শুভমন গিলের মন কি পড়ে ইংল্যান্ড সফরে? আইপিএল খেলতে কি আর ভাল লাগছে না তাঁর? নইলে ভারতের টেস্ট অধিনায়ক হওয়ার আগের ও পরের দুটো ম্যাচ যে ভাবে গুজরাত হারল, তাতে চিন্তা বাড়ছে সমর্থকদের। আগের ম্যাচে তা-ও লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল গুজরাত। চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে আত্মসমর্পণ করল তারা। খেলার শুরু থেকে এক বারের জন্যও মনে হয়নি জিততে পারে গুজরাত। যত সময় গড়িয়েছে তত খেলা থেকে হারিয়ে গিয়েছে তারা। চেন্নাইয়ের কাছে হারের ফলে সমস্যা বাড়ল গুজরাতের। আইপিএলের প্লে-অফে উঠলেও প্রথম দুই দলের মধ্যে শেষ করা আর তাদের হাতে নেই। বাকি ম্যাচগুলোর উপর তা নির্ভর করছে।
রোহিত শর্মা অবসর নেওয়ার পর যে শুভমনই ভারতের টেস্ট অধিনায়ক হবেন তা প্রায় নিশ্চিত ছিল। শুভমনের সঙ্গে দেখা করেছিলেন ভারতের নির্বাচক প্রধান অজিত আগরকর। নিশ্চয় নিজেদের সিদ্ধান্ত আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। নইলে কেন আইপিএলের মাঝে লাল বলে অনুশীলন করবেন শুভমন? সেটা করতে গিয়েই কি সাদা বলে ছন্দ হারালেন গুজরাতের অধিনায়ক? শেষ দুটো ম্যাচে তাঁর ব্যাটে রান নেই। বড় রান করতে পারছেন না তাঁর জুড়িদার সাই সুদর্শনও। টেস্ট দলে সুযোগ পেয়েছেন সুদর্শন। তাঁর মাথাতেও কি ইংল্যান্ড সফরের চিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছে? ওপেনিং জুটি ব্যর্থ হওয়ায় ম্যাচ জিততে পারছে না গুজরাতও।
এ বারের আইপিএলে কমলা টুপির তালিকায় প্রথম দুই নাম সুদর্শন ও শুভমন। সুদর্শন ৬৭৯ ও শুভমন ৬৪৯ রান করেছেন। এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, দলের জয়ে সিংহভাগ কৃতিত্ব এই দুই ব্যাটারের। খুব পিছিয়ে নেই তিন নম্বরে নামা জস বাটলার। তাঁর রান ৫৩৮। কিন্তু তিনিও এই ম্যাচে রান পাননি। গুজরাত যে ন’টা ম্যাচ জিতেছে তাতে এই তিন ব্যাটারের মধ্যে অন্তত এক জন ১৮ ওভার পর্যন্ত খেলেছেন। কিন্তু গত ম্যাচ থেকে তা দেখা যাচ্ছে না। পর পর দুটো ম্যাচে চ্যালেঞ্জ গিয়ে পড়েছে মিডল অর্ডারের উপর। তারা সেই চ্যালেঞ্জের চাপে ভেঙে পড়েছে। চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে ৮৩ রানে এই হার আইপিএলের ইতিহাসে গুজরাতের সবচেয়ে বড় হার।
ধোনিদের শিবিরে আবার অন্য ছবি। তাদের ভাগ্য আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছে। এই আইপিএলের ‘লাস্ট বয়’ তারা। গুজরাতকে হারালেও তাতে বদল হবে না। ধোনি সেটা ভাল ভাবে জানেন। তাই তো টস জিতে তিনি জানান, এই ম্যাচ জেতা-হারার উপর তাঁদের অবস্থানের কোনও বদল হবে না। পয়েন্ট তালিকায় সকলের শেষেই থাকবেন তাঁরা। তাই তাঁরা উপভোগ করতে চান। বাস্তবে সেটাই দেখা গেল। এই ম্যাচেই চলতি মরসুমের সবচেয়ে ভাল ব্যাট করল তারা। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেকে হাত খুলে মারলেন।
এ বার প্লে-অফের লড়াই থেকে বিদায় নেওয়ার পরেই পরের বারের জন্য দল গোছাতে শুরু করে দিয়েছেন ধোনিরা। মাঝপথে আয়ুষ মাত্রে, উর্বিল পটেল ও ডেওয়াল্ড ব্রেভিসের মতো তরুণ প্রতিভাকে নিয়েছে তারা। ধোনি জানিয়েছেন, পরের বারের প্রথম একাদশ তৈরি রাখতে চাইছেন তাঁরা। সেই লক্ষ্যে অনেকটাই সফল চেন্নাই। বোঝা যাচ্ছে, ঠিক দিকেই এগোচ্ছেন তাঁরা। কোচ স্টিফেন ফ্লেমিং যতই বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অভিজ্ঞতার কথা বলুন না কেন, তরুণদের হাতেই যে দলের সাফল্য নির্ভর করছে তা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে, নিলামে কতটা খারাপ পারফরম্যান্স দেখিয়েছে চেন্নাই। এ বারের মরসুম সেখানেই হেরে গিয়েছে তারা।
আরও পড়ুন:
গুজরাতের বিরুদ্ধে শুরুতে আয়ুষ, মাঝে উর্বিল ও শেষে ব্রেভিস হাত খুলেছেন। তাঁরা তিন ব্যাটার মিলে ৫৯ বলে ১২৮ রান করেছেন। অর্থাৎ, ২০০-র বেশি স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন ‘জ়েন ওয়াই’-এর তিন ক্রিকেটার। তাঁদের সাহায্য করেছেন অভিজ্ঞ ডেভন কনওয়ে। চার জনের দাপটে চলতি মরসুমে নিজেদের সবচেয়ে বেশি রান করেছে চেন্নাই।
এই রান তাড়া করতে হলে দরকার ছিল শুভমন ও সুদর্শনকে। গুজরাতের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে প্রতি ম্যাচেই ২০০-র বেশি রান হচ্ছে। এই মাঠেই দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে ২০১ রান তাড়া করেছিলেন গুজরাতের দুই ব্যাটার। ১০ উইকেটে জিতেছিল গুজরাত। কিন্তু এই ম্যাচে পারলেন না। ঠিক যেমনটা আগের ম্যাচে লখনউয়ের বিরুদ্ধে পারেননি। ওপেনিং জুটি রান না পাওয়ায় হারতে হয়েছে দুটো ম্যাচই। প্লে-অফের আগে মিডল অর্ডারের হাল চিন্তা বাড়াবে শুভমনের। কিন্তু তিনি কি এখন আইপিএলের মধ্যে রয়েছেন? এই ম্যাচে তাঁর অধিনায়কত্ব, বোলিং পরিবর্তন, ফিল্ডিং সাজানো থেকে ব্যাটিং, সব কিছু নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। মাঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে শিক্ষা দিয়েছেন ধোনি। মরসুম শেষ হওয়ার পরেও কী ভাবে দলের থেকে সেরা খেলাটা বার করতে হয় তা দেখিয়েছেন তিনি। সেই শিক্ষা নিয়ে কি প্লে-অফে নামতে পারবেন শুভমন? নইলে কিন্তু আবার হারের জ্বালা নিয়েই ফিরতে হবে তাঁকে।