বাংলার ক্রিকেটে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ। রাজ্যের ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা সিএবি-র এক কমিটি সদস্যের বিরুদ্ধেই সেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
সদস্যের নাম অম্বরীশ মিত্র। তিনি সিএবি-র স্টেডিয়াম কমিটি এবং বেঙ্গল প্রো টি-টোয়েন্টি লিগ কমিটির সদস্য। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে সিএবি-তেই। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিভিন্ন ক্লাবে খেলিয়ে দেওয়ার নাম করে উঠতি ক্রিকেটারদের থেকে তিনি লক্ষ লক্ষ টাকা তুলেছেন। অভিযোগকারী সুমন কীর্তনিয়া নামে এক আইনজীবী। পাঁচ পাতার ওই অভিযোগপত্র আনন্দবাজার ডট কম-এর হেফাজতে রয়েছে।
সিএবি-র সঙ্গে যুক্ত অনেকের মতে অবশ্য, এর সঙ্গে সংস্থার আসন্ন নির্বাচনের যোগসূত্র রয়েছে। ময়দানের এক ক্লাবকর্তার বক্তব্য, নির্বাচনে দুই প্রাক্তন সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বনাম অভিষেক ডালমিয়ার লড়াইয়ের সম্ভাবনা। সৌরভের দাদা স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় এখন সিএবি-র সভাপতি। শাসকগোষ্ঠী এবং বিরোধীগোষ্ঠী নির্বাচনের আগে নানা ভাবে ঘুঁটি সাজাচ্ছে। এই অভিযোগ তারই একটি।
ইডেন গার্ডেন্স। অন্ধকার কি গাঢ় হবে বাংলার ক্রিকেটে? — ফাইল চিত্র
অম্বরীশের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে সিএবি সভাপতি স্নেহাশিস এবং সচিব নরেশ ওঝার কাছে। আলিপুর কোর্টের আইনজীবী সুমন অভিযোগের প্রতিলিপি দিয়েছেন সিএবি-র ওমবুড্সম্যান, এথিক্স অফিসার এবং অ্যাপেক্স কাউন্সিলের সদস্যদেরও। যেহেতু অম্বরীশ ইস্টার্ন রেলের শিয়ালদহ শাখায় কর্মরত, তাই তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগটি পাঠানো হয়েছে রেলের ন’জন উচ্চপদস্থ আধিকারিকের কাছেও।
অম্বরীশ ইস্টার্ন রেলেরই অন্যতম ক্লাব নেতাজি সুভাষ ইনস্টিটিউটের প্রতিনিধিত্ব করেন সিএবি-তে।
তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলি উঠেছে সেগুলি হল—
১. উঠতি ক্রিকেটারদের কাছ থেকে টাকা তোলা। প্রমাণ হিসেবে বিভিন্ন হোয়াট্সঅ্যাপ চ্যাটের প্রতিলিপি অভিযোগপত্রের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। সেই চ্যাটে (যার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম) দেখা যাচ্ছে, যে সব খুদে ক্রিকেটার সিএবি-র বিভিন্ন ক্লাবে খেলার স্বপ্ন দেখছে, তাদের খুঁজে বার করে টাকা তুলেছেন অম্বরীশ। অভিযোগ, উঠতি ক্রিকেটারদের কোনও না কোনও ক্লাবে খেলিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া।
২. নতুন ক্লাব তৈরির নাম করে বিভিন্ন লোকের থেকে টাকা নেওয়া।
৩. নিজেকে প্রভাবশালী নির্বাচক হিসাবে পরিচয় দিয়ে এবং সিএবি-র পদের অপব্যবহার করে অম্বরীশ অনূর্ধ্ব-১৩, অনূর্ধ্ব-১৫, অনূর্ধ্ব-১৮ দল এবং দ্বিতীয় ডিভিশনের ক্লাব দলে ক্রিকেটার ঢুকিয়েছেন অর্থের বিনিময়ে।
৪. হাই কোর্ট ক্রিকেট ক্লাবে নানা বেআইনি কাজ করেছেন।
৫. কোথায় কোন ম্যাচ হবে, তা-ও টাকার বিনিময়ে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। বলা হয়েছে, বিভিন্ন প্রভাবশালী লোককে নিয়ে তাঁর একটি চক্র এই কাজ করে। এখানে টাউন ক্লাবের সচিব দেবনিক দাসের নামও এসেছে। হোয়াট্সঅ্যাপ চ্যাটে দেবনিকের নাম দেখা যাচ্ছে।
৬. একাধিক জাল নথি তৈরি করা।
তাঁর বক্তব্য জানতে অম্বরীশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার ডট কম। তাঁর জবাব, ‘‘এমন কোনও অভিযোগ সিএবি-তে জমা পড়েছে বলে আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি। এটুকু বলতে পারি, আমি কোনও দিন কোনও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত নই।’’ দেবনিক জানিয়েছেন, তাঁর এখনই এ ব্যাপারে কিছু বলার নেই। অভিযোগকারী আইনজীবী সুমনের বক্তব্য, তিনি বাংলার ক্রিকেটের এক ‘শুভানুধ্যায়ী’ হিসাবে এই দুর্নীতির কথা সিএবি-র গোচরে আনার চেষ্টা করেছেন। রেলের আধিকারিকদেরও জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘দু’-এক সপ্তাহ দেখি, কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তার পরে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করব।’’
আরও পড়ুন:
অম্বরীশ না জানলেও সিএবি সভাপতি স্নেহাশিস জানিয়েছেন, তিনি অভিযোগ পেয়েছেন। স্নেহাশিসের কথায়, ‘‘আমরা নিজেদের মতো কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। বিচারপতি লোঢা কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী আমরা এই অভিযোগ অ্যাপেক্স কাউন্সিলের কাছে পাঠাব। অ্যাপেক্স কাউন্সিল যাবতীয় তথ্য এবং নথি খতিয়ে দেখবে। তারা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অথবা বিষয়টি ওমবুড্সম্যানের কাছে পাঠাতে পারে।’’
সিএবি সভাপতি স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র
ময়দানের একাংশ এটিকে সিএবি নির্বাচনের আগে ‘কৌশল’ বলে মনে করলেও সিএবি-র একাংশের বক্তব্য, এই দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসতই। এর সঙ্গে নির্বাচনের সম্পর্ক নেই। বাংলার ক্রিকেটে এমন ‘বেআইনি’ কাজকর্ম দীর্ঘ দিন ধরেই চলছে। সিএবি-র এক কমিটি সদস্যের কথায়, ‘‘এর সঙ্গে নির্বাচনের যোগ খোঁজা ঠিক হবে না। এই অভিযোগ তো নতুন কিছু নয়। হয়তো সরকারি ভাবে এত দিন সিএবি-তে অভিযোগ জমা পড়েনি। কিন্তু আজ নয় কাল, এই সব বেআইনি কাজ প্রকাশ্যে আসতই। যে সময়ে সিএবি-তে অভিযোগ জমা পড়ল, সেটা হয়তো সংস্থার এজিএম-এর আগে। কিন্তু আমার মতে এটা কাকতালীয়।’’
প্রসঙ্গত, শোনা যাচ্ছে, শেষ মুহূর্তে মোহনবাগানের নির্বাচনের মতো সিএবি-র নির্বাচনও না হতে পারে। মোহনবাগানের নির্বাচন নিয়ে অনেকের বক্তব্য ছিল, রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরের পরামর্শেই যুযুধান দুই পক্ষ সৃঞ্জয় বসু ও দেবাশিস দত্তের মধ্যে সমঝোতা হয়েছিল।সেই ‘সমঝোতা’ অনুযায়ী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সৃঞ্জয় সচিব এবং দেবাশিস সভাপতি হয়েছেন। সিএবি-র ক্ষেত্রেও এই ধরনে সমঝোতা একেবারে অপ্রত্যাশিত নয় বলে অনেকে মনে করছেন।