Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
কলম্বোয় স্বাগত জানাল সবুজ পিচ

বিরাটদের অপেক্ষায় চায়নাম্যান চমক

শুরুতেই ভারতীয় দলের হেড কোচ রবি শাস্ত্রীকে দেখা গেল বোলিং কোচ ভরত অরুণকে নিয়ে বেশ খানিকক্ষণ ধরে পিচ জরিপ করছেন। কয়েক জন ক্রিকেটারও ঘুরেফিরে দেখে গেলেন।

নজরে: কলম্বো টেস্টে শ্রীলঙ্কা দলে চায়নাম্যান লক্ষ্মণ। ফাইল চিত্র

নজরে: কলম্বো টেস্টে শ্রীলঙ্কা দলে চায়নাম্যান লক্ষ্মণ। ফাইল চিত্র

সুমিত ঘোষ
কলম্বো শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৭ ০৪:৫৯
Share: Save:

কোথায় এলাম আমরা? ডারবান না কলম্বো?

সকালে সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাবের মাঠে ঢুকে দেখা গেল, ঘাসে মোড়া সবুজ উইকেট স্বাগত জানাচ্ছে ভারতীয় দলকে। শেষ পর্যন্ত কি এ রকম পিচেই ভারত বনাম শ্রীলঙ্কা চলতি সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট হবে?

সকালে বিরাট কোহালি-রা প্র্যাকটিসে আসা ইস্তক বাইশ গজে মখমলের মতো সবুজের উপস্থিতি নিয়ে জল্পনা। এমন সবুজের আবরণ সচরাচর উপমহাদেশের উইকেটে দেখা যায় না। তাও আবার স্থানীয় কয়েক জন শুনিয়ে দিলেন, ‘‘এখন তো কিছুটা ছাঁটা হয়েছে। গত কাল মাঠ আর পিচ আলাদা করা যাচ্ছিল না। এতটাই সবুজ ছিল।’’

শুরুতেই ভারতীয় দলের হেড কোচ রবি শাস্ত্রীকে দেখা গেল বোলিং কোচ ভরত অরুণকে নিয়ে বেশ খানিকক্ষণ ধরে পিচ জরিপ করছেন। কয়েক জন ক্রিকেটারও ঘুরেফিরে দেখে গেলেন।

ঘরোয়া ক্রিকেটে বহু বছর ধরে কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা থাকা ভরত অরুণ খুব ভাল পিচ বোঝেন বলে সুনাম রয়েছে। ভারতীয় দলে এর আগে শাস্ত্রী যখন ডিরেক্টর ছিলেন, তখনও অরুণ ছিলেন টিমের পিচ বিশারদ। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে পিচ দেখার অর্থই হচ্ছে মামলা গুরুতর।

কিন্তু সকাল-সকাল যেটা কারও ব্রহ্মতালু স্পর্শ করছিল না, তা হচ্ছে, শ্রীলঙ্কা নিজেরাই বা এমন সবুজ পিচ চাইবে কেন? তাদের তো রাতারাতি কোনও লিলি-টমসন উড়ে আসেনি যে, আগুনে পিচ বানিয়ে বিরাট কোহালিদের কাত করে দেবেন।

বরং তুল্যমূল্য বিচারে ভারতের পেস আক্রমণও অনেক এগিয়ে। মহম্মদ শামিকে বিশ্বের অন্যতম সেরা পেসার ধরা যেতেই পারে। গলের শুকনো পিচেই তাঁকে শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানরা খেলতে পারেননি। এ রকম সবুজ উইকেট তো শামি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবেন। উমেশ যাদব আছেন। এখন বিশ্বের দ্রুততম পেসারদের একজন উমেশ। প্রয়োজনে দীর্ঘকায় ইশান্ত শর্মাকেও খেলিয়ে দিতে পারবে ভারত বাড়তি বাউন্স আদায় করার জন্য। হার্দিক পাণ্ড্য পর্যন্ত নিয়মিত ভাবে ঘণ্টায় ১৩৫-১৪০ কিলোমিটার গতিবেগে বল করতে পারেন। গলে প্রবল গরমের মধ্যে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স অলরাউন্ডারের সাত ওভারের আগ্রাসী স্পেল দেখে কোহালি-শাস্ত্রীর টিম ম্যানেজমেন্ট মুগ্ধ।

শ্রীলঙ্কার সেখানে কেউ-ই তো নেই। এক নুয়ান প্রদীপ টিমটিম করে জ্বলছেন, যিনি গলে ছয় উইকেট নিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গী লাহিরু কুমারের বলে গতি আছে। এই মুহূর্তে শ্রীলঙ্কার দ্রুততম পেসার বলা হচ্ছে লাহিরুকে। কিন্তু অভিজ্ঞতা বা রেকর্ড কোনওটাই নেই। শুধুমাত্র এই দুই পেসারের ওপর আস্থা রেখে এত বড় ঝুঁকি নেবে শ্রীলঙ্কা দল? তাদের নিজেদের ব্যাটসম্যানদেরও তো একই পিচে খেলতে হবে শামি, উমেশদের। সাড়ে তিন ঘণ্টার প্র্যাকটিস সেশন সেরে ফিরে যাওয়ার সময়েও এই ধাঁধার উত্তর পায়নি ভারতীয় দল।

উড়ন্ত: কলম্বোর এসএসসি-তে ভারতীয় অনুশীলনে মরিয়া বিরাট কোহালি। মঙ্গলবার। সিরিজে ১-০ এগিয়ে ভারত। দ্বিতীয় টেস্ট শুরু বৃহস্পতিবার থেকে। এপি

এমনিতে সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাবের এই মাঠে ক্রিকেট তো বটেই, অন্যান্য ইতিহাসের চিহ্নও অনেক খুঁজে পাওয়া যাবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্রশক্তির যুদ্ধ বিমানের জন্য এরোড্রাম হিসেবে ব্যবহৃত হতো এই মাঠ। সেখানেই শ্রীলঙ্কা পিচে ঘাস রেখে সিরিজে ফিরে আসার যুদ্ধ ঘোষণা করছে— এমন একটা গা ছমছমে রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ চালু করাই যেত। সমস্যা হচ্ছে, শ্রীলঙ্কা কলম্বো টেস্টের জন্য দল ঘোষণা করেছে, তাতে রাখা হয়েছে লক্ষ্মণ সান্দাকান-কে। ভারতের কুলদীপ যাদবের মতো ২৬ বছরের সান্দাকান বাঁ-হাতি চায়নাম্যান বোলার। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে গত বছরই টেস্ট অভিষেক ঘটে এবং তাঁকে দেখে অনেকেই আশাবাদী, ভবিষ্যতের তারকা হওয়ার মতো মশলা রয়েছে সান্দাকানের। এমনিতেই চায়নাম্যান বলে দু’দিকে বল ঘোরাতে পারেন। তার ওপর খুব চটপটে বোলিং অ্যাকশন হওয়ায় তাঁকে ধরতে পারাও নাকি কঠিন হয় অনেক সময়।

সান্দাকানের অন্তর্ভূক্তি থেকে পরিষ্কার ইঙ্গিত যে, স্পিন বিভাগ শক্তিশালী করতে চাইছে শ্রীলঙ্কা। রঙ্গনা হেরাথের আঙুলে চোট নিয়ে এ দিনও কোনও সরকারি বুলেটিন আসেনি শ্রীলঙ্কা বোর্ড থেকে। রঙ্গনা অবশ্য প্র্যাকটিসে এসেছিলেন। তিনি খেলবেন কিনা পরে ঠিক হবে। এর মধ্যে সান্দাকানকে তৈরি রাখা হচ্ছে বিস্ময় উপাদান হিসেবে।

আরও পড়ুন: অনেক বড় নামও করেনি লঙ্কা-জয়, তোপ শাস্ত্রীর

তা হলে ঘাসের উপস্থিতি কেন? ভারতীয় শিবিরে শুধুই বিভ্রান্তি ছড়ানোর প্রয়াস না কি সত্যিই প্রাণবন্ত পিচ দেখা যেতে পারে কলম্বোতে? ভারতীয় দল মারফত যা বিশ্লেষণ পাওয়া গেল, তাতে গলের চেয়ে যে কলম্বোয় বেশি প্রাণবন্ত পিচ হবে তা নিয়ে বিশেষ সন্দেহ নেই। এ দিন কোহালিরা মাঠের মাঝখানে টেস্ট যে বাইশ গজে খেলা হবে, তার পাশের পিচে নেট প্র্যাকটিস করলেন। জানা গেল, সেই পিচে ভালই সিম মুভমেন্ট ছিল। তা দেখে কারও কারও মনে হয়েছে, এসএসসি-র পিচে পেসারদের জন্য বেশি সাহায্য থাকলেও অবাক হওয়ার নেই। ইতিহাসগত ভাবে পেস, স্পিন দু’ধরনের অস্ত্রেই সাফল্যের নমুনা রয়েছে এ মাঠে। মুথাইয়া মুরলীধরনের প্রিয় মৃগয়াভূমি বলে পরিচিত এসএসসি। আবার এখানেই জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে চামিন্ডা ব্যাসের সেই ১৯ রানে আট উইকেট।

সেই ব্যাসই এখন শ্রীলঙ্কার নতুন বোলিং কোচ। তাঁর মনে হতেই পারে, ভারতীয় দলকে সমস্যায় ফেলতে পারে একমাত্র ঘাস এবং জোরে বোলাররা। স্পিনের পিচ করা মানে তো অশ্বিন-জাডেজারাও সুবিধে পাবেন। আর এই সব বিভ্রান্তিতে ভারতীয় দল ঠিক করেছে বুধবার মাঠে এসে পিচ না দেখা পর্যন্ত প্রথম একাদশ নিয়ে ভাবাটাই অবান্তর। ম্যাচের আগের দিন ঘাস সবই উড়িয়ে দেওয়া হয় কি না, সেটা দেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রাথমিক যা ইঙ্গিত, গলের প্রথম একাদশই কলম্বোয় নামানো হবে বলে এখনও পর্যন্ত ঠিক করা আছে।

অর্থাৎ কে এল রাহুল নয়, অভিনব মুকুন্দ-ই ওপেনিংয়ে শিখর ধবনের পার্টনার হওয়ার ব্যাপারে এগিয়ে। এ দিন মাঠের মাঝখানে নেট প্র্যাকটিসের শুরুতে ধবন আর মুকুন্দই প্রথম ব্যাট করতে গেলেন। রাহুলকে পাঠানো হল পিছনের নেটে ‘থ্রোডাউন’-এর সামনে প্র্যাকটিসের জন্য। তার পর তিনি মূল নেটে ব্যাট করার সুযোগ পেলেও তাঁকে নিয়ে তাড়াহুড়ো করার পক্ষপাতী নয় দল। এমনিতেই তিনি কাঁধের বড় চোট এবং অস্ত্রোপচার থেকে ফিরছেন। তার ওপর কলম্বোর হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল জ্বর হওয়ায়। এখানকার প্রচণ্ড গরম আর রোদে পাঁচ দিন মাঠে থাকার ধকল তিনি নিতে পারবেন কি না, সংশয় থাকছে।

মনে করা হচ্ছে, ম্যাচের আগের দিন পিচের সবুজ-নাটক এবং ভারতীয় প্রথম একাদশের ওপর থেকে বিভ্রান্তির মেঘ সরবে।

(এই প্রতিবেদনটি প্রকাশের সময় একটি তথ্যগত ত্রুটি থেকে গিয়েছিল। চামিন্ডা ব্যাস ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ১৯ রানে আট উইকেট নিয়েছিলেন বলে লেখা হয়েছিল। আসলে তা ছিল জিম্বাবোয়ার বিরুদ্ধে। পাঠকদের ধন্যবাদ এই ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE