Advertisement
১১ মে ২০২৪

মাতেরাজ্জির অঙ্কের কাছে হার জিকোর

ফতোরদায় গিয়ে অবাকই হয়েছিলাম। নেহরু স্টেডিয়াম তো ভর্তি! তাক লেগে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল, এটা কোথায় এসে পৌঁছলাম! এমন ফুটবল উন্মাদনা! তাও আবার গোয়ার মাঠে? কবে শেষ দেখেছি, মনে করতে পারছিলাম না। আই লিগে তো এখানে ফাঁকা স্টেডিয়ামেই ম্যাচ খেলে গোয়ার ক্লাবগুলো। ডেম্পো পর পর আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সময়ও দেখেছি, হাজার পাঁচেকের বেশি লোক নেই। আর আইএসএলের টিকিট ম্যাচের দু’দিন আগেই শেষ। মাতেরাজ্জি, জিকোর লড়াই দেখার টানে। বলতে বাধা নেই, আমিও ছিলাম সেই দলেই।

গোয়ার চক্রব্যূহ ভাঙছে চেন্নাইয়ান এফসি। বুধবার। ছবি: পিটিআই

গোয়ার চক্রব্যূহ ভাঙছে চেন্নাইয়ান এফসি। বুধবার। ছবি: পিটিআই

অ্যালভিটো ডি কুনহা
ফতোদরা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:৩৫
Share: Save:

চেন্নাইয়ান এফসি ২ (বলবন্ত, এলানো)

এফসি গোয়া ১ (আর্নোলিন)

ফতোরদায় গিয়ে অবাকই হয়েছিলাম। নেহরু স্টেডিয়াম তো ভর্তি! তাক লেগে গিয়েছিল।

মনে হচ্ছিল, এটা কোথায় এসে পৌঁছলাম! এমন ফুটবল উন্মাদনা! তাও আবার গোয়ার মাঠে? কবে শেষ দেখেছি, মনে করতে পারছিলাম না।

আই লিগে তো এখানে ফাঁকা স্টেডিয়ামেই ম্যাচ খেলে গোয়ার ক্লাবগুলো। ডেম্পো পর পর আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সময়ও দেখেছি, হাজার পাঁচেকের বেশি লোক নেই। আর আইএসএলের টিকিট ম্যাচের দু’দিন আগেই শেষ। মাতেরাজ্জি, জিকোর লড়াই দেখার টানে। বলতে বাধা নেই, আমিও ছিলাম সেই দলেই।

আর দেখলাম, শেষ পর্যন্ত সঠিক স্ট্র্যাটেজি আর অঙ্ক কষে জিকোকে টেক্কা দিয়ে গেলেন কোচ হিসাবে রিজার্ভ বেঞ্চে বসে থাকা মাতেরাজ্জি। যিনি চেন্নাইয়ান এফসি-র ফুটবলারও।

অ্যাওয়ে ম্যাচ হলেও মাতেরাজ্জি শুরুটা করেছিলেন ৩-৫-২ স্ট্র্যাটেজিতে। আক্রমণই ছিল চেন্নাইয়ান কোচের প্রধান অস্ত্র। যার সুফল বিরতির আগেই হাতেনাতে পেলেন বলবন্তরা। ২-০ এগিয়ে গিয়ে। দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য মাতেরাজ্জি ট্যাকটিকস বদলালেন। চলে গেলেন ৫-৩-২-এ। সন্দেহ নেই, অ্যাওয়ে ম্যাচে দু’গোলে এগিয়ে থাকার পর একটু রক্ষণাত্মক হওয়াটা একদম সঠিক সিদ্ধান্ত। আমি কোচ হলেও তাই করতাম। তা বলে পাল্টা আক্রমণে যে বলবন্তরা ওঠেনি তা কিন্তু নয়।

উল্টো দিকে ঘরের মাঠে খেলা হওয়া সত্ত্বেও জিকো যে কেন এত গুটিয়ে থাকলেন বুঝতে পারলাম না। গোটা ম্যাচ ৪-৪-১-১ স্ট্র্যাটেজিতে খেলিয়ে গেলেন। পিছিয়ে পড়েও কেন যে তিনি অল আউট গেলেন না, বুঝলাম না। ঘরের মাঠের সমর্থন ছিল। এই মাঠেই প্র্যাকটিসে অভ্যস্ত রবার্ট পিরেসরা। তা ছাড়া টিমে ডেম্পোর অনেক ফুটবলার রয়েছে। যারা বহুদিন একসঙ্গে খেলছে। তবে আমার মনে হয়েছে, র্যান্টি মার্টিন্সকে একটু আগেই নামাতে পারতেন গোয়ার কোচ। ওর পরিচিত পরিবেশ। চেনা মাঠ। গোলটাও দারুণ চেনে র্যান্টি।

তবে রবার্ট পিরেসের খেলা ভাল লাগল। ক্লাস প্লেয়ার। পেনিট্রেটিভ পাসগুলো অসাধারণ। অবশ্য বল পায়ে পিরেস সুন্দর হলেও অফ দ্য বলে নয়। পায়ে বল না থাকলে পিরেসকে সে ভাবে কার্যকর দেখাল না। আধুনিক ফুটবলের অন্যতম শর্ত কিন্তু বল ছাড়াও তোমাকে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে।

চেন্নাইয়ের টিমে আবার যাদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছিল সেই এলানো এবং সিলভেস্ত্রের থেকেও এগিয়ে রাখব কলম্বিয়ার অনামী স্ট্রাইকার জন স্টিভন মেনডোজাকে। চেন্নাইয়ের হোটেলে গিয়েছিলাম অভিজিত্‌, খাবরাদের সঙ্গে দেখা করতে। ওরাও বলছিল, মেনডোজার খেলাটা দেখো। এলানোর বদলে যখন ওঁকে নামানো হল, সত্যিই মুগ্ধ হয়ে গেলাম। কী দুরন্ত ড্রিবলিং। কী নিখুঁত পাস। রিফ্লেক্সও অসাধারণ। ওঁর খেলা দেখে আটলেটিকো দে কলকাতার স্লোগান মনে পড়ল--- ‘ফাটাফাটি ফুটবল’। তবে এটাও ঘটনা, চেন্নাইয়ের গোল দু’টি এলানোর জন্যই। গোয়া রক্ষণেরও ভুল ছিল। অনভিজ্ঞতার ছাপ দেখতে পেলাম নারায়ণ দাস, প্রবীর দাসদের খেলায়।

ম্যাচ শেষের দুই ছবি। হতাশ জিকো।
(নীচে) উচ্ছ্বসিত অভিষেক।

এলানোর বাড়ানো বলটা মাঠের বাইরে পাঠানোই যেত। কিন্তু জিকোর দলের ডিফেন্ডাররা সেটা না করায় সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল বলবন্ত। অ্যাওয়ে ম্যাচে এক গোলে এগিয়ে যাওয়া মানে মানসিক ভাবে অনেকটাই এগিয়ে যাওয়া। দ্বিতীয় গোলও হল সেই গোয়ার রক্ষণের ভুলেই। বলবন্তকে বিশ্রী ফাউল করেন নারায়ণ। অবশ্য এটা না হলে এলানোর পা থেকে বিশ্বমানের গোলটা-ও দেখতে পেতাম না। ফ্রি কিক থেকে এলানোর গোলার মতো শটটা গোয়ার জালে সুনামির ঢংয়ে আছড়ে পড়ল। এর বাইরে অবশ্য ব্রাজিলের স্ট্রাইকারকে সে ভাবে খুঁজে পাওয়া গেল না। আর তাই বিরিতর মিনিট কুড়ি বাদেই ওঁকে তুলে নিতে বাধ্য হলেন মাতেরাজ্জি।

সিলভেস্ত্রেকেও পুরো ফিট বলে মনে হল না আমার। স্টপার ব্যাকে ওর সাপোর্টে আরও দু’জন ফ্রান্সের বার্র্নার্ড মেন্ডি এবং আমাদের গৌরমাঙ্গী সিংহ না থাকলে সিলভেস্ত্রেকে সমস্যায় পড়তে হত। মাতেরাজ্জি যদি ৪-৪-২ বা ৪-৪-১-১ স্ট্র্যাটেজিতে খেলাতেন, তা হলেও ফ্রান্সের কনফেডারেশনস কাপ জয়ী দলের সদস্য সিলভেস্ত্রেকে নিয়ে চাপে পড়ে যেতে পারতেন মাতেরাজ্জি।

তবে চেন্নাই এত কম দিন প্র্যাকটিস করেও বেশ উপভোগ্য খেলল। চেন্নাই-ই আইএসএলের প্রথম টিম যারা অ্যাওয়ে ম্যাচে জিতল। অভিষেক বচ্চনকে তো দেখলাম রীতিমতো উচ্ছ্বসিত। টিমের অন্যতম মালিক। ওর এই উন্মাদনাটা স্বাভাবিক। মাঠে গিয়ে ফুটবলারদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শুভেচ্ছা জানাল।

ফুটবল ভক্ত অভিষেক ঠিক কাজই করছে। প্রথম ম্যাচে জয় পাওয়াটা যে কোনও টুর্নামেন্টেই যে কোনও দলকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস যোগায়। চেন্নাইয়ানরা সেটাই করল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE