শোয়েব বসিরের বলটা ব্যাটেই খেলেছিলেন মহম্মদ সিরাজ। কিন্তু ঠিক মতো রক্ষণ করতে পারেননি। বল গড়িয়ে উইকেটে লাগে। চেষ্টা করেও সরিয়ে দিতে পারেননি বল। বলের আঘাতে উইকেটের উপর থেকে বেল মাটিতে পড়তেই আউট হয়ে যান সিরাজ। তিনি আউট হতেই শেষ হয়ে যায় লর্ডস টেস্টে ভারতের যাবতীয় লড়াই। ভেঙে পড়েন সিরাজ। নিজেদের প্রাথমিক উচ্ছ্বাসের পর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে সিরাজকে সান্ত্বনা দিতে ছুটে আসেন ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারেরা। একে একে এগিয়ে আসেন হ্যারি ব্রুক, জো রুট, জ্যার ক্রলিরা। মাটিতে বসে পড়া সিরাজকে হাত ধরে তোলেন ব্রুক।
ব্যাট হাতে লর্ডসের ২২ গজে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন সিরাজ। রবীন্দ্র জাডেজার লড়াই যাতে ব্যর্থ না হয়, তা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন। চেয়েছিলেন ইংল্যান্ডের নিশ্চিত জয় ছিনিয়ে নিতে। কিন্তু পারলেন না। বসিরের বলে তিনি প্লেড অন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে যায় ভারতের টেস্ট জয়ের সব আশা। ৩০ বলের লড়াই শেষ হতেই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন ভারতের জোরে বোলার। পিচেই কেঁদে ফেলেন। তাঁর কান্না দেখে মুখ ঘুরিয়ে থাকতে পারেননি রুট, ব্রুকেরা। ২২ গজের লড়াই ভুলে এগিয়ে আসেন তাঁরা। সিরাজকে সান্ত্বনা দেন। এটাই বোধহয় ক্রিকেটের সৌন্দর্য। যেখানে লড়াই শেষ হওয়ার পর পরাজিত নায়কও প্রাপ্য সম্মান পান। ম্যাচ শেষ হওয়ার পরের এই মুহূর্তের ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে সমাজমাধ্যমে।
সিরাজের ৪ রানের ইনিংস হয়তো ভারতকে জয় এনে দিতে না পারলেও আশা তৈরি করেছিল। জসপ্রীত বুমরাহের ৫৪ বলে ৫ রানের ইনিংসের পরও ভারত ১৩.২ ওভার লড়াই করল, ২৩ রান করল তার কৃতিত্ব অনেকটাই সিরাজের হার না মানা ব্যাটিংয়ের। ব্যাট হাতে এমন লড়াইয়ের পরও ২২ রানে হার মেনে নিতে পারেননি সিরাজ। ধরে রাখতে পারেননি নিজের আবেগ। পিচের অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে ছিলেন হতাশ জাডেজা। তাঁকেও গিয়ে জড়িয়ে ধরেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস।
লর্ডস টেস্টে বার বার উত্তেজনা তৈরি হয়েছে দু’দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে। উত্তেজনার বিভিন্ন মুহূর্তে সিরাজও অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। বল বদল নিয়ে আম্পায়ারের সঙ্গে তর্ক হোক বা ‘বাজ়বল’ খেলতে বলে জো রুটকে স্লেজিং। প্রতিপক্ষের সঙ্গে সমানে সমানে লড়াইয়ের চেষ্টা করেছেন। চাপ তৈরির চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শেষ বেলায় নিজেই ভেঙে পড়লেন। সে সময় প্রথম পাশে পেলেন প্রতিপক্ষ দলের ক্রিকেটারদেরই। যাঁরা মাঠের বিতর্ক ভুলে নতুন লড়াইয়ের সাহস দিয়ে গেলেন। লর্ডসের ২২ গজে জিতে গেল ক্রিকেট।