Advertisement
E-Paper

সেই জিম্বাবোয়ে ফাঁড়া কাটিয়ে ধোনির ভারতের ইডেন পার্ক মুক্তি

জিম্বাবোয়ে আর বিশ্বকাপ মানেই কি হঠাৎ করে ঈশান কোণে ভারতের অতর্কিত বিপদ ঘনিয়ে আসবে? আর সেটা সামলাতে স্বয়ং অধিনায়ককে নেমে পড়তে হবে? তিন বার একই জিনিস ঘটল। শনিবারের ইডেন পার্ক। দু’হাজার তিনের হারারে। আর তিরাশিতে কোনটা সবাই জানে! ব্যাট হাতে কপিল। বল হাতে সৌরভ। ব্যাট হাতে ধোনি। এটা হয়তো জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে একটা আশ্চর্য কাকতালীয় যে তিন বারই হারের পাদানিতে বিপন্ন টিম উদ্ধারে নেতাদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা নিতে হল!

গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৫ ০৩:২৫
ধোনির জয়ের ছক্কা। মারকাটারি রায়না। শনিবারের অকল্যান্ড। ছবি: গেটি ইমেজেস

ধোনির জয়ের ছক্কা। মারকাটারি রায়না। শনিবারের অকল্যান্ড। ছবি: গেটি ইমেজেস

জিম্বাবোয়ে আর বিশ্বকাপ মানেই কি হঠাৎ করে ঈশান কোণে ভারতের অতর্কিত বিপদ ঘনিয়ে আসবে? আর সেটা সামলাতে স্বয়ং অধিনায়ককে নেমে পড়তে হবে?

তিন বার একই জিনিস ঘটল। শনিবারের ইডেন পার্ক। দু’হাজার তিনের হারারে। আর তিরাশিতে কোনটা সবাই জানে! ব্যাট হাতে কপিল। বল হাতে সৌরভ। ব্যাট হাতে ধোনি। এটা হয়তো জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে একটা আশ্চর্য কাকতালীয় যে তিন বারই হারের পাদানিতে বিপন্ন টিম উদ্ধারে নেতাদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা নিতে হল!

স্কোরশিট অনুযায়ী জয়ী দলের এক নম্বর প্লেয়ার সুরেশ রায়না। ম্যান অব দ্য ম্যাচও বহু মাস পরে তিনি। রবি শাস্ত্রী অনেক দিন ধরেই তাঁর পিছনে পড়ে আছেন। রায়নাকে সফল টেস্ট প্লেয়ার বানিয়ে ছাড়বেন। ইংল্যান্ড সিরিজে তাঁকে সুযোগ দিয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়াতেও দিয়েছেন। রায়না কিছু করতে পারেননি বললে কমিয়ে বলা হয়। ওভাল আর এসসিজি মিলে চারটে ইনিংসেই গোল্লা করেন। টেস্ট ব্যর্থতার সেই ফাঁসিকাঠ থেকে অকল্যান্ডের সবচেয়ে বিখ্যাত ক্রীড়াকেন্দ্রে রায়না উঠে এলেন ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরি-সহ। বিশ্বকাপে তাঁর জীবনের প্রথম সেঞ্চুরির পর যখন উচ্ছ্বসিত ভাবে তিনি লাফাচ্ছেন, ক্যামেরা ভারতীয় ড্রেসিংরুম ধরল। দাঁড়িয়ে নাগাড়ে হাততালি দিয়ে যাচ্ছেন শাস্ত্রী!

তবু বিপদের ঘনত্বের মাত্রা যেখানে পৌঁছেছিল একা রায়নাতে আজ সামলানো যেত না। মনে হচ্ছিল ছয়ে ছয় আর কিছুতেই হল না। ঠিক এই ডিপ্রেশনের সময় অসীম তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে দেখা দিলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। সফল রান তাড়ায় তিনি ছয় দিয়ে উপসংহার টানবেন এটা সেলিম-জাভেদের কালজয়ী স্ক্রিপ্টের মতো স্বতঃসিদ্ধ হয়ে গিয়েছে। আজ নিয়ে ন’বার হল। কিন্তু ধোনি যখন নেমেছিলেন তখন মাঠ ধরেই নিয়েছে ইডেন পার্কে বড় রান তাড়া করতে না পারার ইতিহাস অব্যাহত থাকল। দুশোর কাছাকাছি রান তখনও লাগবে এবং অকল্যান্ডের বিখ্যাত স্কাই টাওয়ার থেকে স্কাই-জাম্প দেওয়ার সাহসী যদি বা মিডিয়া বক্সে পাওয়া যাচ্ছে, ভারত ম্যাচ বার করবে বলার মতো কেউ নেই।

বরং ইডেন পার্ক ভর্তি করে আসা ভারতীয় সমর্থকদের একাংশে কথাবার্তা শুরু হয়ে গেল, ফাঁড়াটা আজ কেটে গেলে ভাল হল। ল অব অ্যাভারেজ অন্তত নকআউটে আর আক্রমণ করবে না। অনুমান করার তখন ব্যর্থ চেষ্টা করছি ইয়ারা নদীর ধারে ল্যাংহ্যাম হোটেলে বসে মাশরফিরা কী ভাবছেন? নিশ্চয়ই এটাই ভাবছেন যে, দুটো স্পিনার ও রকম বেধড়ক মার খাওয়ার পর দ্যাখ ইন্ডিয়ার ব্যাটিং কঙ্কালটাও কেমন বেরিয়ে পড়ল!

ব্রেন্ডন টেলর এ দিন দুই ভারতীয় স্পিনারকে মোটামুটি জবাই করলেন। দুপুরে খেলা শুরু হতে জিম্বাবোয়ে যখন ৩৩-৩, মিডিয়া বক্সে অনেকে খোঁজ নেওয়া শুরু করেন রাতে অকল্যান্ড দেখার কোনও সাইট সিয়িং ট্যুর আছে কি না? কারণ ম্যাচ তো একটু পরেই শেষ হয়ে যাবে! সেই জিম্বাবোয়ে ইনিংস কি না শেষ হল অশ্বিনের ওয়ান ডে কেরিয়ারের সবচেয়ে খারাপ বোলিং হিসেব দিয়ে। জাডেজা তো টুর্নামেন্ট জুড়েই মেঘে ঢাকা। মনে হচ্ছিল এর পর যদি মাশরফিরা ব্যাটসম্যানদের এক এক করে ব্যর্থতা দেখতে শুরু করেন, তা হলে তো কোয়ার্টার ফাইনালের দিন এই ছবিটগুলোই গেঁথে থাকবে আগেরগুলো মিলিয়ে গিয়ে। আর কে না জানে ওয়ান ডে ক্রিকেটে আত্মবিশ্বাস বস্তুটা টেস্ট ক্রিকেটের চেয়ে বেশি উপকারী। টেস্টে শুধু মোটিভেশন ম্যানেজ করতে পারে না। টেকনিক চাই উপযুক্ত। ওয়ান ডে-র অত চাহিদা নেই।

এরই সঙ্গে মনে পড়ে যাচ্ছিল ভারতের হালফিলের অভিশপ্ত ইডেন পার্ক রেকর্ড। যে রেকর্ড বিবেচনায় অনেক অকল্যান্ডবাসী সমর্থক বলছিলেন, ইন্ডিয়া সেমিফাইনাল এখানে খেলবে না দুঃখের, কিন্তু এক দিক দিয়ে ভালও। এটা ওদের পয়া নয়। ইডেন পার্ক আর ইডেন গার্ডেন্স দুটোতেই ইডেন কিন্তু মিল ততটাই যতটা বেনারসী শাড়ি আর গাউনে। ইডেন পার্ক হল অত্যাধুনিক রাগবি স্টেডিয়াম যা রাগবি বিশ্বকাপের ফাইনাল দেখেছে বছর চারেক আগে। আপাতত ঘটনাক্রমেই সেখানে ক্রিকেট হয়। সাইড বাউন্ডারি তো ছোটই। দু’টো উইকেটের পেছনে কুড়ি-বাইশ গজ জায়গাও আছে কি না সন্দেহ। জেফ টমসন বা শোয়েব বল করলে তো স্লিপের পিছনে আর থার্ড ম্যান রাখারই জায়গা নেই। মাঠটা আধুনিক স্টেডিয়াম হয়েও ক্রিকেটের জন্য বেশ টাফ। কোনও টিমের যদি এখানে লাক কাজ না করে তা হলে মাঠটা আরও মাথায় চেপে বসতে পারে। সেই ছিয়াত্তরে এরাপল্লি প্রসন্নর বোলিং জাদুতে ভারত এখানে জিতেছিল। গাওস্করের প্রথম টেস্ট অধিনায়কত্ব সে বার। কিন্তু তার পর আর ভারতের জন্য বিশেষ পয়া নয়।

মহেন্দ্র সিংহ ধোনি অবশ্য অন্তিম দৃশ্যে একটা ছক্কার নির্ঘোষে জানালেন পুরুষকারের ইতিহাস বদলানোয় কোনও সমস্যা নেই। রায়নার দু’বার ক্যাচ ফেলে দিয়ে জিম্বাবোয়ে আরও ব্যাপারটা সহজ করে দিল। কিন্তু ধোনি যে ফর্মে খেলছিলেন তাতে রায়না বিদায়েও ছক্কা দিয়েই বোধহয় শেষ হত। রেকর্ডের জন্য থাক, তিনি যখন নেমেছিলেন ভারত ৯৪-৪। কোহলি ওয়াংখেড়ে ফাইনালের মতোই ভাল অথচ অতৃপ্তের ইনিংস খেলে বিদায় নিয়েছেন। সমর্থকেরা গভীর আতঙ্কে। অবশ্য ঠিক এই সময়ই তো মহেন্দ্রবাবুর স্ক্রিপ্ট শুরু হয়!

আর এক বার মনে করিয়ে দিই এই নিয়ে ন’বার ওভার বাউন্ডারিতে উইনিং স্ট্রোক মারলেন। আর তার পর বোঝাতে চেষ্টা করলেন এটা মারার বল পেলে নাকি শেষ দিকে হয়ে যায়! এটা যদি বিশ্বাস করতে হয় তা হলে এটাও বিশ্বাস করে নেওয়া ভাল যে, কাল ফর্মুলা ওয়ান গ্রাঁ প্রি ধোনিদের পরের গন্তব্য মেলবোর্ন নয়, নয়াদিল্লিতে হচ্ছে!

স্কোর বোর্ড

জিম্বাবোয়ে

চিভাভা ক ধবন বো শামি ৭

মাসাকাদজা ক ধোনি বো উমেশ ২

সলমন ক ধোনি বো মোহিত ৯

টেলর ক ধবন বো মোহিত ১৩৮

উইলিয়ামস ক এবং বো অশ্বিন ৫০

আরভিন ক এবং বো মোহিত ২৭

সিকন্দর বো শামি ২৮

চাকাবভা ক রোহিত বো উমেশ ১০

প্যানিয়াঙ্গারা ক উমেশ বো শামি ৬

মুপারিওয়া ন.আ. ১

তেন্ডাই শাতারা বো উমেশ ০

অতিরিক্ত ৯। মোট ২৮৭ (৪৮.৫ ওভারে)।

পতন: ১১, ১৩, ৩৩, ১২৬, ২৩৫, ২৪১, ২৭৬, ২৮৫, ২৮৬, ২৮৭।

বোলিং: শামি ৯-২-৪৮-৩, উমেশ ৯.৫-১-৪৩-৩। মোহিত ১০-১-৪৮-৩। অশ্বিন ১০-০-৭৫-১, জাডেজা ১০-০-৭১-০।

ভারত

রোহিত ক সিকন্দর বো প্যানিয়াঙ্গারা ১৬

ধবন বো প্যানিয়াঙ্গারা ৪

কোহলি বো সিকন্দর ৩৮

রাহানে রান আউট ১৯

রায়না ন.আ. ১১০

ধোনি ন.আ. ৮৫

অতিরিক্ত ১৬। মোট ২৮৮-৪ (৪৮.৪ ওভারে)।

পতন: ২১, ২১, ৭১, ৯২।

বোলিং: প্যানিয়াঙ্গারা ৮.৪-১-৫৩-২, শাতারা ১০-১-৫৯-০, মুপারিওয়া ১০-০-৬১-০, সলমন ৫-০-২৯-০, উইলিয়ামস ৫-০-৩১-০, সিকন্দর ৮-০-৩৭-১, মাসাকাদজা ২-০-১৫-০।

world cup 2015 auckland gautam bhattacharya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy