Advertisement
E-Paper

‘দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেও রেয়াত করা হবে না’! জাহানারা-কাণ্ডে পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির

বাংলাদেশের ক্রিকেটার জাহানারা আলম দেশের প্রাক্তন নির্বাচক মঞ্জুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থা-সহ একাধিক গুরুতর অভিযোগ করেছেন। সেই ঘটনায় মুখ খুলেছেন বোর্ডের সভাপতি।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৫ ১১:২০
cricket

জাহানারা আলম। —ফাইল চিত্র।

মঞ্জুরুল ইসলাম সব অভিযোগ অস্বীকার করলেও বিষয়টি হালকা ভাবে নিচ্ছে না বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বাংলাদেশের মহিলা দলের প্রাক্তন নির্বাচক মঞ্জুরুলের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থা-সহ একাধিক গুরুতর অভিযোগ করেছেন জাহানারা আলম। মহিলা দলের প্রাক্তন অধিনায়কের অভিযোগ ঘিরে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। বোর্ডের সভাপতি আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, কাউকে রেয়াত করা হবে না।

জাহানারার অভিযোগের পর একটি সাংবাদিক বৈঠক করেছেন আমিনুল। সেখানেই তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, জাহানারার অভিযোগ নিয়ে কী ভাবছে বোর্ড? আমিনুল বলেন, “আপনারা একটা প্রশ্ন করেছেন। আমার জবাব, দোষী প্রমাণিত হলে রেয়াত করা হবে না।” আমিনুল আরও বলেন, “দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেও রেয়াত করা হবে না। আমরা তো সাধারণ ক্রিকেট কর্তা। যদি আমি গিয়ে কাউকে হেনস্থা করি, আর যদি তা প্রমাণিত হয়, তা হলে আমিও শাস্তি পাব। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন।”

তবে সেই সঙ্গে আমিনুল জানিয়েছেন যে, তাঁরা তাড়াহুড়ো করতে চাইছেন না। ন্যায্য তদন্তের কথা বলেছেন তিনি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি বলেন, “যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তা হলে কাউকে রেয়াত করা হবে না। কিন্তু এই ধরনের অভিযোগের উপর একজনের জীবন নির্ভর করে। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে কারও জীবন নষ্ট হতে পারে। অভিযুক্তদেরও সময় দিতে হবে। সেই কারণ, তদন্তে সময় লাগবে।”

জাহানারার অভিযোগের পর তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি তারিক উল হাকিম। বাকিরা হলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের এক আধিকারিক রুবাবা দোয়ালা ও দেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সিরাজ শুক্ল। তাঁদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তদন্ত করে ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে।

‘ক্রিকবাজ়’ জানিয়েছে, বাংলাদেশের মহিলা ক্রিকেট দলের সঙ্গে যুক্ত চার আধিকারিককে তদন্তে সহযোগিতার জন্য নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁরা হলেন, ম্যানেজার গোলাম ফৈয়াজ, ফিজিয়ো সুরাইয়া আখতার, কোচ মাহমুদ ইমন ও কো-অর্ডিনেটর সরফরাজ় বাবু।

সাংবাদিক বৈঠকে আমিনুলের সঙ্গে ছিলেন বোর্ডের আরও এক কর্তা শানিয়ান তানিম। তিনি বলেন, “বোর্ডের কর্মী হোক বা ডিরেক্টর, অভিযোগ উঠলে সকলের বিরুদ্ধে তদন্ত হবে। যদি তদন্ত কমিটি শাস্তি দিতে বলে, সঙ্গে সঙ্গে তা মানা হবে। কাউকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে না।”

কী অভিযোগ করেছিলেন জাহানারা?

সাংবাদিক রিয়াসাদ আজ়িমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাহানারা বাংলাদেশের মহিলাদের দলের প্রাক্তন নির্বাচক মঞ্জুরুল এবং মহিলাদের ক্রিকেটের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রাক্তন কর্তা প্রয়াত তৌহিদ মেহমুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এ ছাড়াও জাতীয় দলের প্রাক্তন কয়েক জন সাপোর্ট স্টাফ তাঁর ক্রিকেটজীবন নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বলেও অভিযোগ করেন জাহানারা। বিসিবির তৎকালীন উচ্চপদস্থ কর্তাদের জানিয়েও লাভ হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি। জাহানারা বলেন, ‘‘আমি একাধিক বার আপত্তিকর প্রস্তাব পেয়েছি। দলের মধ্যে থাকলে অনেক কিছু প্রকাশ্যে বলা যায় না। চাইলেও বলা যায় না। বিশেষ করে বিষয়টি আপনার রুটি-রুজির সঙ্গে জড়িত হলে এবং তেমন পরিচিতি না থাকলে সব সময় প্রতিবাদ করা যায় না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ক্রিকেটই আমার পরিবার। তাই আমার অবশ্যই কথা বলা উচিত। আরও ১০টা মেয়ের নিরাপত্তার স্বার্থে বলব। আমি নিজেকে বাঁচাতে পেরেছিলাম। অনেকে সেটা না-ও করতে পারে। বা এই বিষয়গুলোকে ততটা গুরুত্ব দেবে না। তাতে যে যা খুশি করার সুযোগ পেয়ে যাবে। পৃথিবীতে ভাল লোক যেমন রয়েছে, তেমন খারাপ লোকও রয়েছে। আমি চাই মেয়েদের জন্য একটা নিরাপদ পরিবেশ। যাতে ওরা নিশ্চিন্তে ক্রিকেট খেলতে পারে।’’

প্রাক্তন নির্বাচকের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ, ‘‘২০২২ সালের বিশ্বকাপের সময় মঞ্জুরুল ভাই আমাকে দ্বিতীয় বার কুপ্রস্তাব দিয়েছিলেন। এক-দেড় বছর ধরেই এগুলো করছিলেন উনি। আমার উচিত ছিল, তখনই বিষয়টি বিসিবিকে জানানো। কিন্তু কার কাছে যেতাম? বিসিবির তৎকালীন ক্রিকেট বিষয়ক প্রধান নাদেল চৌধুরী স্যরকে বেশ কয়েক বার জানিয়েছিলাম। তাতে সাময়িক ভাবে পরিস্থিতি ঠিক হত। মঞ্জুরুল ভাই দু’-চার দিন ঠিক থাকতেন। আবার হেনস্থা শুরু করতেন। আবার নাদেল স্যরকে জানাতাম। কিন্তু স্থায়ী সমাধান হত না।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘২০২১ সালে তৌহিদ ভাই আমাকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন জাতীয় দলের সাপোর্ট স্টাফ সরফরাজ় বাবুকে দিয়ে। বিভিন্ন জায়গায় প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। জানি না, কেন তাঁরা আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করতেন। এই বিষয়গুলোকে সরিয়ে রেখে ভাল খেলার অনেক চেষ্টা করেছি। নানা ভাবে এড়িয়ে যেতাম। তার পর মঞ্জুরুল ভাই আমাকে হেনস্থা, অপদস্থ, অপমান করতে শুরু করলেন। ওই পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারতাম না।’’ জাহানারা জানিয়েছেন, তৌহিদ সরাসরি তাঁকে কখনও কুপ্রস্তাব দেননি। সরফরাজ়ের মাধ্যমে প্রস্তাব পাঠাতেন। তবে মঞ্জুরুল নানা অছিলায় গায়ে হাত দিতেন।

তা নিয়ে বাংলাদেশের একটি ইউটিউব চ্যানেল এবং দৈনিক পত্রিকা ‘প্রথম আলো’ যোগাযোগ করে মঞ্জুরুলের সঙ্গে। তিনি সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। মঞ্জুরুলের দাবি, জাহানারার সব অভিযোগ মিথ্যে এবং ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, ‘‘প্রথমেই বলতে চাই জাহানারা আলমকে আমি শ্রদ্ধার চোখে দেখি। উনি দীর্ঘ দিন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেবা করেছেন। দীর্ঘ দিন জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন। কিন্তু উনি যে অভিযোগগুলো করছেন, সেগুলোর সত্যতা কতটুকু? অভিযোগ উনি করতেই পারেন। আমিও করতে পারি। কিন্তু কতটা সত্যি সেটা জানা দরকার। এটা গুরুত্বপূর্ণ। যখনকার কথা বলে হচ্ছে, তখন আমি দলের সঙ্গেই ছিলাম। তখন কেন বলা হয়নি? তখন তো কোনও অভিযোগ করা হয়নি। চাইলে তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থার কাছেও অভিযোগ করতে পারতেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড অত্যন্ত পেশাদার সংস্থা। জাহানারার মতো খেলোয়াড়, অধিনায়ক কোনও অভিযোগ করলে বোর্ড নিশ্চই পদক্ষেপ করত। ক্রিকেটারদের রক্ষা করার দায়িত্ব বোর্ডের। বোর্ড সব সময় ক্রিকেটারদের পাশে থাকে।’’

ঋতুস্রাব নিয়ে জাহানারাকে কখনও কিছু জিজ্ঞাসা করেছেন? জবাবে মঞ্জুরুল বলেন, ‘‘একদমই না। কোথায় বলেছি, কবে বলেছি? প্রমাণ কোথায়? তেমন কিছু হলে ওঁর সতীর্থদের কেউ তো জানবেন। তাঁরা বলুন।’’ খেলোয়াড়দের উৎসাহ দেওয়ার নামে জড়িয়ে ধরা, শরীরের বিভিন্ন জায়গা স্পর্শ করার অভিযোগও মানতে চাননি মঞ্জুরুল। পাল্টা চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন, ‘‘যে কোনও তদন্তের মুখোমুখি হতে রাজি আমি। যে কোনও সময় বাংলাদেশে গিয়ে কথা বলতে পারি। যখন বলা হবে, তখনই যাব। তদন্ত কমিটি আমাকে যা বলবে, তা-ই করব।’’ তাঁর আরও দাবি, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও তাঁকে যৌন হয়রানির অভিযোগ নিয়ে কখনও কিছু বলেনি।

তা হলে কেন এমন অভিযোগ উঠছে মঞ্জুরুলের বিরুদ্ধে? তিনি বলেন, ‘‘আমার জানা নেই। শৃঙ্খলা এবং নিয়মের ব্যাপারে খুব কঠোর ছিলাম। সেটাই বোধহয় মূল সমস্যা ছিল। খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারেও কঠোর থাকতাম। কারণ বাইরের কিছু খেলে ক্রিকেটারদেরই ক্ষতি। এটা যদি খারাপ কাজ হয়, তার জন্য যদি আমার শাস্তি হয়, তা হলে আমার কোনও আপত্তি নেই। হতে পারে দলে জায়গা না পাওয়ার হতাশা।’’ মঞ্জুরুল জানিয়েছেন, তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হলেও কারও বিরুদ্ধে মানহানির মামলা বা কোনও আইনি পদক্ষেপ করবেন না।

Bangladesh Cricket Board Jahanara Alam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy