কলকাতায় মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সমর্থক অসংখ্য। বুধবার ইপডেনে যে ৪২ হাজার দর্শক উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের অধিকাংশের গায়ে ছিল চেন্নাই সুপার কিংসের হলুদ জার্সি। আইপিএলের শুরুর দিকে অজিঙ্ক রাহানে অনুযোগ করেছিলেন ইডেনে পছন্দের পিচ পাচ্ছেন না। বুধবার পিচ মনের মতো হলেও ইডেনের দর্শক রাহানের মন জয় করতে পারল না। হারতে হল ম্যাচও। সেটাও আবার ধোনির হাতে।
বুধবার ইডেন জুড়ে ‘সিএসকে, সিএসকে’ চিৎকারে কান পাতা দায়। চেন্নাইয়ের ব্যাটারেরা বাউন্ডারি মারলে যা আরও বেড়ে যাচ্ছিল। টসের সময় ধোনি মাইক হাতে নিতে যে ভাবে চিৎকার হচ্ছিল, তাতে খেলা ইডেনে না চিপকে, সেটা বোঝাই কঠিন হচ্ছিল। তখনও মাঠ ভরেনি। ম্যাচ যত এগিয়েছে, তত হলুদ জার্সিধারীর সংখ্যা বেড়েছে। সেই সঙ্গে চিৎকারও।
চেন্নাইয়ের জয়ের নেপথ্যে কলকাতার বৈভব অরোরা। তাঁর এক ওভারে ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়। ১৮০ রান তাড়া করতে নেমে প্লে-অফের মধ্যে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা একটা দলকে এক ওভারে ৩০ রান দিলেন বৈভব। ১১ নম্বর ওভারে তাঁর সেই অবদান ভুলতে পারবে না চেন্নাই। সব দলের বিরুদ্ধে ধোনিরা ব্যাটে-বলে নাকানিচোবানি খাচ্ছেন এই বছর। আইপিএলের মাঝে অধিনায়ক বদল করতে হয়েছে। তেমন একটা দলকে অক্সিজেন দিলেন বৈভব।
আরও পড়ুন:
১১তম ওভারে ইয়র্কার দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন বৈভব। কিন্তু প্রতিটি বল ফুলটস হল। ডোয়াইল্ড ব্রেভিস একের পর এক ছক্কা মারলেন। এক ওভারে উঠল ৩০ রান। ব্রেভিস তিনটি ছক্কা এবং তিনটি চার মারেন। চেন্নাই ম্যাচে ফিরে এল ওই ওভারেই। ম্যাচ শেষে ব্রেভিস বলেন, “বড় ইনিংস খেলতে চেয়েছিলাম। সেটা পেরেছি। এখানে প্রচুর সমর্থক। আইপিএলে খেলতে পারব ভাবিনি। কয়েক সপ্তাহ আগেও বাড়িতে বসে খেলা দেখছিলাম। ঈশ্বর চেয়েছেন বলেই সম্ভব হয়েছে।”
শুধু ঈশ্বর নন, বুধবার আইপিএলে চেন্নাইয়ের জয়ে দেখতে চাইছিল ইডেনও। সেই মাঠেই খুঁজে পাওয়া গেল পুরনো ফিনিশার ধোনিকেও। যিনি ম্যাচ শেষ ওভার পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে জিততে ভালবাসেন। সেটাই করলেন বুধবার। শিবম দুবে যখন একের পর এক বড় শট খেলে চেন্নাইকে জয়ের পথে নিয়ে যাচ্ছেন, তখন ধোনি শান্ত ভাবে তাঁকে স্ট্রাইক দিচ্ছেন। শিবম আউট হওয়ার পর আবার নিজে স্ট্রাইক নিয়ে ম্যাচ জেতালেন। সময় বুঝে নিজের খেলা বদলে ফেলতে পারেন ধোনি। ৪৩ বছরেও পারেন। ইডেন সেটাই দেখল।
এ বারের আইপিএলে ছন্দে নেই চেন্নাই। প্লে-অফের দৌড় থেকে ছিটকে গিয়েছে তারা। ধোনি গত দু’দিন অনুশীলন করেননি। তেমন একটি দল দাপটের সঙ্গে খেলল ইডেনে। বল হাতে নুর আহমেদেরা কলকাতার ব্যাটারদের কাজটা কঠিন করে দিয়েছিলেন। শেষ দিকে আন্দ্রে রাসেল কিছুটা রান করায় চেন্নাইয়ের সামনে ১৮০ রানের লক্ষ্য দিতে পেরেছিল কলকাতা। ২ বল বাকি থাকতে যে রান তুলে নেয় চেন্নাই।
নুরের জন্য আলাদা করে অনুশীলন করেছিল কলকাতা। কিন্তু তিনিই ৪ উইকেট তুলে নেন বুধবার। রবীন্দ্র জাডেজাও একটি উইকেট নেন। রবিচন্দ্রন অশ্বিন ৩ ওভারে মাত্র ১৯ রান দেন। চেন্নাইয়ের স্পিনারেরা কলকাতার ব্যাটারদের কাজ কঠিন করছেন, রাহানে সেটা দেখলেন, কিন্তু শিখলেন না। চেন্নাইয়ের ইনিংসে পাওয়ার প্লে-তে মইন আলি উইকেট পাওয়ার পরেও তাঁকে ২ ওভারের বেশি করালেন না। কলকাতার স্পিন আক্রমণ যথেষ্ট শক্তিশালী। বরুণ চক্রবর্তী এবং সুনীল নারাইন মিলেও চেন্নাই ব্যাটারদের জন্য রান তাড়া করার কাজ কঠিন করে তুলছিলেন। এমন একটা সময়ে হঠাৎ তিনি বৈভবের হাতে বল তুলে দেন। সেই ভুলের খেসারত রাহানে দিলেন প্লে-অফের দৌড় থেকে প্রায় ছিটকে গিয়ে।