Advertisement
E-Paper

ছোটদের জোয়ারে ভেসে গেল বড়রা

গোটা স্টেডিয়াম ততক্ষণে জেনে গিয়েছে ইস্টবেঙ্গল মাঠে জোয়ারের জল ঢুকে ভেস্তে গিয়েছে এ দিনের ইস্টবেঙ্গল বনাম কাস্টমস ম্যাচ।

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৫:৩০
শেষ ম্যাাচেও করলেন জোড়া গোল। রবিবার বারাসত স্টেডিয়ামে নায়ক ক্রোমাকে কোলে নিয়ে উল্লাস পিয়ারলেস ফুটবলারদের। ছবি: সুদীপ ঘোষ

শেষ ম্যাাচেও করলেন জোড়া গোল। রবিবার বারাসত স্টেডিয়ামে নায়ক ক্রোমাকে কোলে নিয়ে উল্লাস পিয়ারলেস ফুটবলারদের। ছবি: সুদীপ ঘোষ

এ যেন শেষ হয়েও হইল না শেষ!

জর্জ টেলিগ্রাফকে শেষ ম্যাচে আনসুমানা ক্রোমার জোড়া গোলে ২-০ হারিয়েও লিগ জেতা সম্পূর্ণ হল না পিয়ারলেসের। রবিবার বিকেলে বারাসত স্টেডিয়ামে জর্জকে হারিয়ে ড্রাম বাজিয়ে যখন উৎসবে মেতেছেন ক্রোমা-অ্যান্টনি উলফ-দীপেন্দু দোয়ারিরা, আবেগহীন ভাবে দাঁড়িয়ে তা দেখছিলেন তাঁদের কোচ জহর দাস।

গোটা স্টেডিয়াম ততক্ষণে জেনে গিয়েছে ইস্টবেঙ্গল মাঠে জোয়ারের জল ঢুকে ভেস্তে গিয়েছে এ দিনের ইস্টবেঙ্গল বনাম কাস্টমস ম্যাচ। ফলে ১১ ম্যাচে ২৩ পয়েন্ট নিয়ে পিয়ারলেস শীর্ষে থেকে লিগ শেষ করলেও এখনও সরকারি ভাবে লিগ জয় হয়নি ক্রোমাদের। কারণ ইস্টবেঙ্গল তাদের শেষ ম্যাচে সাত গোলের ব্যবধানে জিতলে কলকাতা লিগ ঢুকবে লাল-হলুদ শিবিরে। কারণ, এ দিনের ম্যাচের পরে পিয়ারলেসের গোল পার্থক্য ১৩। ইস্টবেঙ্গলের ৭। ইস্টবেঙ্গল সাত গোলের ব্যবধানে জিততে না পারলে, দীর্ঘ ৬১ বছর পরে তিন প্রধানের বাইরে কলকাতা লিগ জিতে ইতিহাস তৈরি করবে পিয়ারলেস। ১৯৫৮ সালে ইস্টার্ন রেলের পরে কলকাতা ময়দানে যে কৃতিত্ব নেই কোনও দলের।

লিগ শীর্ষে থাকা পিয়ারলেস কোচ তাই বলেন, ‘‘উৎসব তোলা থাকছে। কাগজে-কলমে তো এখনও লিগ চ্যাম্পিয়ন হইনি।’’ যোগ করেন, ‘‘ফুটবল মাঠে তো অনেক কিছুই হয়। ইস্টবেঙ্গল সাত গোলের ব্যবধানে জিততেও তো পারে!’’ আলেসান্দ্রো মেনেন্দেসের দল কি তা হলে সাত গোল করতে পারে না? এ বার আত্মবিশ্বাসী জহর বলেন, ‘‘এ বারের লিগের কোনও দলকেই ইস্টবেঙ্গল সাত গোল দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না। যদি তাই হত, তা হলে গোলপার্থক্যে আমাদের মতো তথাকথিত ছোট দলের এত পিছনে থাকত না। আর শেষ ম্যাচে ‘জাদু’ দেখিয়ে সাত গোলের ব্যবধানে জিতে লিগ পেলে সেটা শতবর্ষে ওই ক্লাবের কলঙ্ক হয়ে থাকবে।’’

জোয়ারের জলে ডুবে গিয়েছে ইস্টবেঙ্গল মাঠ। অসহায় অবস্থায় দাঁড়িয়ে কাস্টমস দলের কোচ-কর্তারা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

ইস্টবেঙ্গল মাঠ যদি এ দিন জোয়ারের জলে ভেসে গিয়ে থাকে, তা হলে এ বারের কলকাতা লিগ ভেসে গিয়েছে পিয়ারলেসের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের তরঙ্গে। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল দুই ক্লাবকেই তাদের মাঠে গিয়ে হারিয়ে আসা। অরূপ দেবনাথ, অভিনব বাগ, জিতেন মুর্মু, মনতোষ চাকলাদারের মতো এক ঝাঁক বাঙালি ছেলের চোখ ধাঁধানো ফুটবল প্রদর্শন। আর আনসুমানা ক্রোমার ১৩ গোল করে গোলদাতাদের শীর্ষে থাকা। শুধু পিয়ারলেসই নয়, তথাকথিত ছোট দলের পারফরম্যান্সের জোয়ারেই যে এ বার ভেসে গিয়েছে বড় দলগুলো।

খেলা শেষে বড় ড্রাম বাজাতে শুরু করে দিয়েছিলেন পিয়ারলেসের ক্যারিবিয়ান স্ট্রাইকার অ্যান্টনি। আর তার তালে নাচছিল গোটা দল। এক সময়ে কেউ একজন এসে ক্রোমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে গেলেন নীল কালিতে বাংলায় লেখা একটি সাদা কাগজ। যেখানে লেখা, ‘‘জর্জ টেলিগ্রাফকে ২-০ হারিয়ে কলকাতা ফুটবল লিগ চ্যাম্পিয়ন পিয়ারলেস।’’ শেষ মুহূর্তে কোচের গলায় গাঁদা ফুলের মালা দিয়ে তাঁকে কাঁধে নিয়েও শুরু হল নাচ।

দলের ম্যানেজার অশোক দত্ত এ দিন সকাল থেকেই ছিলেন পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে। সেখান থেকেই পুজো দেওয়ার ফাঁকে তিনি ক্রমাগত নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছিলেন এ বারের পিয়ারলেসের দল গঠনের কারিগর ও এ দিনের ম্যানেজার সোনাই চন্দকে। তিনি আবার সকালবেলা কালীঘাটে পুজো দিয়ে এসেছিলেন বারাসতে। অশোকবাবু পুরীতেই বেলা এগারোটা নাগাদ খবর পান ইস্টবেঙ্গল মাঠ জলে ভাসছে। ফোনে আইএফএ কর্তাদের বলেন, ইস্টবেঙ্গল এ দিন না খেললে তাঁরাও খেলবেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর এই আবেদন গ্রাহ্য হয়নি।

বারাসত স্টেডিয়ামে এ দিন হাজির ছিলেন দুই প্রধানের সমর্থকেরাই। ক্রোমারা বল ধরলে চিৎকার করছিলেন মাঠে হাজির মোহনবাগান সমর্থকেরা। আর জর্জ টেলিগ্রাফ বল ধরলে খেলা দেখতে আসা ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা। এর মধ্যেই ৩৬ মিনিটে অনিল কিস্কুর বাড়ানো বল ধরে ডান পায়ের জোরালো শটে ১-০ করেন ক্রোমা। দ্বিতীয়ার্ধে ফের ডান দিক থেকে সেই অনিলের সেন্টার থেকে পাওয়া বলে চকিতে ঘুরে জোরালো ভলিতে দ্বিতীয় গোল পিয়ারলেস অধিনায়কের। যা দেখে প্রেস বক্সে বসেই আনন্দে কেঁদে ফেলেন ক্রোমা-পত্নী সাদিয়া।

শেষ পর্যন্ত লিগ কার সে ঘোষণা না হলেও, খেলা শেষে পিয়ারলেস ড্রেসিংরুমে এল এমডি পি পি রায়ের বার্তা। ক্রোমাদের বোনাস ঘোষণা করার সঙ্গেই তিনি বলছেন, ‘‘আই লিগ খেলার জন্য চিন্তাভাবনা চলছে। স্বপ্ন সফল হবে, যে দিন আমরা প্রথম একাদশের এগারোটি বাঙালি ছেলেকে নিয়ে কোনও খেতাব জিতব।’’

আটান্নর ইতিহাস তাড়া করার পথে এই স্বপ্নও দেখছে পিয়ারলেস।

পিয়ারলেস: অরূপ দেবনাথ, অভিনব বাগ, মনতোষ চাকলাদার, ভার্নি কালন কিয়াতাম্বা, ফুলচাঁদ হেমব্রম, দীপেন্দু দুয়ারি (লক্ষ্মীকান্ত মাণ্ডি), অনিল কিস্কু, এডমন্ড পেপরা, পঙ্কজ মৌলা, জিতেন মুর্মু (নরহরি শ্রেষ্ঠ/ দীপঙ্কর দাস), আনসুমানা ক্রোমা।

জর্জ টেলিগ্রাফ: ভাস্কর রাউথ, নবি হোসেন খান, মুসলিম মোল্লা, চিন্তা চন্দ্রশেখর রাও, মোহন সরকার, ডেনসন দেবদাস, মুহম্মদ মিকদাদ কেপি (রাজীব শ), খোকন মণ্ডল, জাস্টিস মরগ্যান, সানোহ লউসেনি পাটো, জোয়েল সানডে।

Football CFL 2019 Peerless George Telegraph East Bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy