Advertisement
E-Paper

আবেগ ছিল আর্সেনালে, চেলসিতে শুকনো ছক

মনে পড়ে যাচ্ছিল ১৯৭৭ কলকাতা লিগের ডার্বির কথা। অমল দত্ত তখন ইস্টবেঙ্গল কোচ। পিকে বন্দ্যোপাধ্যায় মোহনবাগানের। খেলাটার আগে ইস্টবেঙ্গল তখন খুব একটা ভাল ফর্মে ছিল না। সবাই ধরে নিয়েছিল আমরা জিতব।

সুব্রত ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৪৩
প্রথম গোলের পরে জুমার উচ্ছ্বাস। ছবি: এএফপি

প্রথম গোলের পরে জুমার উচ্ছ্বাস। ছবি: এএফপি

চেলসি ২(জুমা, হ্যাজার্ড) : আর্সেনাল ০

মনে পড়ে যাচ্ছিল ১৯৭৭ কলকাতা লিগের ডার্বির কথা। অমল দত্ত তখন ইস্টবেঙ্গল কোচ। পিকে বন্দ্যোপাধ্যায় মোহনবাগানের। খেলাটার আগে ইস্টবেঙ্গল তখন খুব একটা ভাল ফর্মে ছিল না। সবাই ধরে নিয়েছিল আমরা জিতব। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলই ২-০ জিতেছিল। আমিও খেলেছিলাম সেই ম্যাচে। পুরো ম্যাচটা খুব সুন্দর ছকের উপরে খেলেছিল ইস্টবেঙ্গল। নির্দিষ্ট স্ট্র্যাটেজি যাকে বলে। আমাদের হয়তো আবেগ ছিল বেশি। ওরা কিন্তু প্ল্যান করে এসেছিল। আর ফুটবলে অধিকাংশ সময়ে আবেগের বিরুদ্ধে ছকের জয় হয়। শনিবারের ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে চেলসি-আর্সেনাল ম্যাচটাও ঠিক সে রকমই হল। আর্সেনাল আবেগ নিয়ে খেললো। চেলসির খেলা দাঁড়িয়ে ছিল ছকের উপর।

চেলসি বনাম আর্সেনাল মানেই তো ফুটবলবিশ্বের দুই ধুরন্ধর কোচের লড়াই। দু’জনে হয়তো উনিশ-বিশ। কিন্তু কোচ হিসাবে জোসে মোরিনহোকে সামান্য হলেও এগিয়ে রাখব। ওঁর ফুটবল ঘরানায় সৌন্দর্য্যের কোনও জায়গা নেই। জয় আসল। ভাল খেলে হারার থেকে খারাপ খেলে জেতার মানসিকতাটাই মোরিনহোকে এত সফল করেছে।

আজও চেলসির খেলা দেখে মনে হবে, ধুর কী বোরিং ফুটবল খেললো দলটা। ন’জনের আর্সেনালকে পেয়েও কোনও গোল করার চেষ্টা নেই। কিন্তু ঘটনা হল, এটাই ছিল মোরিনহোর গেমপ্ল্যান। গ্যাব্রিয়েলের লাল কার্ডের পর যেটা প্রয়োগ করল চেলসি। চেলসির ছক ছিল বলটা ধরে রাখব। থার্ড মান জায়গা নিলে তাকে বাড়াব। খেলার গতি স্লো করে দেব। খুব বেশি প্রতিআক্রমণের সুযোগ দেব না। ওরা ঠিক সেটাই করল। ম্যাচ যত এগোতে থাকে আর্সেনাল তত দুর্বল হয়ে পড়ে। কাজোরলার লাল কার্ডের পরেও ন’জন আর্সেনালের বিরুদ্ধে বেশি আক্রমণ করল না চেলসি। বেসিক ফুটবল খেললো। ঠিক সময়ে গোল দুটোও করে গেল।

গোল দুটোর কথায় আসলে বলতেই হবে প্রথমটা আর্সেনালের ভুলেই হল। কী করে লাস্ট পোস্টে কোনও ম্যান ফাঁকা রেখে দেয় বুঝলাম না। ফাব্রেগাসের নেওয়া ফ্রি-কিকটা অবশ্যই দারুণ ছিল। মেপে বল বাড়ানো যাকে বলে। তাতেও সেটা ক্লিয়ার করা উচিত ছিল বেলেরিনদের। হ্যাজার্ডের গোলটা অবশ্য ভাগ্যের জোরেই হল। চেম্বার্সের গায়ে লেগে বলটা ডিফ্লেক্ট করায় পের চেকের কিছু করার ছিল না।

ম্যাচে ফুটবলারদের থেকেও তাই আমার কাছে সেরা মোরিনহো। ওর ম্যাচ রিডিং ক্ষমতা নিয়ে কোনও প্রশ্নই থাকতে পারে না। ও জানে কী করে ম্যাচ বের করতে হয়। রক্ষণাত্মক খেলে। বিপক্ষকে রাগিয়ে দিয়ে। ফিজিকাল খেলে। প্রতিটা বলের জন্য ফরোয়ার্ডদেরও ট্র্যাক ব্যাক করতে বলে। সেটাই তো মোরিনহোর দল। আজকেও ওর দল খুব একটা ভাল খেলেছে সেটা বলব না। কিন্তু কাজের কাজটা করেছে। কম গোল করে জিতলেও কিছু যায় আসে না। তিন পয়েন্ট তুলতে থাকলেই হল। টিভিতে দেখছিলাম শেষের দিকে মোরিনহো ফুটবলারদের বলছিলেন, পাস, পাস, পাস। অর্থাত্ আক্রমণে কম গিয়ে খেলাটার প্রাণ বের করে নাও।

শনিবার জেতার পরেও বলব না চেলসি আহামরি কিছু করবে এ বছর। দলের সেই আত্মবিশ্বাসটাই দেখলাম না। কিছু মাস আগেই এই দলটা প্রিমিয়ার লিগে জিতেছিল। দিয়েগো কোস্তা-সেস ফাব্রেগাসের যুগলবন্দিতে একের পর এক দলকে উড়িয়ে দিচ্ছিল চেলসি। এডেন হ্যাজার্ড তো বলে বলে ড্রিবল করছিল। এ বার এই কোর গ্রুপের সেই ফর্ম নেই। কোস্তা গোল পাচ্ছে না। ফাব্রেগাস এ দিন ভাল খেললেও বাকি ম্যাচগুলোয় অত নজর কাড়তে পারেনি। হ্যাজার্ড আবার ফাইনাল পাস দিতে পারছে না। নতুন ফুটবলারদের মধ্যে পেদ্রো দলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু খারাপ ফর্ম প্রত্যেক ফুটবলারের জীবনেই আসে। আর যে দলে মোরিনহোর মতো কোচ আছে তারা ঠিকই মরসুম শেষে ভাল কোনও জায়গায় থাকবে বলে আমার বিশ্বাস।

Chelsea Arsenal Gabriel Santi Cazorla Gunners
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy