Advertisement
E-Paper

Dean Elgar: এলগার দেখিয়ে দিল লাল বলের ক্রিকেট কী

দক্ষিণ আফ্রিকা যখন জয়ের থেকে কয়েক রান দূরে, টিভিতে রাহুল দ্রাবিড়ের মুখটা দেখাচ্ছিল। একটা বিষণ্ণ, শূন্য দৃষ্টি খেলা করছিল ওর চোখেমুখে।

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:৫২
অপ্রতিরোধ্য ৯৬ রানের ইনিংস খেললেন এলগার

অপ্রতিরোধ্য ৯৬ রানের ইনিংস খেললেন এলগার ছবি রয়টার্স।

জোহানেসবার্গে ইতিহাস তৈরির লক্ষ্যে নেমেছিল ভারত। ইতিহাস একটা হল বটে, কিন্তু সেটা ভারতের পক্ষে নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটি থেকে প্রথম টেস্ট সিরিজ় জয় অন্তত ওয়ান্ডারার্স থেকে হল না। উল্টে এই প্রথম ওয়ান্ডারার্সে টেস্ট হারতে হল ভারতকে।

বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকা যখন জয়ের থেকে কয়েক রান দূরে, টিভিতে রাহুল দ্রাবিড়ের মুখটা দেখাচ্ছিল। একটা বিষণ্ণ, শূন্য দৃষ্টি খেলা করছিল ওর চোখেমুখে। রাহুল হয়তো বুঝতে পারছে, মাঠের বাইরে বসে ভারতীয় ক্রিকেটকে নিয়ন্ত্রন করা কতটা কঠিন। সেঞ্চুরিয়নে প্রথম টেস্টের পরে দক্ষিণ আফ্রিকার এই দলটাকে কেউ গ্রাহ্য করেনি। ভারত যখন জয়ের জন্য ২৪০ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল, তখন অনেকেই মনে করেছিল, ম্যাচটা কে এল রাহুলের দলই জিতবে। ওয়ান্ডারার্সে চতুর্থ এবং পঞ্চম দিনে ব্যাট করা খুবই কঠিন। কিন্তু ক্রিকেটবিশ্বকে চমকে দিয়ে এক দিন বাকি থাকতে, সাত উইকেটে দ্বিতীয় টেস্ট জিতে সিরিজ় ১-১ করে দিল দক্ষিণ আফ্রিকা।

কোথায় ভারতকে ছাপিয়ে গেল ওরা? খুব সহজ কথায়, পুরনো ঘরনার লাল বলের ক্রিকেট খেলে টেস্টটা জিতে নিল দক্ষিণ আফ্রিকা। আদর্শ লাল বলের ক্রিকেট কী ভাবে খেলতে হয়, দেখিয়ে দিল ওদের অধিনায়ক ডিন এলগার। ওর ব্যাটিং দেখতে দেখতে অতীতে ফিরে যাচ্ছিলাম। যখন আগুনে সব ফাস্ট বোলার বল করত আর ব্যাটাররা শরীরে আঘাত খেয়েও লড়ে যেত।

আমার একটা টেস্টের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। ১৯৭৬ সালে, পোর্ট অব স্পেনে ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যেখানে ৪০৩ রান তাড়া করে জিতেছিল ভারত। সেঞ্চুরি করেছিল গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ। পরে ভিশি আমাকে একটা কাহিনি শুনিয়েছিল। মাইকেল হোল্ডিংদের বলে বারবার আহত হচ্ছিল বিশ্বনাথ-মোহিন্দররা। ভিশির হাতে এমন লেগেছিল যে আঙুল ফুলে যায়। ওই অবস্থায় সেঞ্চুরি করে রান আউট হয়ে মাঠ ছাড়ে বিশ্বনাথ। পরে ড্রেসিংরুমে গিয়ে গ্লাভসটা আর খুলতে পারছিল না। আঙুল এতটাই ফুলে গিয়েছিল। কাঁচি দিয়ে গ্লাভস কাটতে হয়। এলগারও ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। পিঠ, বুক, হাত, মাথা— সব জায়গায় বল লেগেছে। কিন্তু উইকেট ছুড়ে দেয়নি। একটাও বেপরোয়া শট খেলেনি। র‌্যাসি ফান ডার ডুসেনের সঙ্গে ওর ৮২ রানের জুটিটাই ম্যাচের ভাগ্য ঠিক করে দিল। ডুসেন এমনিতে আগ্রাসী ব্যাটার। কিন্তু অধিনায়কের খেলার ছাপ পড়েছিল ওর ব্যাটিংয়েও। শেষ পর্যন্ত টেস্ট জিতিয়েই মাঠ ছাড়ল এলগার (১৮৮ বলে অপরাজিত ৯৬)। ওয়ান্ডারার্স আরও এক বার বুঝিয়ে দিল, টেস্ট ক্রিকেটই এক জনের চরিত্র তৈরি করে দেওয়ার আদর্শ মঞ্চ।

ভারতীয় দলে এ দিন অধিনায়ক বিরাট কোহলির অভাবটা খুব টের পাওয়া গেল। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম টেস্টে রাহুল বেশ নিষ্প্রভই ছিল। বিরাট থাকলে যে ভাবে দলকে তাতিয়ে তোলে, সেটা রাহুলের ক্ষেত্রে দেখলাম না। এ রকম ম্যাচে যার খুব প্রয়োজন ছিল। ফিল্ডিং সাজানোতেও প্রশ্ন থাকছে। এলগার ব্যাট করার সময় ডিপ স্কোয়ারলেগ রাখল। এলগার হুক বা পুল শটটা খেলেই না। বরং ফিল্ডার দূরে থাকায় বল ঠেলে খুচরো রানগুলো নিতে পারছিল।

এ দিন বৃষ্টির জন্য চা বিরতির পরে খেলা শুরু হল। মনে হচ্ছিল, যশপ্রীত বুমরা-মহম্মদ শামিরা একটু স্যাঁতস্যাতে উইকেট থেকে ফায়দা তুলতে পারবে। ওরা বল সুইংও করিয়েছিল, কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা অফস্টাম্পের বাইরে কোনও ঝুঁকিই নেয়নি। আউটফিল্ড ভেজা থাকায় বলও ভিজে যাচ্ছিল, যে কারণে অশ্বিনকেও সে ভাবে কাজে লাগান গেল না। তবে প্রথম ইনিংসের নায়ক শার্দূল ঠাকুরকে আর একটু আগে বোলিং আক্রমণে আনা যেতে পারত।

এই পিচে অসমান বাউন্সের একটা আতঙ্ক ছিল ঠিকই, কিন্তু ‘হেভি রোলার’ কাজে লাগিয়ে পিচের আলগা ভাবটা অনেকটা চেপে রাখা যাচ্ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকাও সেই কাজটা করে ‘হেভি রোলার’ কাজে লাগিয়ে। উইকেটে একটা স্পট তৈরি হয়েছিল, কিন্তু সেটা ব্যাটারের থেকে সাত-আট গজ দূরে। ফলে অশ্বিনও সেই ‘স্পট’ কাজে লাগাতে পারল না।

কঠিন সঙ্কল্পের সামনে এ দিন হেরে গেল প্রতিভাবান একটা দল।

Dean Elgar south africa India
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy