E-Paper

‘ব্রঙ্কো টেস্ট’ শক্তি বাড়াবে পেস বিভাগের, বলছেন বিশেষজ্ঞেরা

বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, ব্রঙ্কো টেস্টের মাধ্যমে এক জন ক্রিকেটারের শারীরিক শক্তি ও ক্ষিপ্রতা বাড়ে। সব চেয়ে বেশি পার্থক্য দেখা যায় পেসারদের মধ্যে। টানা বল করে যাওয়ার ক্ষমতা বাড়ে।

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত 

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৬:২৪
লক্ষ্য: পেসার তুলে আনতে পারে এই ব্রঙ্কো টেস্ট।

লক্ষ্য: পেসার তুলে আনতে পারে এই ব্রঙ্কো টেস্ট। —ফাইল চিত্র।

জাতীয় দলের স্ট্রেংথ ও কন্ডিশনিং কোচ আদ্রিয়ান লে রু-র হাত ধরে ভারতীয় ক্রিকেটে এল ‘ব্রঙ্কো টেস্ট’। ইয়ো ইয়ো পরীক্ষার চেয়েও যা কড়া। মূলত রাগবিতে এই ফিটনেস টেস্ট বেশ জনপ্রিয়। খেলোয়াড়দের অ্যারোবিক ক্ষমতা পরীক্ষা করা এবং কার্ডিয়োভাসকুলার প্রক্রিয়া বাড়াতে খুবই উপযোগী এই ব্রঙ্কো টেস্ট।

বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, ব্রঙ্কো টেস্টের মাধ্যমে এক জন ক্রিকেটারের শারীরিক শক্তি ও ক্ষিপ্রতা বাড়ে। সব চেয়ে বেশি পার্থক্য দেখা যায় পেসারদের মধ্যে। টানা বল করে যাওয়ার ক্ষমতা বাড়ে। বলের গতিও আগের চেয়ে উন্নত হয়। ফলে পেসার তুলে আনার ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

কী ভাবে দিতে হয় এই পরীক্ষা? মোট তিনটি মার্কিং পয়েন্ট থাকে। শূন্য থেকে ২০ মিটার, ৪০ মিটার ও ৬০ মিটার। এক জনকে এই তিনটি মার্কিং পয়েন্টে দৌড়ে পৌঁছতে হয় শূন্য থেকে। ধরা যাক, এক জন শূন্য থেকে দৌড় শুরু করলেন। তিনি প্রথমে দৌড়ে যাবেন ২০ মিটার মার্কে। ফিরে আসবেন শূন্যে। আবার দৌড়ে যাবেন ৪০ মিটার মার্কে। ফিরে আসবেন শূন্যে। ফের দৌড়ে যাবেন ৬০ মিটার মার্কে। আবারও ফিরে আসবেন শূন্যে। এ ভাবে পাঁচটি সেট দৌড়তে হবে কোনও বিশ্রাম ছাড়া। মোট ১২০০ মিটার দৌড়তে হবে ছ’মিনিটের মধ্যে। ভারতীয় ক্রিকেটে এই ছ’মিনিটই মাপকাঠি। কিন্তু বিশ্বফুটবলে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, নেদারল্যান্ডসের মতো দলে সাড়ে চার মিনিটের মধ্যে এই পরীক্ষা শেষ করতে হয় ফুটবলারদের। যত কম সময়ের মধ্যে এই পরীক্ষা শেষ করা যাবে, তত বেশি পয়েন্ট পাবেন সেই খেলোয়াড়।

বেঙ্গালুরুতে ভারতীয় ক্রিকেটের সেন্টার অব এক্সেলেন্সে এই পরীক্ষা নিতে শুরু করেছেন আদ্রিয়ান। সম্প্রতি রোহিত শর্মা, মহম্মদ সিরাজ, শুভমন গিল, কে এল রাহুল, আকাশ দীপরা এই পরীক্ষা দিয়েছেন। ভারতীয় দলের প্রত্যেক ক্রিকেটারকেই এ বার থেকে ব্রঙ্কো টেস্ট পাশ করতে হবে।

ভারতীয় দলের প্রাক্তন কম্পিউটার অ্যানালিস্ট রামজি শ্রীনিবাসন মনে করছেন, আনফিট ক্রিকেটারেরা সমস্যায় পড়বেন এই পরীক্ষায়। বলছিলেন, ‘‘তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য এই ব্রঙ্কো পরীক্ষা আদর্শ। দলের প্রত্যেকের ফিটনেস বাড়ানোর জন্য এর চেয়ে ভাল পরীক্ষা আর হয় না। কিন্তু আনফিটদের সমস্যা হবে। বিশ্রাম ছাড়া টানা ১২০০ মিটার দৌড়ানো খুবই কঠিন। ইয়ো ইয়ো পরীক্ষায় ৪০ মিটার দৌড়ের পরে ১০ সেকেন্ড বিশ্রামের সময় থাকে। এই পরীক্ষায় কোনও বিশ্রাম নেই।’’ যোগ করেন, ‘‘ক্রিকেটারদের আরও তৎপর হয়ে উঠতে সাহায্য করে ব্রঙ্কো। মানসিক শক্তিও বাড়ায়। তবে পঁয়ত্রিশের বেশি বয়সি ক্রিকেটারদের পক্ষে এই পরীক্ষায় পাশ করা কঠিন। সকলে তো আর বিরাট কোহলির মতো ফিট নয়। তাদের জন্য সময়ের মাপকাঠি বাড়ানো হয় কি না, দেখতে হবে।’’

ভারতীয় দলের প্রাক্তন স্ট্রেংথ ও কন্ডিশনিং কোচ নিক ওয়েব মনে করেন, পেস বোলার তৈরি করার ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলছিলেন, ‘‘তৃণমূল স্তর থেকে এই পরীক্ষা নেওয়া উচিত উঠতি পেসারদের। তা হলে বলের গতি অনেক বেড়ে যাবে। শারীরিক ও মানসিক শক্তিও বাড়বে। বড় স্পেলে বল করার ক্ষমতা বাড়বে। বর্তমান পেসাররা জিমে অনেক বেশি সময় কাটায়। এই পরীক্ষা নিয়মিত দিলে জিমে খুব একটা সময় কাটানোর প্রয়োজন পড়বে না। ভারতে বেশ কয়েকটি রাজ্য দল ব্রঙ্কো পরীক্ষা শুরু করে দিয়েছে। তামিলনাড়ু তিন মাস আগে থেকেই এই পরীক্ষা নিচ্ছে। পেস বোলার তুলে আনার জন্য ওরাও এই ব্রঙ্কো টেস্টের উপরে নির্ভর করছে।’’

মুম্বই ইন্ডিয়ানসের স্ট্রেংথ ও কন্ডিশনিং কোচ প্রতীক কদমের মত, ‘ডেটা-ভিত্তিক’ হওয়া উচিত এই পরীক্ষা। অর্থাৎ, সময়ের মাপকাঠি প্রত্যেকের জন্য সমান হওয়া উচিত নয়। তাঁর কথায়, ‘‘শুভমন গিল যে সময়ের মধ্যে এই পরীক্ষা শেষ করবে, রোহিত শর্মা কি পারবে? বিরাট কোহলি হয়তো চার মিনিটের মধ্যে ব্রঙ্কো টেস্ট শেষ করে দেবে। ফলে ক্রিকেটারদের ফিটনেস যাচাই করে ব্যক্তি অনুযায়ী সময়ের মাপকাঠি বেধে দেওয়া উচিত। ধরা যাক বিরাটকে বলা হল, চার মিনিটে এই পরীক্ষা শেষ করতে। রোহিতের জন্য থাকল ছ’মিনিট। এ রকম ভাগ করা হলে ক্রিকেটারদের অসুবিধা হবে না।’’ যোগ করেন, ‘‘শুধুমাত্র ক্রিকেটার নয়, হকির খেলোয়াড়েরাও ব্রঙ্কো টেস্টের সাহায্যে দম বাড়িয়ে নিচ্ছে। এমনকি নোভাক জোকোভিচ, কার্লোস আলকারাসরাও এই পরীক্ষার সাহায্যে ফিটনেস যাচাই করেন।’’

বাংলার স্ট্রেংথ ও কন্ডিশনিং কোচ সঞ্জীব দাস মনে করেন, এই পরীক্ষা ভারতীয় ক্রিকেটকে অনেক এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাঁর কথায়, ‘‘ক্রিকেটারদের সার্বিক ফিটনেস যাচাই করার জন্য এই পরীক্ষা আদর্শ। বোলার ও ব্যাটসম্যানেরা নিজেদের ফিটনেস সম্পর্কে আরও সচেতন হতে পারবে। তবে বোলার ও ব্যাটসম্যানের সময়ের মাপকাঠি আলাদা হওয়া উচিত।’’

ইয়ো ইয়ো টেস্টের মাধ্যমে ভারতীয় ক্রিকেটে ঘটেছিল ফিটনেস-বিপ্লব। সেই রাস্তায় ‘ব্রঙ্কো টেস্ট’ আরও এক কঠিন ধাপ।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Indian Cricket indian cricketers

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy