Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
physically challenged

মূক-বধির ক্রিকেটে জাতীয় দলে শ্রীরামপুরের ইন্দ্রনীল

২০১৪ সালেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মূক-বধির ভারতীয় দলে খেলেছিলেন এই অলরাউন্ডার। তার পরে হাঁটুর চোট কিছুটা কাবু করেছিল। চোট সারিয়ে মাঠে ফেরেন।

লড়াকু: ইন্দ্রনীল সাধুখাঁ।  নিজস্ব চিত্র

লড়াকু: ইন্দ্রনীল সাধুখাঁ। নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ পাল
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:৩১
Share: Save:

বাইশ গজে স্ট্রোকের ফুলঝুড়ি ছোটায় তাঁর ব্যাট। অফস্পিন বোলিংয়েও ভরসা দেন দলকে। শ্রীরামপুরের ইন্দ্রনীল সাধুখাঁ আরও এক বার ডাক পেলেন মূক-বধিরদের জাতীয় দলে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর টি-টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হবে। এরপরে ১০-১৫ অক্টোবর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দু’টি টি-টোয়েন্টি এবং তিনটি এক দিনের ম্যাচ খেলবে ভারত। দলে এ রাজ্য থেকে একমাত্র ইন্দ্রনীলই আছেন। আজ, মঙ্গলবার তিনি দিল্লি উড়ে যাচ্ছেন দলের প্রস্তুতি শিবিরে যোগ দিতে।

২০১৪ সালেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মূক-বধির ভারতীয় দলে খেলেছিলেন এই অলরাউন্ডার। তার পরে হাঁটুর চোট কিছুটা কাবু করেছিল। চোট সারিয়ে মাঠে ফেরেন। এ বার পাকিস্তানকে দুরমুশ করতে অস্ত্রে শান দিচ্ছেন তিনি। চলছে নিবিড় অনুশীলন।

ইন্দ্রনীল থাকেন শ্রীরামপুরের নেতাজি সুভাষ অ্যাভিনিউতে। ছোট থেকেই ক্রিকেটের প্রতি টান। ব্যাট-বলে হাতেখড়ি স্থানীয় মৈত্রী পরিষদে মানবেন্দ্র দাসের কাছে। তার পরে উত্তরপাড়ায় সিএ ক্লাবে প্রণব নন্দীর কাছে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। প্রণবের সহকারী ছিলেন আশিস দাস। ২০০৭ সাল নাগাদ আশিস তাঁকে শ্রীরামপুরের সবুজ সঙ্ঘে নিয়ে আসেন। ইন্দ্রনীল তখন স্কুলপড়ুয়া। সেই থেকে দীর্ঘ দেড় দশক সবুজ সঙ্ঘের হয়ে শ্রীরামপুর মহকুমা লিগে খেলছেন। ব্যাটিংয়ে ওপেন করেন। এখন বয়স ৩৩ বছর। সিএবি লিগে জর্জ টেলিগ্রাফ, শিবপুর, ন্যাশনাল স্পোর্টিং প্রভৃতি ক্লাবের হয়ে তিনি খেলেছেন। এখন দ্বিতীয় ডিভিশনের দল ডেফ অ্যাসোসিয়েশনেরহয়ে খেলেন।

ইন্দ্রনীল বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান। বল করেন ডান হাতে। তাঁর সাফল্যে খুশি সতীর্থরা। অঙ্কিত মণ্ডল, সুরজিৎ দত্ত, সুপ্রতীক গুঁইনরা জানান, উইকেটের দু’দিকেই সমান স্বচ্ছন্দ ইন্দ্রনীল। টেকনিক খুব ভাল। ইন্দ্রনীলের প্রতিবন্ধকতা ১০০ শতাংশ। কথা বলতে বা শুনতে না পারলেও মাঠে বা মাঠের বাইরে তাঁর সঙ্গে সতীর্থদের বোঝাপড়ায় অবশ্য সমস্যা হয় না। ঘরোয়া ক্রিকেটের মতোই আন্তর্জাতিক মঞ্চেও সতীর্থ বিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করবেন, বিশ্বাস অঙ্কিতদের।

রবিবার সকালে সবুজ সঙ্ঘের মাঠে ঘাম ঝরাচ্ছিলেন ইন্দ্রনীল। কিছুটা অস্ফুট আওয়াজে, কিছুটা হোয়াটসঅ্যাপে লিখে অথবা ক্লাবের ক্রিকেট সচিব সৌরভ সোমের সাহায্যে নানা প্রশ্নের জবাব দিলেন। ইন্দ্রনীল জানিয়ে দেন, সুযোগ পেয়ে তিনি খুশি হলেও বাড়তি উত্তেজনা নেই। মাঠে নিজেকে উজাড় করে দিতে চান।

সৌরভ বলেন, ‘‘শুধু ক্রিকেটার নয়, মানুষ হিসেবেও ইন্দ্রনীল অত্যন্ত ভাল। টানা দেড় দশক আমাদের ক্লাবের নিয়মিত খেলোয়াড়। ওঁর ধারাবাহিকতা কতটা, এতেই স্পষ্ট। আন্তর্জাতিক স্তরেও ইন্দ্রনীল সাফ‌ল্য পাবে বলেই আমার বিশ্বাস।’’ সৌরভের সংযোজন, ‘‘ইন্দ্রনীলের বাবা ওষুধের ব্যবসা করতেন। এখন অসুস্থ। তেমন কিছু করতে পারেন না। প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে খেলার মাঠে সফল হলেও ইন্দ্রনীলের একটা চাকরিও জোটেনি। একটা চাকরি পেলে খুব ভাল হয়।’’

শ্রীরামপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে শ্রীরামপুর কলেজে কলা বিভাগে স্নাতক স্তরে ভর্তি হয়েছিলেন ইন্দ্রনীল। ক্লাসে কথা বোঝার সমস্যায় মাঝপথে পড়া ছেড়ে দেন। তবে, তার মধ্যেইবিশ্ববিদ্যালয় খেলেছেন।

বঙ্গসন্তানের এ বার লক্ষ্য, পাক-বধ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

physically challenged Bengal cricketers Serampore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE