বিশ্বকাপে!

আরও পড়ুন: গোল করার উচ্ছ্বাসেই দ্বিতীয় গোল হজম: মাতোস

মিডলসব্রো-তে গ্রুপ লিগের ম্যাচে ইতালিকে হারিয়ে অঘটন ঘটিয়েছিল উত্তর কোরিয়া। প্রতিপক্ষের রক্ষণাত্মক স্ট্র্যাটেজি ও ফুটবলারদের বিরুদ্ধে শারীরীক যুদ্ধে এঁটে উঠতে না পারে ছন্দ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল ইতালির। বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম অঘটনের ম্যাচ হিসেবে স্মরণীয় হয়ে রয়েছে এই ম্যাচ। স্মরণীয় ঘটনা উত্তর কোরিয়ার ফুটবল ইতিহাসেও। ইতালিকে হারিয়ে প্রথম ও শেষ বার তারা পৌঁছতে পেরেছিল বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে।

কোচির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামেও যে আজ, মঙ্গলবার উত্তর কোরিয়া একই রকম ভাবে তাঁদের অভ্যর্থনা জানাতে তৈরি তা খুব ভালই জানেন ব্রাজিল কোচ। তাই ম্যাচের আগের দিন অনুশীলনের পদ্ধতিও বদলে দিলেন।

ক্রিকেট মাঠে যে রকম থার্টি ‘ইয়ার্ডস সার্কেল’ থাকে, সাদা স্ট্র্যাপ দিয়ে ঠিক সে রকমই একটা বৃত্ত এ দিন তৈরি করেছিলেন কার্লোস। বৃত্তের মধ্যে দাঁড়ানো ফুটবলাররা সকলে ডিফেন্ডার। তাদের কাজ হচ্ছে, মিডফিল্ডার ও স্ট্রাইকারদের বল নিয়ে বৃত্তের মধ্যে ঢুকতে না দেওয়া। অনুশীলনের অধিকাংশ সময় এই মহড়াই চলল। কারণ, উত্তর কোরিয়ার ফুটবলাররা এ ভাবেই যে চক্রব্যূহ রচনা করবে।

অভিনব এই অনুশীলের পরে চলল ফ্রি-কিক ও পেনাল্টি প্র্যাকটিস। কেন? নিজারের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে উত্তর কোরিয়ার ফুটবলাররা পাঁচটি ফাউল করেছিল। ব্রাজিলের বিরুদ্ধে সেই সংখ্যাটা যে আরও বাড়বে তা খুব ভালই জানেন কার্লোস। তাই ফ্রি-কিক ও পেনাল্টি থেকে গোল করার অনুশীলন করালেন। ব্রাজিল কোচের কথায়, ‘‘উত্তর কোরিয়া শক্তিশালী দল। আমরা ওদের ম্যাচের ভিডিও দেখেছি। আমাদের আটকাতে হয়তো ফাউলও করবে। তখন ফ্রি-কিক বা পেনাল্টি থেকে গোল করতে হবে। সব রকম পরিস্থিতির জন্যই তো তৈরি থাকবে হবে।’’

ব্রাজিল বনাম উত্তর কোরিয়া (রাত ৮টা)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE