Advertisement
E-Paper

সাবালেঙ্কার চিৎকার থামিয়ে দিলেন গফ! সার্ভিস ভাঙার লড়াই জিতে ফরাসি ওপেন জয় আমেরিকার তরুণীর

২০২৩ সালের ইউএস ওপেনের রিপ্লে দেখা গেল এ বারের ফরাসি ওপেনে। আরও একটা ফাইনালে প্রথম সেট জিতে হারতে হল এরিনা সাবালেঙ্কাকে। আবার তাঁকে হারালেন কোকো গফ।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২৫ ২১:৩৬
sports

ট্রফিতে চুম্বন কোকো গফের। ছবি: সমাজমাধ্যম।

‘ভিক্টরি বিলংস টু দ্য মোস্ট টেনাসিয়াস’। ফিলিপ শঁতিয়ে কোর্টে লেখা এই আপ্তবাক্যের অর্থ, প্রতিকূলতার মধ্যেও যে লড়াই ছাড়ে না, জয় তারই হয়। সেটাই করে দেখালেন কোকো গফ। পিছিয়ে পড়েও লড়াই ছাড়লেন না তিনি। প্রথম সেট হেরেও লড়াই ছাড়লেন না তিনি। টেনিস সার্কিটে সাবালেঙ্কার চিৎকার বিখ্যাত। তাঁর প্রতিটা শটের পরেই সেই চিৎকার শোনা যায়। যত সময় গড়াল সেই চিৎকার বাড়ল। তবে আনন্দে নয়, হতাশায়। সাবালেঙ্কার চিৎকার থামিয়ে দিলেন গফ। জিতে নিলেন নিজের প্রথম ফরাসি ওপেন। ২০২২ সালের ফাইনালে ইগা শিয়নটেকের কাছে হারতে হয়েছিল। এ বার আর সুযোগ নষ্ট করলেন না তিনি। আড়াই ঘণ্টায় তিন সেটের লড়াই (৬-৭, ৬-২, ৬-৪) জিতলেন তিনি। সেরিনা উইলিয়ামস ১০ বছর আগে ফরাসি ওপেন জিতেছিলেন। ১০ বছর পর আবার কোনও আমেরিকান খেলোয়াড়ের হাতে উঠল এই ট্রফি।

২০২৩ সালের ইউএস ওপেনের রিপ্লে দেখা গেল এ বারের ফরাসি ওপেনে। সে বারও প্রথম সেট হেরে পরের দুটো সেট জিতেছিলেন গফ। সেটাই তাঁর প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়। নিজের দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যামও তিনি জিতলেন সেই সাবালেঙ্কাকে হারিয়েই। বিশ্বের দু’নম্বরের কাছে হারতে হল এক নম্বরকে।

সাবালেঙ্কা ‘পাওয়ার’ টেনিসে বিশ্বাসী। তাঁর সার্ভিস পুরুষদেরও সমস্যায় ফেলবে। কিন্তু সেই পাওয়ার বা শক্তিই তাঁর সবচেয়ে দুর্বলতা। এক বার ভুল করতে শুরু করলে আরও জোরে শট খেলার চেষ্টা করেন তিনি। ভাবখানা এমন, প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দেবেন। তাতে আরও বেশি ভুল করেন সাবালেঙ্কা। সেটা এই ম্যাচে দেখা গেল। একটার পর একটা ভুল তাঁকে আরও রাগিয়ে দিল। মনঃসংযোগ নষ্ট করল। সাবালেঙ্কা একটা করে আনফোর্সড এরর করছিলেন আর তাঁর কোচের দিকে তাকিয়ে হতাশা উগরে দিচ্ছিলেন। গোটা ম্যাচে ৭০টা আনফোর্সড এরর করেছেন তিনি। গফের থেকে ৪০টা বেশি। নিজের ভুলেই হেরেছেন সাবালেঙ্কা। ৯ বার তাঁর সার্ভিস ভেঙেছেন গফ। উল্টে সাবালেঙ্কা গফের সার্ভিস ভেঙেছেন ৬ বার। সার্ভিস ভাঙার খেলায় শেষ পর্যন্ত জিতেছেন আমেরিকার ২১ বছর বয়সি খেলোয়াড়। নিজের থেকে ৬ বছরের বড় প্রতিপক্ষকে হারিয়েছেন তিনি।

অথচ শুরুটা হয়েছিল সম্পূর্ণ উল্টো। বৃহস্পতিবার এই কোর্টেই চার বারের ফরাসি ওপেন চ্যাম্পিয়ন ইগা শিয়নটেকের বিরুদ্ধে যে ভাবে সাবালেঙ্কা শুরু করেছিলেন সেই এক ছবি দেখা গেল এই ম্যাচেও। শুরুতেই গফের সার্ভিস দু’বার ভাঙেন তিনি। মাত্র ১৫ মিনিটে এগিয়ে যান ৪-১ গেমে। তখন দেখে মনে হচ্ছে, ফাইনালে গফকে দাঁড়াতে দেবেন না সাবালেঙ্কা। স্ট্রেট সেটে জিতবেন। কিন্তু পিছিয়ে পড়েও লড়াই ছাড়েননি গফ। তাঁর মুখে কোনও হতাশা বা রাগ দেখা যায়নি। দু’জন সম্পূর্ণ বিপরীত। সাবালেঙ্কা যেমন কোর্টেই তাঁর সব অভিব্যক্তি প্রকাশ করে ফেলেন, গফের মুখ দেখে সে সব বোঝা যায় না। ঠিক যেন পাথরের উপর কেউ ভাস্কর্য বানিয়েছেন। চোখ দুটো উজ্জ্বল। সাবালেঙ্কার ভুলের অপেক্ষা করলেন। তার পর তাকে কাজে লাগালেন। প্রথম সেট ১-৪ পিছিয়ে থেকে টাইব্রেকারে নিয়ে যান গফ। সেখানে অবশ্য সাবালেঙ্কার পাওয়ার গেম হারিয়ে দেয় তাঁকে।

গফ বুঝতে পেরেছিলেন, প্রথম সেটেই নিজের বেশির ভাগ শক্তি ব্যয় করে ফেলেছেন সাবালেঙ্কা। ফলে এর পর পাওয়ার গেম খেলতে গেলে তাঁর সমস্যা হবে। সেটাই হল। শটের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকল না। টেনিস সার্কিটে সাবালেঙ্কার থেকে ‘মুডি’ খেলোয়াড় খুব বেশি নেই। তিনি কখন কেমন খেলবেন তা তিনি নিজেও জানেন না। এই এক সেটে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিচ্ছেন, তো পরের সেটে নিজেই উড়ে যাচ্ছেন। গফ সাবালেঙ্কাকে আরও বেশি রাগিয়ে দিলেন। তাতে তাঁর খেলা আরও খারাপ হল। দ্বিতীয় সেটে দাঁড়াতেই পারলেন না সাবালেঙ্কা। তৃতীয় সেটে কিছুটা লড়াই করেছিলেন বটে। কিন্তু তত ক্ষণে খেলা থেকে তাঁর মন উঠে গিয়েছে। তখন তিনি একটা করে ভুল করছেন আর গ্যালারিতে বসা তাঁর কোচের দিকে তাকিয়ে কী সব বলছেন (কোচকে কিছু বলছেন, না নিজের উপরেই রাগ করছেন তা অবশ্য বোঝা যায়নি)। গফ জানতেন, এই সাবালেঙ্কাকে তাঁকে হারাতে হবে না। সাবালেঙ্কা নিজেই হেরে যাবেন। সেটাই হল। প্রথম বার ফরাসি ওপেন জেতা হল না বেলারুসের খেলোয়াড়ের।

সাবালেঙ্কার ব্যাক হ্যান্ড লাইনের বাইরে পড়তেই লাল সুরিকর কোর্টে শুয়ে পড়লেন গফ। মাত্র ২১ বছর বয়সে দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতলেন তিনি। তার পর গ্যালারিতে দৌড়ে গেলেন গফ। তাঁর পরিবার, তাঁর কোচ ও দলের বাকিদের সঙ্গে উৎসবে মাতলেন। অন্য দিকে সাবালেঙ্কা তখন হতাশ হয়ে চেয়ারে বসে। তাঁকে দেখে বোঝা যাচ্ছিল, তখনও নিজের মেজাজকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি তিনি। হারের হতাশায় চোখের জল বাঁধ মানল না। রানার্সের ট্রফি নিতে গিয়ে কেঁদে ভাসালেন সাবালেঙ্কা।

রানার্সের ট্রফি হাতে সাবালেঙ্কা স্বীকার করে নিয়েছেন যে গফ তাঁর থেকে ভাল খেলোয়াড়। তিনি বলেন, “এই রকম কঠিন পরিবেশে গত দু’সপ্তাহ ভাল টেনিস খেলার পর এই হার খুব যন্ত্রণার। তবে গফকে অভিনন্দন। তুমি আমার থেকে ভাল খেলোয়াড়। তুমি লড়াই ছাড়োনি। ভাল খেলেছ। আমাকে ভুল করতে বাধ্য করেছ। দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যামের জন্য তোমাকে শুভেচ্ছা।” তখনও কেঁদে চলেছেন সাবালেঙ্কা। তিনি জানেন, সুযোগ নষ্ট করেছেন তিনি। শিয়নটেককে সেমিফাইনালে হারানোর পর সকলে ভেবেছিলেন তিনিই চ্যাম্পিয়ন হবেন। কিন্তু নিজের ভুলের খেসারত দিতে হয়েছে তাঁকে।

Aryna Sabalenka Coco Gauff
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy