ইংল্যান্ডের বিশ্ব জয়ের নায়ক ব্রিউস্টার। ছবি: এএফপি।
ম্যাচ শেষে ফোডেনকে জড়িয়ে চোখের জলে ভিজছিল ব্রিউস্টার। কাঁদছিল হাউ হাউ করে। কথা বলতে গিয়েও বার বার ধরে আসছিল গলা। হয়তো নিজেকে ফিরে পাওয়ার আবেগটা আটকাতে পারছিল না ১৭ বছরের ফরোয়ার্ড।
খারাপ সময় কাটিয়ে সপ্তম স্বর্গে পৌঁছে যাওয়া এই ছেলেটা ইংল্যান্ডকে দেখিয়ে দিল ভবিষ্যতের স্বপ্ন। নিজের ফেলে আসা ব্যর্থতার স্মৃতির উপরই সাফল্যের কাহিনি লিখে গেল রিয়ান ব্রিউস্টার।
পাঁচ মাস আগের একটা দিন জীবন বদলে দিয়েছিল ব্রিউস্টারের। ভিলেন হয়ে গিয়েছিল ছেলেটা। বড় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখা সেই ছেলে ভাগ্যিস সে দিন হাল ছেড়ে দেয়নি। হতাশায় ডুবে ফুটবল থেকে ছিটকে যায়নি। তা হলে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ কী করে নতুন চ্যাম্পিয়ন পেত?
খেলা শেষে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিচ্ছিলেন ইংল্যান্ড কোচ স্টিভ কুপার। মনে মনে হয়তো সেই একই কাজ করছিল ব্রিউস্টারও। সে হয়তো ধন্যবাদ দিচ্ছিল স্যাঞ্চোকে। স্যাঞ্চোর মঞ্চেই তো সাফল্যের ঝান্ডা উড়িয়ে গেল এই ফরোয়ার্ড।
গ্রুপ লিগে এক বারও উঠে আসেনি ব্রিউস্টারের নাম। তখন কলকাতা জুড়ে শুধুই স্যাঞ্চো। ইংল্যান্ড দলের মধ্যমণিই ছিল জেডন স্যাঞ্চো। কিন্তু ক্লাবের ডাকে জাতীয় দল ছেড়ে ফিরে যেতে হয়েছিল মাঝপথে। স্যাঞ্চো ফিরতেই সেই জায়গা যে এ ভাবে নিয়ে নেবে লিভারপুল এফসির এই ফুটবলার, তা কে জানত। টুর্নামেন্ট শেষে ব্রিউস্টারই এই বিশ্বকাপের নায়ক, সর্বোচ্চ গোলদাতা। জোড়া হ্যাটট্রিক-সহ ৮ গোল নিয়ে দেশে ফিরছে সোনার ছেলে।
আরও পড়ুন: নয়া চ্যাম্পিয়ন ইংরেজদের ছন্দে পা মেলাল কলকাতা
আরও পড়ুন: হেরেও চ্যাম্পিয়ন ভারত, দর্শকে বিশ্বরেকর্ড
পাঁচ মাস আগের একটা দিন এই সবটারই উল্টো ছবি ছিল ইংল্যান্ড শিবিরে। সে দিনও সামনে ছিল সেই স্পেন। আজ আর সেই ফেলে আসা দিন নিয়ে ভাবতে নারাজ। গোল্ডেন বুট হাতে জানিয়ে দিল ব্রিউস্টার, “ওটা অতীত। খারাপ সময় ছিল।’’ শুধু কী তাই? এই যে ২ গোলে পিছিয়ে পড়াটা! এখান থেকে এ ভাবে ফেরার কথা কি স্বপ্নেও ভেবেছিল দল? ব্রিউস্টারের উত্তর কিন্তু তৈরিই। মাঠের মধ্যে তখনও দৌড়ে চলেছে পুরো ইংল্যান্ড দল। মাঝে মাঝে পা মিলিয়েই আবার সাংবাদিকদের সামনে। ‘‘বিশ্বাস ছিল আমরা ঘুরে দাঁড়াব।’’ হয়তো ফিরে আসা একেই বলে।
অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ ফাইনালে স্পেনের বিপক্ষে গোল করছেন ব্রিউস্টার। ছবি: পিটিআই।
স্পেন যখন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির আশায়, তখনই তাতে জল ঢালল ইংল্যান্ড। ২৮ অক্টোবর যুবভারতীতে দাঁড়িয়ে ১৯ মে-র ভারাজদিনের কথা ব্রিউস্টারের মনে পড়েনি। অনূর্ধ্ব-১৭ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের নির্ধারিত সময় শেষ হয়েছিল ২-২ গোলে। সরাসরি টাইব্রেকারে ইংল্যান্ডের হয়ে প্রথম গোল বারলোর। দ্বিতীয় শট নিতে এসেছিল ব্রিউস্টার। কিন্তু তা সে গোলে রাখতে পারেনি। দুটো শট মিস করে এই স্পেনের কাছেই হেরে যেতে হয়েছিল ইংল্যান্ডকে। ভিলেন হয়ে গিয়েছিল ব্রিউস্টার। ইউরো থেকে বিশ্বকাপ। ভিলেন থেকে একজনকে নায়ক হয়ে উঠতে দেখল ফুটবল বিশ্ব। দেখল, আবেগে ভেসে যাওয়া ফুটবলের সঙ্গে এক বিশ্বমানের ফুটবল যুদ্ধ। যা উপহার দিল স্পেন-ইংল্যান্ড। কেউ হারল কেউ জিতল আর সেই মঞ্চেই জন্ম নিল নতুন তারকা। ঠিক যে ভাবে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ডার্বির মঞ্চ প্রতিবার নতুন তারকার জন্ম দেয়। একই ভাবে বিশ্ব ফুটবলে তারকার জন্ম দেয় বিশ্বকাপ। অনূর্ধ্ব-১৭ তেও তার ব্যতিক্রম হল না। জন্ম হল ব্রিউস্টার নামের এক ব্রিটিশ তারকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy