ভারতীয় ক্রিকেটের মিয়াঁ ফিরলেন তাঁর শহর হায়দরাবাদে। বুধবার ভোরবেলা তাঁকে দেখার জন্য ভিড় জমেছিল হায়দরাবাদের বিমানবন্দরে। সিরাজ কোনও রকমে দর্শকদের ভিড় এড়িয়ে গাড়িতে উঠে এগিয়ে যান বাড়ির উদ্দেশে।
বন্ধুরা মিলে বিশেষ উপহার তৈরি করে রেখেছিলেন তাঁর জন্য। ইংল্যান্ড সফরের সর্বোচ্চ উইকেশিকারি তিনি। উইকেট পেয়েছেন মোট ২৩টি। তাঁর জন্য ২৩টি গোলাপ দিয়ে তৈরি করা ফুলের তোড়া হাতে তুলে দেন বন্ধুরা। বিমানবন্দরে ভিড়ের মধ্যে সেই সুযোগ পাননি। তাই একেবারে বাড়ি চলে যান পাড়ার বন্ধুরা।
সিরাজের দাদা মহম্মদ ইসমাইল আপ্লুত। সিরাজের ঘরে ফেরার পরে তিনি বলছিলেন, ‘‘খুব ভাল লাগছে। আজ মা-ও খুব খুশি। ওর প্রিয় খাবার রান্না করা হয়েছে বাড়িতে। আজ ও প্রাণ খুলে একটু পছন্দেরখাবার খাক।’’
হায়দরাবাদের ফার্স্ট ল্যান্সারে বুধবার ছিল উৎসবের মেজাজ। সকলের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে সিরাজের পরিবার থেকে। পাড়ার লোকেরাও তাঁদের প্রিয় সিরাজকে এক বার দেখার জন্য ভিড় করেছিলেন বাড়ির সামনে। সিরাজ এক বার বাড়ির বাইরে বেরিয়ে সকলের উদ্দেশে হাত নাড়েন। সকলকে জানান, তিনি খুব ক্লান্ত। কারণ, অনেকটা যাত্রা করে ফিরেছেন। সামান্য বিশ্রাম না নিলে এই ধকল কাটবে না।
ইংল্যান্ডে টানা পাঁচটি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। মোট ১১১৩ বল করেছেন। যে কোনও পেসারের কাছেই যা স্বপ্নের মতো। সিরাজের দাদা বলছিলেন, ‘‘ওর মতো বোলারের কাছ থেকে সারা দেশ আশা করেছিল এই জয়ের। সিরাজ চেষ্টা করেছে সকলের ইচ্ছেপূরণ করার। আপাতত কয়েক দিন বিশ্রাম নেবে। পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের জন্য অনেক উপহার এনেছে।’’
প্রত্যেক বারের মতো এ বারও সিরাজ দেশে ফিরে বিকেলের দিকে গিয়েছিলেন তাঁর বাবার সমাধিতে। সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে সময় কাটান। তার পরে বাড়ি ফিরে আসেন। তাঁর বন্ধু মহম্মদ শাফির কথায়, ‘‘আজ কিছুক্ষণের জন্য গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার সকলে মিলে আবার সেখানে যাওয়া হবে। এখানে যত দিন ও থাকে, বেশির ভাগ দিনই এক বার করে সেখানে যায়। নীরবে কিছুক্ষণ কাটায়। আবার ফিরে আসে।’’
সিরাজের বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন তাঁর মা। বেশ কিছু প্রিয় পদ রান্না করে রেখেছেন। বিরিয়ানি হয়েছে কি? সিরাজের দাদা বলছিলেন, ‘‘নিশ্চয়ই। বিরিয়ানির পাশাপাশি আরও যা যা খেতে ভালবাসে সবই হয়েছে। ওর এটা প্রাপ্য।’’
সিরাজ তাঁর বন্ধুদের জন্য একাধিক উপহার এনেছেন। ইংল্যান্ড যাওয়ার আগে তাঁর বন্ধু শাফি আবদার করেছিলেন, ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের জার্সি আনার। একেবারে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের স্টোর থেকেই নিয়ে এসেছেন তিনি। সিরাজের প্রিয় বন্ধু বলছিলেন, ‘‘আজ এত ক্লান্ত থাকা সত্ত্বেও ওর বাড়ি গিয়েছিলাম। আমরা বন্ধুরা মিলে ২৩টি গোলাপ দিয়ে একটি তোড়া তৈরি করেছি। সেটাই দিতে গিয়েছিলাম।’’ যোগ করেন, ‘‘গিয়ে দেখি, আমাদের সকলের জন্য ও উপহার নিয়ে এসেছে। ম্যান ইউনাইটেডের জার্সি থেকে ভাল ঘড়ি। কিছুই বাদ নেই।’’
বৃহস্পতিবার বন্ধুদের সঙ্গে নৈশভোজ করার কথা ভারতীয় ক্রিকেটের মিয়াঁর। শাফি বলছিলেন, ‘‘অনেক দিন একসঙ্গে বসে বিরিয়ানি খাইনি। টেনিস বলে ওর সঙ্গে বহু দিন ক্রিকেট খেলাও হয়নি। কাল থেকে সব কিছু করব। ও টেনিস বলে অসাধারণ ব্যাট করে।’’
ওভালে টেস্ট জেতানোর পর থেকে সিরাজ যেন আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন ভারতীয় সমর্থকদের কাছে। বিরাট কোহলির বোন ভাবনা কোহলিও মুগ্ধ সিরাজের খেলায়। এ দিন ইনস্টাগ্রামে তিনি দু’টো ছবি তুলে দিয়েছেন। একটায় দেখা যাচ্ছে, লর্ডসে হারার পরে হাঁটু মুড়ে পিচের উপরে বসে আছেন সিরাজ। অন্যটায় গাস অ্যাটকিনসনের স্টাম্প ছিটকে দিয়ে দু’হাত ছড়িয়ে উৎসব করছেন। ছবি দু’টির সঙ্গে বিরাটের বোন লিখেছেন, ‘‘খেলার দুনিয়া সব সময়ই বিস্মিত করে। মাঠে জন্ম নেয় নায়কেরা। যারা আমাদের শেখায় কখনও আশা না ছাড়তে। ইতিবাচক থাকতে শেখায়। মহম্মদ সিরাজ, তুমি অসাধারণ।’’
ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অলরাউন্ডার মইন আলিও প্রশংসা করেছেন সিরাজের। তিনি বলেছেন, ‘‘ইংল্যান্ড সিরিজ়ে সিরাজ অসাধারণ বল করেছে। আক্রমণাত্মক মনোভাব, আগ্রাসন সব কিছু রয়েছে ওর বোলিংয়ে।’’ যোগ করেন, ‘‘ও ম্যাচ জেতাতে পারে। যে কোনও ব্যাটসম্যানের পক্ষে ওকে সামলানো কঠিন।’’
একটি টেস্ট সিরিজ় আরও জনপ্রিয় করে তুলল ভারতীয় পেসারকে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)