ফুটবলের গায়ে লেগে গেল যৌন হেনস্থার ছোপ। তাও আবার শিশু যৌন নিগ্রহ। এবং একটা, দুটো নয় সব মিলিয়ে প্রায় আড়াইশোটি অভিযোগ। ব্রিটিশ পুলিশ জানিয়েছে, এ যাবৎ পর্যন্ত জমা পড়া এই ২৫০টি অভিযোগের প্রত্যেকটি কোনও না কোনও ফুটবলারের করা। অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছেন ফুটবল কোচ থেকে শুরু করে সাপোর্ট স্টাফদের নাম। ব্রিটিশ ফুটবলের ইতিহাসে এত বড় কেচ্ছা কার্যত নজিরবিহীন।
যৌন নিগ্রহের শিকার যাঁরা হয়েছেন তাঁদের মধ্যে ২০ জন প্রাক্তন ফুটবলারও আছেন। লজ্জায়, ভয়ে এত দিন বলতে পারেননি কিছু। কিন্তু, এখন এক এক করে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। নাবালকদের যৌন নিগ্রহের ঘটনায় জড়িয়ে গিয়েছে অনেক ক্লাবের নাম। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ক্লাবের ইউথ ডেভলপমেন্ট বিভাগের কোচ থেকে সাপোর্ট স্টাফদের নাম উঠে আসছে এই ঘটনায়। গত দু’সপ্তাহে এই অভিযোগ জানানোর বহর বেড়ে যাওয়ায় রীতিমতো নড়েচড়ে বসেছে ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। তদন্ত শুরু করেছে চেলসির মতো ক্লাবও। আশ্চর্যজনক ভাবে ১৯৭০ সালের এক কর্মচারীর নামও উঠে এসেছে অভিযুক্তের তালিকায়। যিনি এখন আর জীবিতই নেই। ইংল্যান্ড ফুটবলের এই ঘটনায় ফিফাও রীতিমতো স্তম্ভিত। যদিও ফিফার তরফে বলা হয়েছে, শুধু ব্রিটেন নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এই ঘটনা ঘটে চলেছে। তারা সেই সব দেশের ফুটবলারদের ‘মনোস্তাত্ত্বিক সমর্থন’ দিতে প্রস্তুত।
এ রকম ঘটনার অভিযোগ জানাতে ইংল্যান্ডে চালু করা হয়েছে হট লাইন। ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। বিশেষ করে নজরে রাখা হচ্ছে নয়ের দশকের কোচদের। এর মধ্যেই সরাসরি উঠে এসেছে প্রাক্তন ম্যানচেস্টার সিটির যুব কোচ ব্যারি বেনেলের নাম। তাঁর নামে অভিযোগ এনেছেন এক যুব ফুটবলার। অতীতেও এই কারণে তিন বছর জেল খাটতে হয়েছিল বেনেলকে। ৬২ বছরের বেনেলের নামে এখনও পর্যন্ত আটটি মামলা দায়ের হয়েছে যৌন নিগ্রহের। যারা অভিযোগ জানিয়েছে তারা সকলেই অনূ্র্ধ্ব-১৪ ফুটবলার। আগামী ১৪ ডিসেম্বর আদালতে হাজিরা দিতে হবে বেনেলকে। এফএ-র চেয়ারম্যান গ্রেগ ক্লার্ক এই ঘটনাকে, ‘গ্রেট ক্রাইসিস’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
প্রাক্তন নিউ ক্যাসেল প্লেয়ার ডেরেক বেল এই খবরে স্তম্ভিত। তাঁর মতে, এটা একটা অবিশ্বাস্য ঘটনা। প্রাক্তন নর্দান আয়ারল্যান্ড প্লেয়ার মার্ক উইলিয়ামস নিজের অভিজ্ঞতার কথাই বলেছেন, ‘‘আমার জীবনে এই ঘটনার প্রভাব পড়েছিল। ব্যাক্তিগত ও পেশার জগতেও প্রভাব ফেলেছিল। ৩০ বছর ধরে বয়ে বেড়াচ্ছিলাম সেই যন্ত্রণা। আমাকে দু’বার ওর শিকার হতে হয়েছে। আমার বয়স তখন ১১। প্রথমে ম্যানচেস্টার সিটির যুব দলে আর পরে ক্রিউ আলেকজান্দ্রা এফসিতে। যেখানে ও আমার কোচ ছিল।’’
ব্রিটিশ সরকার ইতিমধ্যেই ঘোষণা করে দিয়েছে, এই নিয়ে পুলিশ ও এফএ-র সঙ্গে আলোচনা করে পরের পদক্ষেপ করা হবে। যদিও ক্লার্ক, নয়ের দশকে এফএ-র দায়িত্বে থাকা মানুষগুলোকেই এক হাত নিয়েছেন। ক্রীড়া মন্ত্রকের তরফে, প্রায় ৪০টি অ্যাসোসিয়েশনকে বলা হয়েছে অতীতে এমন কোনও অভিযোগ থাকলে সেটাও খতিয়ে দেখতে। এই মুহূর্তে এই ঘটনার তদন্তে নেমেছে আটটি পুলিশ ফোর্স।
আরও খবর
পাসপোর্ট ভুলে প্রাণে বাঁচলেন চাপেকোয়েনসে কোচের ছেলে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy