Advertisement
E-Paper

গিলেসপির শাসানি আর দ্রাবিড় দর্শনেই রূপকথা

জেসন গিলেসপির শাসানি। রাহুল দ্রাবিড়ের ‘গুরুকুলে’ প্রত্যাবর্তনের পাঠ। কাউন্টির কঠোর রগড়ানি। সংস্কারে অটুট বিশ্বাস। আট মাস পর ভারতীয় টেস্ট টিমে চেতেশ্বর পূজারার অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের নেপথ্য-কাহিনি খুঁজতে গিয়ে উপরোক্ত মশলাগুলোই পাওয়া যাচ্ছে। যে আট মাসের ক্রিকেট-কারাবাসের শুরুতে মনখারাপ ছিল, ভেঙে পড়া ছিল, কিন্তু পরে নতুন করে সিঁড়ি বেয়ে উত্তরণের শিখরের দিকে দৌড়নোও ছিল।

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৫২
ইয়র্কশায়ারে পূজারার কোচ

ইয়র্কশায়ারে পূজারার কোচ

জেসন গিলেসপির শাসানি।
রাহুল দ্রাবিড়ের ‘গুরুকুলে’ প্রত্যাবর্তনের পাঠ।
কাউন্টির কঠোর রগড়ানি।
সংস্কারে অটুট বিশ্বাস।
আট মাস পর ভারতীয় টেস্ট টিমে চেতেশ্বর পূজারার অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের নেপথ্য-কাহিনি খুঁজতে গিয়ে উপরোক্ত মশলাগুলোই পাওয়া যাচ্ছে। যে আট মাসের ক্রিকেট-কারাবাসের শুরুতে মনখারাপ ছিল, ভেঙে পড়া ছিল, কিন্তু পরে নতুন করে সিঁড়ি বেয়ে উত্তরণের শিখরের দিকে দৌড়নোও ছিল।
শনিবার দুপুরে সৌরাষ্ট্রের জামনগরের বাড়িতে যখন চেতেশ্বরের বাবা অরবিন্দ পূজারাকে কলম্বো থেকে ধরা হল, ভদ্রলোক প্রথমে কথা বলতে পারছিলেন না। আবেগে গলা বুজে আসছে। অস্ফুটে বলে যাচ্ছেন, “আমার ছেলে তো দেখিয়ে দিল যে, ওর ক্রিকেট এখনও শেষ হয়ে যায়নি। আমি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলব না। কিন্তু জানতাম যে চিন্টু (পূজারার ডাকনাম) একটা সুযোগ পেলেই দেখিয়ে দেবে।”
সুযোগ। শব্দটাই তো অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল পূজারার জীবন থেকে। শোনা গেল, গত বছর সিডনি টেস্টে বাদ পড়ার পর বাড়ি ফিরে খুব চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলেন। কয়েক দিন বিশেষ কথা-টথা বলেননি। পরিবার বলত যে, কঠিন সময়টাই আসল জীবন। সুখের দিনগুলো নয়। পূজারা চুপচাপ শুনতেন শুধু। ছোটবেলায় মা তাঁকে শিখিয়েছিলেন, যুগধর্মের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার সঙ্গে ধর্মে বিশ্বাস রাখারও প্রয়োজন আছে। ভিডিওগেম খেলতে অসম্ভব ভালবাসতেন ছোটবেলায়। শর্ত ছিল একটাই, প্রত্যেক বার ভিডিও গেম হাতে পাওয়ার আগে পাঁচ মিনিট অন্তত পুজো করতে হবে। “সে সময় স্ত্রীকে বলতাম, এটা কী করছ? গেমটা দেওয়ার হলে দাও, নইলে বাদ দাও। ও বলত, এটারও দরকার আছে। খারাপ সময়ে ওর ধর্মবিশ্বাস ওকে সাহায্য করবে। ভাবিনি কখনও যে সেটা সত্যি হবে। টিম থেকে বাদ পড়ার পর ও পুজোর সময় বাড়িয়ে দিয়েছিল। তার পর একদিন বলল, বাবা আমি আমারটা আবার করব। বাকিটা ঈশ্বরের উপর।”
সেই শুরু।
প্রথমে জামনগরের মাঠে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নেট। দিনে অন্তত চার-পাঁচ ঘণ্টা। সঙ্গে জিম। কিন্তু তাতে সব হত না। দরকার ছিল আরও উন্নতমানের ক্রিকেট-প্রস্তুতি। পূজারা যা পেয়ে গিয়েছিলেন। এক, কাউন্টিতে ইয়র্কশায়ারের রগড়ানি। কোচ গিলেসপির ধাতানি। আর দুই, ভারত ‘এ’ টিমে দ্রাবিড়ের সান্নিধ্য।

এ দিন সন্ধেয় ইয়র্কশায়ার কোচ গিলেসপিকে দেখা গেল একটা টুইট করতে। যেখানে প্রশংসা করে পূজারাকে ‘স্টিভ’ বলে অভিহিত করেছেন। রিটুইট করে জানতে চাওয়া হলে গিলেসপি বললেন, পূজারাকে ওই নামেই ক্লাব সতীর্থরা ডেকে থাকেন। কোন স্টিভ, ওয় না স্মিথ, সেটা আর বললেন না। সে যা-ই হোক, পূজারার এই প্রত্যাবর্তনে গিলেসপির হাত কোথাও না কোথাও আছে। শোনা গেল, ইয়র্কশায়ারে যাওয়ার পরই পূজারাকে প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় পেসার সতর্ক করে দেন যে, তুমি এখানে এসেছ পারফর্ম করতে। যে কোনও ভাবে তোমাকে উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে সেটা করতে হবে।

“ওরা কাঠকাঠ, পেশাদার। চিন্টুর থেকে কী চায় না চায়, সোজা বলে দিয়েছিল। কাউন্টি খেলতে গিয়ে পরিশ্রম আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল ও। গিলেসপি ওর কাছ থেকে যে কোনও শর্তে পারফরম্যান্স চেয়েছিল। ও কিন্তু পঞ্চাশ গড় রেখে কাউন্টি সিজন শেষ করেছে,” বলছিলেন অরবিন্দ।

এক মাস কাউন্টি খেলে ফিরে এসে ভারত ‘এ’। এবং রাহুল দ্রাবিড়। এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে পূজারা বললেন, “রাহুল ভাই বলেছিলেন আমার টেকনিকে কোনও সমস্যা নেই। বলেছিলেন, শুধু তিরিশ বা চল্লিশ রানগুলোকে বড় রানে বদলাতে হবে। আর বলেছিলেন, যে কোনও দিন আমার রান আসবে। সেটা হতে পারে শ্রীলঙ্কায়। বা ভারত ‘এ’র ম্যাচে। যে কোনও দিন। যে কোনও সময়। উনি আত্মবিশ্বাসটা দিয়ে গিয়েছিলেন।”

তার পর?

তার পর, রূপকথা। শনিবারের সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাবের মাঠ। এমন একটা পিচে অপরাজিত সেঞ্চুরি করে চলে যাওয়া যা তাঁর কাছে অন্যতম কঠিন। দক্ষিণ আফ্রিকার পিচের মতো। তবু সেঞ্চুরি আটকায়নি।

যে সেঞ্চুরি তাঁর ক্রিকেটজীবনে করা প্রথম পাঁচের মধ্যে আছে, থাকবে।

cheteswar pujara jason gillespie rahul dravid county cricket cheteswar pujara ton cheteswar pujara century pujara rough and tough
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy