E-Paper

এ বার সাদা বলে খেলার স্বপ্ন নিয়ে এগোচ্ছেন আকাশ

শনিবার এক দিনের ছুটিতে কলকাতায় এসেছেন আকাশ। গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি বেঙ্গালুরুতে বোর্ডের সেন্টার অব এক্সেলেন্সে (সিওই) রিহ্যাব করছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২৫ ০৯:০৯
আকর্ষণ: আকাশকে পুরস্কৃত করছেন সৌরভ।

আকর্ষণ: আকাশকে পুরস্কৃত করছেন সৌরভ। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাফল্য এক নতুন দরজা খুলে দিতে পারে ক্রিকেটারদের জন্য। জনপ্রিয়তার দরজা। শনিবার সিএবির বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসে সেই জনপ্রিয়তার দরজা দিয়েই প্রবেশ করলেন আকাশ দীপ। যে দিকে যাচ্ছেন, সে দিকেই ভিড় করছেন তরুণ ক্রিকেটারেরা। অপেক্ষা একটি নিজস্বীর। অথবা সইয়ের।

আকাশ দীপ এ রকম পরিস্থিতিতে আগে কি কখনও পড়েছেন? ইংল্যান্ড সিরিজ়ে তিন ম্যাচে ১৩ উইকেট পাওয়ার পরে এই প্রথম এসেছেন কলকাতায়। তাঁর প্রতি সকলের ভালবাসা দেখে অবাক আকাশ। বলছিলেন, ‘‘ভাবতে পারিনি সকলে এতটা আপন করে নেবেন আমাকে। গত বারও আমাকে নিয়ে এতটা উন্মাদনা ছিল না। এ বার পরিস্থিতি একেবারে অন্য রকম। এত ভালবাসা পেয়ে ভাল লাগছে।’’

আকাশকে বিশেষ পুরস্কার দেয় সিএবি। স্বয়ং সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায় সেই পুরস্কার তুলে দেন আকাশের হাতে। মঞ্চে আকাশের সামনেই সৌরভ বলেন, ‘‘আকাশ দীপ যখন এজবাস্টনে দারুণ বল করছিল, আমি চেয়েছিলাম আমার বিমান যেন নির্ধারিত সময়ের পরে আসে। যাতে ওর পাঁচ উইকেট নেওয়া দেখতে পারি। আমি নিশ্চিত এই প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত প্রত্যেকে আমারই মতো আকাশের সাফল্যের অপেক্ষায় ছিলেন। আকাশকে আগামীর শুভেচ্ছা। আমি চাই ও আরওউন্নতি করুক।’’

সৌরভের কথায় আকাশও আপ্লুত। বলেন, ‘‘ভাল না খেললে নিশ্চয়ই সৌরভ স্যর প্রশংসা করতেন না। তাঁর মুখ থেকে এই কথা শোনার পরে মনে হচ্ছে সত্যি ভাল কিছুকরে এসেছি।’’

শনিবার এক দিনের ছুটিতে কলকাতায় এসেছেন আকাশ। গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি বেঙ্গালুরুতে বোর্ডের সেন্টার অব এক্সেলেন্সে (সিওই) রিহ্যাব করছিলেন। শনিবার রাতেই ফিরে গেলেন বেঙ্গালুরু। রবিবার থেকে বোলিং শুরু করবেন নেটে। বলছিলেন, ‘‘এখন অনেকটাই ফিট। কোমর অথবা কুঁচকিতে আর সমস্যা হচ্ছে না। রবিবার থেকে নেটে বোলিং শুরু করব।’’ অক্টোবরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে আসন্ন টেস্ট সিরিজ়ের আগে কি তিনি ফিট হতে পারবেন? আকাশ বলে দিচ্ছেন, ‘‘নিঃসন্দেহে। ফিটনেস নিয়ে খুব একটা সমস্যা নেই। এত দিন টেস্ট সিরিজ়ের পরে কয়েক দিন বিশ্রামের প্রয়োজন ছিল। সেটা হয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দ্রুত ফিরতে চাই।’’

ভারতের হয়ে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে এখনও অভিষেক হয়নি আকাশের। ১০টি টেস্ট খেলেছেন। কিন্তু দেশের হয়ে তিন ধরনের ক্রিকেটেই খেলারই স্বপ্ন দেখেন তিনি। আকাশ মনে করেন, সাদা বলের ক্রিকেটে বৈচিত্র অনেক বেশি প্রয়োজন। আপাতত সেই দিকেই নজর দিচ্ছেন তিনি। বাংলার তারকা পেসার বলছিলেন, ‘‘আমি নিজেকে তিন ফর্ম্যাটের জন্য তৈরি করতে চাই। দেশের হয়ে সাদা বলের ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন বহু দিনের। নিজেকে সেই ভাবে তৈরি করতে চাই।’’ যোগ করেন, ‘‘সাদা বলের ক্রিকেটে বৈচিত্র অনেক বেশি প্রয়োজন। উন্নতি করতে হবে।’’

বর্তমান ক্রিকেটে ‘ওয়ার্কলোড’ শব্দটি খুব পরিচিত। মহম্মদ সিরাজ ছাড়া ইংল্যান্ড সফরে ভারতের কোনও পেসারই টানা পাঁচ টেস্ট খেলেননি। যশপ্রীত বুমরা ও আকাশ খেলেছেন তিনটি করে টেস্ট। অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণ দেখিয়ে না খেলার সিদ্ধান্ত কি ক্রিকেটারেরা নিতে পারেন? আকাশের উত্তর, ‘‘ওয়ার্কলোডের বিষয়টি ডাক্তার-ফিজ়িয়োর উপরে নির্ভর করে। ওরা বলে দেয়, কখন বিশ্রাম প্রয়োজন। আমাদের হাতে কিছু থাকে না। প্রত্যেক ম্যাচের পরে ফিজ়িয়ো ও ডাক্তারের সঙ্গে আমরা কথা বলি। তাঁদের নির্দেশ অনুযায়ী চলতে হয়।’’

ইংল্যান্ড সফরে শুধু বোলিংয়েই নয়, ব্যাট হাতেও চমক দেখিয়েছিলেন আকাশ। এজবাস্টনে ১০ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ওভালে তাঁর ৬৬ রানের ইনিংস হাসি ফুটিয়েছিল কোচ গৌতম গম্ভীরের মুখে। ভারতের জয়ের নেপথ্যে বড় ভূমিকা পালন করে আকাশের এই ইনিংস। ১০ উইকেট না ৬৬ রান, কোনটা বেশি এগিয়ে রাখবেন? আকাশের উত্তর, ‘‘যে পারফরম্যান্স দলকে জেতাবে, সেটাই আমার প্রিয়। তাই ১০ উইকেট আর ৬৬ রান দু’টোই আমার কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমি বোলার। বল হাতে ম্যাচ জেতাতে বেশি ভালো লাগে।’’ যোগ করেন, ‘‘ভাল খেলতে পরিশ্রম করতেই হয়। ১০ উইকেট নেওয়ার কথা ভেবে বল করিনি। নিজের ছন্দে বলকরার উপরে জোর দিয়েছি। জানতাম, কোনও দিন ফল পাব, কোনও দিন পাব না। ওইদিন পেয়েছি। পাশাপাশি দল জিতেছে, সেটা বাড়তিখুশির ব্যাপার।’’

শুভমন গিলের নেতৃত্বে খেললে আকাশের নাকি ভাগ্য খুলে যায়। দলীপ ট্রফিতে এক বার শুভমনের নেতৃত্বে খেলে সফল হয়েছিলেন। ইংল্যান্ড সফরেও নজর কেড়েছেন। আকাশ বলছিলেন, ‘‘ইংল্যান্ডে শুভমন নিজে অসাধারণ খেলেছে। অধিনায়ক ভাল খেললে বাকিদের ওপর থেকে চাপ এমনিতেই কমে যায়।’’ যোগ করেন, ‘‘ওর নেতৃত্বে খেললে ভাগ্য খুলে যায়। দলীপেও শুভমনের অধিনায়কত্বে ৯-১০ উইকেট পেয়েছিলাম। ইংল্যান্ড সফরেও সফল হলাম। ক্রিকেটারদের উপরে ও আস্থা রাখে। স্বাধীনতা দেয়। এক জন অধিনায়কের যা যা প্রয়োজন, ওর মধ্যে তা আছে।’’

দেশের জার্সিতে সফল আকাশ বাংলার হয়ে রঞ্জি ট্রফি জেতার স্বপ্ন দেখেন। বলছিলেন, ‘‘আমার সবচেয়ে বড় লক্ষ্য রঞ্জি জয়। দু’বার কাছে গিয়েও ট্রফি জেতা হয়নি। সুযোগ পেলে আর ভুল করতে চাই না।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sourav Ganguly india cricket team

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy