উনত্রিশ বছর আগে ফুটবল থেকে অবসর নিয়েছেন সুব্রত ভট্টাচার্য। কিন্তু অনুশীলন বন্ধ করেননি তিনি। কলকাতায় থাকলে এখনও রোজ ভোর সাড়ে পাঁচটায় উঠে রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে চলে যান সুব্রত। বাড়ি ফিরে সামান্য বিশ্রামের পরে যান পার্ক স্ট্রিটে। বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করে বাড়ি ফেরেন বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ। এ ছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে যাওয়া তো রয়েইছে। করোনা-আতঙ্কেও তাঁর রোজনামচা বদলায়নি। কিন্তু জামাই সুনীল ছেত্রীর ‘ধমক’ খেয়ে আপাতত গৃহবন্দি ভারতীয় ফুটবলের সর্বকালের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার।
শনিবার সকালে রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে অনুশীলনে করে বাড়ি ফেরার পরেই সুনীলের ফোন পান সুব্রত। ভারতীয় দলের অধিনায়ক তাঁকে বাড়ি থেকে বেরোতে বারণ করে দেন। রবিবার হাসতে হাসতে আনন্দবাজারকে সুব্রত বললেন, ‘‘সুনীল খুব ভাল ছেলে। ওকে আর ঋষি কপূরকে আমিই নিয়ে এসেছিলাম মোহনবাগানে। সুনীলের মনটা খুব বড়। সকলের জন্য ও ভাবে। শনিবার ফোন করে ও বলল, স্যর এখন যা পরিস্থিতি, তাতে একদম বাড়ি থেকে বেরোবেন না।’’ সুব্রত যোগ করলেন, ‘‘শনিবার আমার কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল। তাই বেরোনো অত্যন্ত জরুরি ছিল। কিন্তু সুনীল কিছুতেই রাজি হল না। ওঁর কথা ফেলতে পারলাম না।’’
ফুটবলজীবনে কখনও কাউকে ভয় পাননি সুব্রত। তাঁকে সমীহ করতেন বিপক্ষের সেরা স্ট্রাইকারেরাও। এখনও একই রকম রয়ে গিয়েছেন সুব্রত। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও বন্ধুরাও বারবার বারণ করেছেন বাড়ি থেকে বেরোতে। কিন্তু সুব্রতকে আটকানো যায়নি। ভোরবেলা উঠে অনুশীলন থেকে বিকেলের আড্ডা— সবই চালিয়ে গিয়েছে। একমাত্র সুনীলের ট্যাকলেই কুপোকাত মোহনবাগানের ঘরের ছেলে।
কী ভাবে অসাধ্য সাধন করলেন? রবিবার বেঙ্গালুরু থেকে গৃহবন্দি সুনীল ফোনে বলছিলেন, ‘‘কোচকে বোঝালাম, পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর। সংক্রমণ যে ভাবে দ্রত ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে বাড়ির বাইরে যাওয়া একেবারেই ঠিক নয়। আপনি যেখানে যেখানে যাবেন, সেখানে কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না কেউ জানে না। আপনি আক্রান্ত হলে, বাড়ির অন্যদেরও হবে। এই অবস্থায় বাড়ির বাইরে যাওয়া একেবারেই ঠিক হবে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতেই থাকতে অনুরোধ করেছি আপনাকে।’’
সুব্রতর কোচিংয়েই কলকাতা ময়দানে অভিষেক হয় সুনীলের। তাই প্রাক্তন গুরুকে কখনও তিনি স্যর বলেন। কখনও আবার কোচ সম্বোধন করেন ভারতীয় দলের সর্বকালের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার। শুধু সুব্রত নয়, শ্যালক সাহেব ভট্টাচার্যকেও বাড়ির বাইরে না যাওয়ার অনুরোধ করেছেন সুনীল। বলছিলেন, ‘‘শুধু কোচকেই নয়। পাশাপাশি সাহেবকেও বাড়ির বাইরে বেরোতে বারণ করে দিয়েছি। ন্যূনতম ঝুঁকিও নেওয়া যাবে না।’’
গৃহবন্দি থাকার অনুভূতিটা কেমন? সুব্রত বললেন, ‘‘সময় কাটানো একটু সমস্যার। তা ছাড়া প্রদীপদার (পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়) প্রয়াণের যন্ত্রণা এখনও ভুলতে পারিনি। টেলিভিশনে বিভিন্ন খবরের চ্যানেল দেখছি। তাতে অবশ্য উদ্বেগ বাড়ছে। এ ছাড়া গল্পের বই পড়ে, গান শুনে সময় কাটানোর চেষ্টা করছি।’’ এর পরেই হাসতে হাসতে যোগ করলেন, ‘‘আমার পক্ষে বাড়িতে বসে থাকা খুব কঠিন। কিন্তু কিছু করার নেই। আমি ভয় না পেলেও বাড়ির সকলেই প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন। ওদের জন্যই আমাকে গৃহবন্দি থাকতে হচ্ছে।’’