চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের প্রথম প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ। ২০ ফেব্রুয়ারি দুবাইয়ে মুখোমুখি হবে দু’দল। যে কোনও প্রতিযোগিতায় প্রথম ম্যাচ সব সময় কঠিন হয়। পিচের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটীয় বিষয় থাকে। তিন ধরনের ক্রিকেটের মধ্যে এক দিনের আন্তর্জাতিকে বাংলাদেশ সব চেয়ে সফল। স্বাভাবিক ভাবেই প্রথম ম্যাচে সতর্ক থাকতে হবে গৌতম গম্ভীর, রোহিত শর্মাদের।
সার্বিক দলগত শক্তি বা মুখোমুখি লড়াইয়ের পরিসংখ্যানের নিরিখে বাংলাদেশের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে ভারত। তবু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বড় প্রতিযোগিতায় প্রথম প্রতিপক্ষকে হালকা ভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। ভারতীয় শিবিরও তা বিলক্ষণ জানে। নাজমুল হোসেন শান্তর দলের শক্তি এবং দুর্বলতা নিয়ে নিশ্চিত ভাবে কাটা ছেঁড়া করবে ভারতীয় শিবির। দেখে নেওয়া যাক ক্রিকেটের কোন বিভাগে শক্তিশালী বাংলাদেশ। কোন ক্ষেত্রে শান্তেরা পিছিয়ে।
টপ অর্ডার: ব্যাটিং শক্তির নিরিখে বিশ্বের সেরা দলগুলির মধ্যে বিবেচনা করা হয় না বাংলাদেশকে। সব চেয়ে বড় সমস্যা ব্যাটারদের ধারাবাহিকতার অভাব। এক-দু’জন ছাড়া বাংলাদেশের ব্যাটারেরা বড় শট নিতে পারেন না। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও ছয় মারার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যাটারেরা বেশ পিছিয়ে অন্য দেশগুলির তুলনায়। এক দিনের ক্রিকেটেও সেই সমস্যা রয়েছে। তবে ওপেনার সৌম্য সরকারের ফর্মে থাকা বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক। সাদা বলের ক্রিকেটে ধারাবাহিক ভাবে রান করছেন তিনি। হাতে বড় শট রয়েছে তাঁর। ইনিংসের শুরুতে দ্রুত রান তুলতে পারেন। আর এক ওপেনার তানজ়িদ হাসানও ফর্মে রয়েছেন। তবে দ্রুত রান তোলার ক্ষেত্রে তিনি দক্ষ নন। জুটি হিসাবেও তাঁরা দারুণ কিছু করতে পারেননি। তিন নম্বরে ব্যাট করেন অধিনায়ক শান্ত। গত নভেম্বরের পর এক দিনের ক্রিকেট খেলেননি তিনি। হাতে তেমন বড় শট নেই। দ্রুত রান তোলার ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়েছে। সব চেয়ে বড় সমস্যা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ফর্মে ছিলেন না। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের টপ অর্ডার ভারতের তুলনায় দুর্বল। পাওয়ার প্লের সুবিধা তারা কতটা কাজে লাগাতে পারবেন, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
মিডল অর্ডার: ব্যাটিং অর্ডারের চার নম্বরে নামেন মেহদি হাসান মিরাজ়। দক্ষ অলরাউন্ডার। হাতে বড় শটের অভাব থাকলেও ফর্মে রয়েছেন। ধারাবাহিক ভাবে রান করছেন। তিনি মিডল অর্ডারে বাংলাদেশের অন্যতম ভরসা। ব্যাটিং অর্ডারের পাঁচ নম্বরে দেখা যেতে পারে অভিজ্ঞ উইকেটরক্ষক-ব্যাটার মুশফিকুর রহিমকে। তিনি এখন খেলেন বিশেষজ্ঞ ব্যাটার হিসাবে। খুব ভাল ফর্মে নেই মুশফিকুর। দ্রুত রান তুলতে পারেন না। হাতে বড় শট নেই। পাঁচ নম্বরে দেখা যেতে পারে তৌহিদ হৃদয়কেও। বেশ কিছু ফর্মে না থাকলেও বিলিএলের শেষ কয়েকটি ম্যাচ ভাল খেলেছেন। ধারাবাহিকতার অভাব তাঁর বড় সমস্যা। দ্রুত রান তুলতে দক্ষ নন। বড় শটও তেমন নেই হাতে। বাংলাদেশের মিডল অর্ডারকে খুব শক্তিশালী বলা যায় না। অন্তত ভারতের তুলনায় তো নয়ই।
ফিনিশার: ব্যাটিং অর্ডারে ছ’নম্বরে দেখা যেতে পারে মাহমুদুল্লাহকে। ফর্মে রয়েছেন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। শেষ চারটি এক দিনের ম্যাচেই অর্ধশতরান করেছেন। মাঠের বাইরে বল পাঠাতে পারেন। দ্রুত রানও তুলতে পারেন। তাঁর ভূমিকা হবে মূলত ফিনিশারের। একই ভূমিকা থাকবে উইকেটরক্ষক-ব্যাটার জাকের আলির। পাঁচটি এক দিনের ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। ২২ গজে থিতু হতে পারলে দ্রুত রান করতে পারেন। বড় শট রয়েছে জাকেরের হাতে। অভিজ্ঞতা এবং তারুণ্যের মিশেলে এই ক্ষেত্রে দুর্বল বলা যায় না বাংলাদেশ।
ফিল্ডিং: আধুনিক ক্রিকেটে ফিল্ডিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মুহূর্তে ফিল্ডিংয়ে বিশ্বের সেরা দলগুলির অন্যতম ভারত। বিশ্বের একাধিক সেরা ফিল্ডার ভারতীয় দলের সদস্য। এ ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষত ক্যাচ ধরার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনেক উন্নতি প্রয়োজন। ভাল নয় ক্লোজ় ইন ফিল্ডিং। দুর্বল ফিল্ডিং ব্যাকআপও।
গত ১২ ডিসেম্বর শেষ এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। দু’মাসেরও বেশি সময় পর তারা ৫০ ওভারের ক্রিকেট খেলতে নামবে। ২০২৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়, আফগানিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা ছাড়া কোনও দেশের বিরুদ্ধে এক দিনের ক্রিকেট খেলেনি বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ় এবং শ্রীলঙ্কা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নেই। সেরা দলগুলির বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় এক দিনের ক্রিকেট না খেলাও বিপক্ষে যেতে পারে বাংলাদেশের।
আরও পড়ুন:
স্পিন বোলিং: রিশাদ হোসেনের মতো লেগ স্পিনার এবং নাসুম আহমেদের মতো বাঁহাতি স্পিনার রয়েছে বাংলাদেশের। মিরাজ়ের অফ স্পিনও বিপজ্জনক। অফ স্পিন করতে পারেন শান্ত, মাহমুদুল্লাহ, তৌহিদ হৃদয়ের মতো ব্যাটারেরা। এই বিভাগে যথেষ্ট বৈচিত্র্য রয়েছে বাংলাদেশের। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারতীয় স্পিনারদের মতো সাফল্য তাঁদের নেই। সামান্য হলেও পিছিয়ে বাংলাদেশ।
অলরাউন্ডার: ছ’জন স্বীকৃত অলরাউন্ডারকে নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল তৈরি করেছে বাংলাদেশ। দলের একাধিক ব্যাটার বল করতে পারেন প্রয়োজনে। যা ব্যাটিং গভীরতা এবং বোলিংয়ের বৈচিত্র্য বৃদ্ধির সহায়ক। প্রথম একাদশ তৈরির একাধিক বিকল্প রয়েছে। যা বাড়তি সুবিধা দেবে শান্তদের।
আরও পড়ুন:
জোরে বোলিং: বিশেষজ্ঞ জোরে বোলার হিসাবে বাংলাদেশ দলে রয়েছেন তাসকিন আহমেদ, নাহিদ রানা, মুস্তাফিজুর রহমান এবং তানজ়িম হাসান শাকিব। তাসকিনকে এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। সাদা বলের ক্রিকেটে অভিজ্ঞ মুস্তাফিজুর অত্যন্ত কার্যকরী। তানজ়িমের রয়েছে গতি। তাঁর ব্যাটের হাতও খারাপ নয়। তরুণ নাহিদও নজর কেড়েছেন। সৌম্যও মিডিয়াম পেস করতে পারেন। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে হালকা ভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। মহম্মদ শামি চেনা ফর্মে না থাকলে ভারতের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে বাংলাদেশ।
সাদা বলের ক্রিকেট এখন মূলত ব্যাটারদের খেলা। অধিকাংশ নিয়মও ব্যাটারদের অনুকূলে। বোলারদের ভূমিকা থাকলেও ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণ হয় বেশি রান করার ভিত্তিতেই। শাকিব আল হাসানের মতো অলরাউন্ডারের দলে না থাকা বাংলাদেশের জন্য নিশ্চিত ভাবে ক্ষতির। তাঁর অভাব পূরণ সহজ নয়।