জসপ্রীত বুমরাহকে বাদ দিয়েই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে যাবে ভারত। অস্ট্রেলিয়া পাবে না প্যাট কামিন্স, জস হেজ়লউড এবং মিচেল স্টার্ককে। দক্ষিণ আফ্রিকার অনরিখ নোখিয়েও চোটের কারণে বাদ। নিউ জ়িল্যান্ডের লকি ফার্গুসন এবং বেন সিয়ার্সও নাম লিখিয়েছেন এই তালিকায়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে বিভিন্ন দেশের সাত জন পেসারের খেলতে না পারা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তাঁদের বেশির ভাগেরই চোট। স্টার্ক যদিও পরিষ্কার ভাবে জানাননি, কেন তিনি নিজেকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে সরিয়ে নিয়েছেন।
এ বারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হবে পাকিস্তান এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে। উপমহাদেশের পিচে সাধারণত স্পিনারেরাই দাপট দেখান। তবুও দলের সেরা পেসারেরা না থাকলে যে কোনও দলই সমস্যায় পড়বে। অস্ট্রেলিয়ার মূল তিন পেসারই না থাকায় সমস্যা বেশি। বুমরাহ না থাকায় ভারতের সমস্যাও কম নয়। সমস্যায় পড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নিউ জ়িল্যান্ডও। এত জন পেসার না থাকায় ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে চলা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জৌলুস যে কিছুটা কমল, তা বলাই যায়। কিন্তু কেন এত জন পেসার নেই?
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট খেলতে গিয়ে চোট পেয়েছিলেন বুমরাহ। তাঁকে পাঁচ সপ্তাহের জন্য বিশ্রাম নিতে বলা হয়েছিল। তার পর রিহ্যাব শুরু হয়েছে তাঁর। কিন্তু তার পরেও ১৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বুমরাহ পুরোপুরি সুস্থ হতে পারবেন না বলেই জানা গিয়েছে। শোনা যাচ্ছে, ভারতের প্রধান পেসারকে নিয়ে ঝুঁকি নিতে রাজি নয় বোর্ড। কিন্তু বড় প্রতিযোগিতায় যদি মূল বোলারকে না পাওয়া যায়, সেটা তো বড় ক্ষতি। এর আগে চোট নিয়ে তো মহম্মদ শামিকে এক দিনের বিশ্বকাপে খেলতে দেখা গিয়েছিল। বুমরাহের ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব ছিল না? প্রাক্তন ক্রিকেটার ঋদ্ধিমান সাহা তো বলেই দিলেন, ভারত পুরো শক্তি নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে যাচ্ছে না। বুমরাহহীন ভারত অনেকটাই শক্তি হারিয়েছে বলে মত তাঁর। সামনে আইপিএল বলেই কি ঝুঁকি নেওয়া হল না বুমরাহকে নিয়ে?
আরও পড়ুন:
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল ৯ মার্চ। আইপিএল শুরু হতে পারে ২২ মার্চ থেকে। দুই প্রতিযোগিতার মাঝে ব্যবধান ১৩ দিনের। সেই কথা মাথায় রেখেই কি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে ঝুঁকি নিলেন না ক্রিকেটারেরা? বুমরাহ খেলেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে। কামিন্স সানরাইজার্স হায়দরাবাদের অধিনায়ক। স্টার্ক (দিল্লি ক্যাপিটালস), হেজ়লউড (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু), নোখিয়ে (কলকাতা নাইট রাইডার্স) এবং লকি ফার্গুসনের (পঞ্জাব কিংস) আইপিএল দল আছে। সিয়ার্স যদিও আইপিএল খেলেন না। ছ’জন পেসার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি না খেললেও আইপিএল খেলবেন না বলে জানাননি।
বাংলার বোলিং কোচ শিবশঙ্কর পাল মনে করেন এখন টেস্ট, এক দিনের ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহ কমছে। তিনি বললেন, “ক্রিকেটারেরা এখন টেস্ট, এক দিনের ক্রিকেট নিয়ে খুব উৎসাহী নন। আইপিএলে আড়াই মাসে কয়েক কোটি টাকা রোজগার করা যায়। সেখানে দেশের হয়ে সারা বছর খেলেও অত টাকা পাওয়া সম্ভব নয়। তাই স্বাভাবিক ভাবেই ক্রিকেটারেরা আইপিএল খেলাকে গুরুত্ব দেয়। তবে চোট লাগাটা দুর্ভাগ্যের। কোনও ক্রিকেটারের যদি চোট থাকে, তা হলে তো আর তাঁকে খেলতে বাধ্য করা যেতে পারে না।”
২০১৭ সালের পর এই প্রথম বার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হচ্ছে। কিন্তু সেই প্রতিযোগিতা নিয়ে উৎসাহ আগের মতো নেই। ১৯৯৮ সালে আইসিসি আর্থিক ভাবে নিজেদের মজবুত করতেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আয়োজন করেছিল। সেই সময় একটি প্রতিযোগিতায় যা আয় হয়েছিল, তার চেয়ে এখন আইপিএলের একটি ম্যাচে বেশি আয় হয়। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এবং বিভিন্ন দেশের টি-টোয়েন্টি লিগ নিয়ে উৎসাহের মাঝে ধীরে ধীরে আগ্রহ কমছে এক দিনের ক্রিকেট নিয়ে। যে কারণে ক্রিকেটারেরাও এখন এক দিনের ক্রিকেট নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। প্রতিযোগিতার প্রাথমিক দলে থাকলেও মার্কাস স্টোইনিসের এক দিনের ক্রিকেট থেকে অবসর সেটাই প্রমাণ করে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এক দিনের ক্রিকেট খেলা হয়। বিশ্বের সেরা আট দল খেলে। কিন্তু আইপিএল শুরুর ১৩ দিন আগে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন কতটা যুক্তিসঙ্গত, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট খেলতে গিয়ে চোট পেয়েছিলেন জসপ্রীত বুমরাহ। ছবি: গেটি ইমেজেস।
অস্ট্রেলিয়া ঘরের মাঠে ভারতের বিরুদ্ধে পাঁচটি টেস্ট খেলার পর শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়েছিল। টানা ক্রিকেট খেলতে হচ্ছে তাদের। ফলে তিন পেসারের উপর যথেষ্ট চাপ পড়েছিল। বুমরাহের উপরও চাপ ছিল। তিনি টানা ন’টি টেস্ট খেলেছেন। তার পর আবার আইপিএল রয়েছে। সাধারণত বুমরাহ আইপিএল থেকে নাম সরিয়ে নেন না।
বাংলার প্রাক্তন পেসার বললেন, “পাঁচ দিন ধরে টেস্ট খেলতে হয়। এক দিনের ক্রিকেটে প্রায় সারা দিন খেলার ধকল নিতে হয়। সেখানে টি-টোয়েন্টি অনেক সহজ। মাত্র চার ওভার বল করতে হয়। তাই বিভিন্ন দেশের টি-টোয়েন্টি লিগ খেলার সুযোগ সাধারণত ক্রিকেটারেরা হারাতে চায় না।” অতীতে যদিও অস্ট্রেলিয়ার বহু ক্রিকেটারকে দেখা গিয়েছে দেশের হয়ে খেলার কথা ভেবে আইপিএল থেকে নাম সরিয়ে নিয়েছেন। এ বার সেটার উল্টো হল কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছেই।
আইসিসির কাছেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গুরুত্ব বিশ্বকাপের মতো নয়। দুই প্রতিযোগিতার আর্থিক পুরস্কারের ফারাকেই সেটা স্পষ্ট। শুক্রবার আইসিসি জানিয়েছে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ী দল পাবে ২.২৪ মিলিয়ন ডলার (প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি টাকা)। ফাইনালে হেরে যাওয়া দল পাবে ১.১২ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১০ কোটি টাকা)। সেমিফাইনালে হেরে যাওয়া দল দু’টি পাবে ৫ লক্ষ ৬০ হাজার ডলার (প্রায় ৫ কোটি টাকা) করে। আট বছর আগে হওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মোট পুরস্কারমূল্যের থেকে এ বারের মোট পুরস্কারমূল্য ৫৩ শতাংশ বেশি। ২০২৩ সালের এক দিনের বিশ্বকাপ জিতে অস্ট্রেলিয়া পেয়েছিল ৪ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৩৫ কোটি টাকা)। অর্থাৎ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতে এক দিনের বিশ্বকাপের চেয়ে অনেক কম টাকা পাবে জয়ী দল।