বিহারের সাসারামে রমরমিয়ে চলত টেনিস বলের ক্রিকেট। প্রত্যেক প্রতিযোগিতায় থাকত বিভিন্ন সব উপহার। ম্যাচ পিছু পাঁচশো টাকার পাশাপাশি জিতে নেওয়ার সুযোগ ছিল টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, এমনকি মোটরবাইকও। সে রকমই এক প্রতিযোগিতায় ব্যাট হাতে দলকে জিতিয়ে টিভি পেয়েছিলেন বাংলার আকাশ দীপ।বল হাতে যেমন তিনি জ্বলে উঠেছিলেন, ব্যাট হাতেও জনপ্রিয় হয়েছিলেন টেনিস বলের ক্রিকেটে। সাসারামে এক নামে সকলে চিনতেন তাঁকে। টেনিস বলের ক্রিকেট খেলে দুবাই গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পরেই এক প্রতিযোগিতায় দলকে জেতাতে হত তাঁকে। আকাশ আটটি ছয় মেরে অর্ধশতরান করেছিলেন। একাধিক উপহার নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন।
বাংলার কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্ল বলছিলেন, ‘‘প্রথম দিন থেকে লক্ষ্য করতাম, ওর হাতে বড় শট আছে। কিন্তু ও যে ভাল ব্যাটসম্যান সেটা নিজেই বিশ্বাস করে না।’’ যোগ করেন, ‘‘টেনিস বলের ক্রিকেটে ব্যাট হাতে জিতিয়ে অনেক বার টিভি, ফ্রিজ পেয়েছে। এমনকি বাংলাকেও অনেক ম্যাচে ব্যাট হাতে সাহায্য করেছেন।’’ ওভালে ৯৪ বলে তাঁর ৬৬ রানের ইনিংস দেখে অনেকেই আশ্চর্য হবেন। নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নেমে যশস্বী জায়সওয়ালের সঙ্গে ১০৭ রানের জুটি গড়েছেন। তাঁর এই ইনিংস নিঃসন্দেহে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে ভারতীয় দলের। কিন্তু এই যশস্বীর বিরুদ্ধেই অনূর্ধ্ব-২৩ ক্রিকেটে প্রথম অর্ধশতরান করেছিলেন আকাশ।
বাংলার অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে অভিষেক ম্যাচে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে ২৮ বলে ৫৫ রান করেছিলেন আকাশ। মেরেছিলেন ছ’টি ছক্কা। তাঁর সেই ইনিংস দেখে হয়তো হতাশ হয়েছিল যশস্বী। কারণ, আকাশের ব্যাটিংয়ের কারণে মুম্বই পিছিয়ে পড়েছিল। শনিবার ওভালে সেই আকাশের ব্যাটিং অন্য প্রান্ত থেকে মুগ্ধ হয়ে দেখছিলেন যশস্বী। সৌরাশিস লাহিড়ী বলছিলেন, ‘‘অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে ব্যাট হাতেই প্রথমে জ্বলে উঠেছিল ও। তখন ওর ২১ বছর বয়স। ইডেনের মতো মাঠে বড় বড় ছক্কা হাঁকিয়ে মুম্বই বোলারদের মেরুদণ্ড গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। সেই দলে যশস্বী, সরফরাজ় খান, হার্দিক তামোরের মতো ক্রিকেটারেরা খেলেছিল। তাদের বিরুদ্ধে রান করার পাশাপাশি সাত উইকেটও নিয়েছিল।’’
বাংলার হয়ে ঝাড়খণ্ডের বিরুদ্ধে রঞ্জি ট্রফিতেও ১৮ বলে অর্ধশতরান করেছিলেন আকাশ দীপ। ব্যাট হাতে তাঁর তাণ্ডব নতুন নয়। তবে বাংলার প্রাক্তন কোচ অরুণ লালের একটাই আক্ষেপ, ২০১৯-এর রঞ্জি ফাইনালে আকাশ যদি ক্রিজ়ে টিকতেন। বাংলা প্রথম ইনিংসে এগিয়ে যেতে পারত। অরুণ বলছিলেন, ‘‘আকাশ ভাল করলে সব চেয়ে গর্ববোধ করি আমি। আজ কী অসাধারণ ব্যাট করল। বাংলাকেও ব্যাট হাতে অনেক ম্যাচ জিতিয়েছে। কিন্তু ও নিজেই বিশ্বাস করে না যে ও ভাল ব্যাট করতে পারে।’’ যোগ করেন, ‘‘রঞ্জির কোয়ার্টার ফাইনালে ও আট ছক্কা হাঁকিয়ে অর্ধশতরান করেছিল। একটাই আফসোস ফাইনালে রান পেল না। ও ইনিংস ধরে নিলে আমরাইচ্যাম্পিয়ন হতাম।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)