Advertisement
E-Paper

হাওয়া বদলের প্রভাব দেখা যেতে পারে খেলার ময়দানে

বাংলার দুই প্রধান ফুটবল ক্লাব ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগানে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের পাশাপাশি বিজেপি-র মুকুল রায়, বাবুল সুপ্রিয়রা বহু দিনের সদস্য। এত দিন তাঁরা ঘুমন্ত অবস্থাতেই ছিলেন। কিন্তু এখনও কি তা-ই থাকবেন?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৯ ০২:৪৪
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

লোকসভা নির্বাচনে মোদী-ঝড়ের প্রভাব বাংলার খেলার ময়দানেও আকর্ষণীয় মোচড় আমদানি করতে পারে বলে মনে করছেন এখানকার বিভিন্ন ক্রীড়াসংস্থার কর্তারা। প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, গত কয়েক বছরে খেলার ময়দানে বাড়তে থাকা তৃণমূলের প্রভাব কি খর্ব হতে চলেছে বাংলায় বিজেপি-র উত্থানে?

বাংলার দুই প্রধান ফুটবল ক্লাব ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগানে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের পাশাপাশি বিজেপি-র মুকুল রায়, বাবুল সুপ্রিয়রা বহু দিনের সদস্য। এত দিন তাঁরা ঘুমন্ত অবস্থাতেই ছিলেন। কিন্তু এখনও কি তা-ই থাকবেন? ওয়াকিবহাল মহল কিন্তু সেখানেও হাওয়া বদলের সম্ভাবনা দেখছে। দুই ক্লাবে ক্ষমতার অন্দরমহলে ক্ষমতার ভরকেন্দ্র পাল্টায় কি না, দেখার অপেক্ষা শুরু হয়ে গিয়েছে।

তবে দেশ এবং রাজ্য রাজনীতিতে এ দিন মোদী-ঝড় ওঠার পরে সব চেয়ে বেশি আগ্রহ তৈরি হয়েছে বাংলার ক্রিকেট ও ফুটবলের রাজ্য সংস্থার নির্বাচন নিয়ে। সিএবি-তে যেমন সেপ্টেম্বরেই নির্বাচন হবে। তৃণমূল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকাশ্য মদতে রাজ্য ক্রিকেট সংস্থার প্রেসিডেন্ট এবং সচিব হয়েছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং অভিষেক ডালমিয়া। নবান্নে দাঁড়িয়ে তাঁদের নাম ঘোষণা করেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী।

লোঢা কমিটির সংস্কার অনুসারে সৌরভকে আর কয়েক মাস ক্ষমতায় থেকেই ‘কুলিং-অফে’ যেতে হবে। তার পর তিন বছর সিএবি থেকে সরে থাকতে হবে। তৃণমূল নেতৃত্ব সিএবি নির্বাচনকে কতটা আর প্রভাবিত করতে পারবেন বা উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আদৌ তা করতে যাওয়ার ঝুঁকি তাঁরা নেবেন কি না, সেই প্রশ্ন উঠে পড়েছে। কেউ কেউ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, লোঢা কমিটির বিধানের আগে মুকুল রায় স্বয়ং সিএবি-তে যুক্ত ছিলেন। তিনি ক্রিকেট অনুরাগী বলেও ময়দানে পরিচিত। এখনকার নিয়মে মন্ত্রী বা সাংসদ ক্রিকেট সংস্থায় আসতে পারবেন না। কিন্তু আড়াল থেকে প্রভাবিত করা আটকাবে কে? যদিও খেলাধুলোয় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ হওয়ারই পক্ষপাতী ময়দানের গরিষ্ঠ অংশ। অনেকেই মনে করেন, সংস্থার নির্বাচনে রাজনৈতিক নেতা বা ক্ষমতায় আসীন দলের ছড়ি ঘোরানো যে রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেটা বন্ধ হওয়া উচিত।

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যা ইঙ্গিত, সৌরভের মেয়াদ ভাল ভাবেই শেষ করে যাওয়া কঠিন হওয়া উচিত নয়। কেউ কেউ আবার প্রশ্ন তুলছেন, বাংলায় শক্তিশালী হয়ে ওঠা বিজেপি যে সৌরভের মতো মহাতারকাকে পাশে টানতে চাইবে না, সেটাই বা জোর দিয়ে বলা যায় কী ভাবে? অতীতে এ রাজ্যে সৌরভকে প্রার্থী পদের প্রস্তাব দিয়েছিল বিজেপি। এমনও শোনা গিয়েছিল যে, তাঁকে এই রাজ্যে দলের সেরা মুখ হিসেবেও তুলে ধরতে আগ্রহী ছিলেন বিজেপি হাইকম্যান্ড। সেই প্রস্তাব ফিরে আসতে পারে? কৌতূহলী হয়ে উঠেছে ময়দান।

তবে একটা বড় অংশ মনে করছে, সিএবি প্রশাসনের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্যাঁচ-পয়জার আরও বাড়তে পারে সৌরভ পরবর্তী রূপরেখা ঠিক করতে গিয়ে। প্রাক্তন অধিনায়কের পরে কে হতে চলেছেন সিএবি প্রধান, সেই দ্বৈরথে অনেক বেশি করে এসে পড়তে পারে বাংলার নতুন রাজনৈতিক অঙ্ক। তেমনই সর্বভারতীয় স্তরে বোর্ডের নির্বাচনেও পড়তে পারে মোদী-ঝড়ের প্রভাব। লোঢা সংস্কারের কারণে আপাতত বোর্ড থেকে সরে থাকা অরুণ জেটলি বা অনুরাগ ঠাকুর নেপথ্যে বড় ভূমিকা নিতে পারেন নতুন বোর্ড প্রধান নির্বাচনের ব্যাপারে। অমিত শাহের পুত্র জয় শাহও যে গুজরাতে ক্রিকেট সংস্থার প্রধান ছিলেন, তা-ও ভুলে গেলে চলবে না।

এ দিকে, আবার ৬ জুলাই রাজ্য ফুটবল সংস্থা আইএফএ-র সচিব পদের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। রাজ্য ফুটবল সংস্থার প্রেসিডেন্ট পদে আবার বসে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর দাদা অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়। সচিব পদের লড়াইয়ে তাই রাজনৈতিক প্রভাব এসে পড়ার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছিল। এখন সেখানেও হাওয়া পরিবর্তনের ঝটকা লাগতে পারে। আইএফএ-র এক সচিব পদপ্রার্থী বলেই ফেললেন, ‘‘সিএবি-তে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে আমরা ভুক্তভোগী। আইএফএ-তেও কেউ তা করতেই পারে। আমি নিজে সংস্থায় রাজনীতির লোক আনার বিরোধী। তবে এ দিনের ফলের পরে ময়দানে দাদাগিরি কমবে আশা করা যায়।’’

বাম আমলে সিএবি এবং ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের নির্বাচনে একবারই মাত্র সরাসরি মাঠে নেমেছিল সিপিএম। সিএবি-তে জগমোহন ডালমিয়া এবং প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের নির্বাচনী লড়াইয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্যও করে ফেলেছিলেন তখনকার মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কিন্তু এখন প্রায় সব সংস্থার বিভিন্ন পদ দখল করে নিয়েছেন তৃণমূলের মন্ত্রী বা নেতার ঘনিষ্ঠ কর্তা বা পরিবারের লোকেরা। কোথাও সরাসরি, কোথাও পরোক্ষ ভাবে। আইএফএ, রাজ্য ক্রীড়া পর্ষদ, ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, বেঙ্গল অলিম্পিক সংস্থা, হকি, বক্সিং, টেবল টেনিস, সাঁতার, জুডো, কবাডির বিভিন্ন পদে তৃণমূল মদতপুষ্টরা বসে আছেন।

এ দিনই অনেকে আওড়াতে শুরু করেছেন, ‘‘একাধিক সংস্থার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রীর দুই ভাই। অথচ, খেলায় উন্নতি নেই, বাংলা থেকে খেলোয়াড়ও তৈরি হয় না।’’ অনেকগুলি সংস্থায় আগামী কয়েক মাসের মধ্যে নির্বাচন আসন্ন। রাজনৈতিক হাওয়া বদলের আবহে এই সব সংস্থার অন্দরেও জমে যেতে পারে ব্যালট-যুদ্ধ।

Election Results 2019 Lok Sabha Election 2019 Sports Football East Bengal Mohun Bagan CAB
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy