গত বছর জানিয়েছিলেন তাঁর লিঙ্গ পরিবর্তন করার কথা। সঞ্জয় বাঙ্গারের সন্তান অনয়া এখন পুরুষ থেকে মহিলা। ভারতীয় দলের প্রাক্তন ক্রিকেটার সঞ্জয়। তাঁর কন্যা অনয়া জানালেন লিঙ্গ পরিবর্তনের পর তাঁকে ঠিক কতটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। বেশ কয়েক জন ক্রিকেটার তাঁদের নগ্ন ছবি পাঠাতেন অনয়াকে। এমনকি এক জন প্রাক্তন ক্রিকেটার যৌন সম্পর্কের প্রস্তাবও দেন। ‘জেন্টলম্যানস গেম’ বলা হয় ক্রিকেটকে। সেই ‘জেন্টলম্যান’-দের ‘অভদ্র’ আচরণের কথা জানিয়েছেন অনয়া।
‘দ্য লালনটপ’ ওয়েব সাইটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অনয়া বলেন, “আমি যেমন অনেকের সাহায্য পেয়েছি, তেমনই অনেক হেনস্থার শিকারও হয়েছি। কিছু ক্রিকেটার আমাকে নগ্ন ছবি পাঠাত। এক জন সকলের সামনে গালিও দিয়েছিলেন। সেই তিনিই আবার আমার পাশে বসে আমার সঙ্গে ছবিও তুলতে চেয়েছিলেন।”
কাজের সূত্রে বেশির ভাগ সময় ইংল্যান্ডে থাকেন অনয়া। মাঝে ভারতে এসেছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা খুব মধুর ছিল না তাঁর জন্য। অনয়া বলেন, “ভারতে গিয়েছিলাম কিছু দিন আগে। এক প্রাক্তন ক্রিকেটারকে আমার নিজের কথা বলেছিলাম। তিনি আমাকে বলেছিলেন, গাড়ির মধ্যে চলো, তোমার সঙ্গে শুতে চাই।”
আরও পড়ুন:
অনয়ার স্বপ্ন ছিল বাবার মতো ক্রিকেটার হবেন। খেলা শুরুও করেছিলেন। কিন্তু লিঙ্গ পরিবর্তন করার পর জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন শেষ হয়ে গিয়েছে সঞ্জয় বাঙ্গারের সন্তানের। অনয়া জানিয়েছেন কী ভাবে পুরুষ থেকে নারী হয়ে ওঠার কথা ভেবেছিলেন তিনি। বলেন, “আমার যখন আট-ন’বছর বয়স, তখন মায়ের আলমারি থেকে টেনে টেনে ওঁর পোশাকগুলো বার করতাম। সেগুলো পরতে চাইতাম। পরতামও। তার পর আয়নায় নিজেকে দেখতাম। মনে মনে বলতাম, “আমি মেয়ে। আমি মেয়ে হতে চাই।” যদিও সেই সময় লিঙ্গ পরিবর্তন করাতে পারেননি। আইনি কারণেই সেটা সম্ভব হয়নি। ২০২১ সালে লিঙ্গ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অনয়া।
পুরুষ হিসাবে ক্রিকেট খেলার সময় মুশির খান, সরফরাজ় খান, যশস্বী জয়সওয়ালদের সঙ্গে খেলেছিলেন তিনি। অনয়া বলেন, “আমি যে মনে মনে নারী হতে চাই, সেটা কাউকে বলতাম না। আমার বাবা পরিচিত মুখ। সেই কারণেই বলতাম না। ক্রিকেট দুনিয়ায় কোনও নিরাপত্তা নেই। বিষাক্ত পুরুষে ভরা।”
বাঙ্গার ভারতীয় দলে খেলেছেন। পরে ভারতের কোচের দায়িত্বও সামলেছেন। আইপিএলে পঞ্জাব কিংসের হেড অফ ক্রিকেটের দায়িত্বও সামলেছেন। তাঁর সন্তান ২৩ বছরের আরিয়ান ছোট থেকে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। ইসলাম জিমখানা ক্লাবের হয়ে খেলতেন তিনি। পরে চলে যান লন্ডনে। সেখানে গিয়ে লিস্টারশায়ারের হিঙ্কলে ক্রিকেট ক্লাবের হয়েও খেলতেন এই বাঁহাতি ব্যাটার।
এখন ম্যাঞ্চেস্টারে থাকেন অনয়া। ২০২১ সালে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, লিঙ্গ পরিবর্তন করাবেন। সেই মতো ‘হরমোনাল রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি’ হয়। ১০ মাস ধরে সেই প্রক্রিয়া চলেছে। গত বছর নভেম্বরে সেই সময়ের কথা সমাজমাধ্যমে তুলে ধরেছিলেন অনয়া। সেই ভিডিয়োয় তাঁর খেলার ছবি ছিল। পাশাপাশি ২০১৬ সালে বিরাট কোহলি ও ২০১৭ সালে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সঙ্গে তোলা ছবিও ছিল। ভিডিয়োর ক্যাপশনে তিনি লিখেছিলেন, “ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নের পিছনে ছুটতে গিয়ে অনেক ত্যাগ করতে হয়েছে। অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। ক্রিকেটের বাইরে আরও একটা যাত্রা চলছিল। নিজেকে চেনার যাত্রা। সেই পথেও অনেক লড়াই করতে হয়েছে। অবশেষে নিজের সিদ্ধান্তেই টিকে থেকেছি। নিজেকে ভালবেসেছি। নিজেকে নিয়ে আমি গর্বিত।”
লিঙ্গ পরিবর্তন করানোয় পেশাদার ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন ছাড়তে হয়েছে অনয়াকে। কারণ, ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা আইসিসি-র নিয়ম, রূপান্তরকামী বা রূপান্তরিতেরা মহিলাদের ক্রিকেট খেলতে পারবেন না। মহিলা ক্রিকেটারদের সুরক্ষা ও খেলার মধ্যে সাম্য বজায় রাখার জন্য এই নিয়ম করা হয়েছে।
ক্রিকেটের এই নিয়মের বিরুদ্ধেও সরব হয়েছেন অনয়া। তাঁর মতে, লিঙ্গ পরিবর্তন করানোয় তিনি যে ক্রিকেট খেলতে পারবেন না তা কোনও দিন ভাবতে পারেননি। ক্রিকেটের নিয়মে বলা হয়েছে, বয়ঃসন্ধির আগে লিঙ্গ পরিবর্তন করালে একমাত্র তখনই কোনও রূপান্তরিতকে মহিলাদের ক্রিকেট খেলার অনুমতি দেওয়া হবে। কিন্তু আইন অনুযায়ী, ১৮ বছর না হলে লিঙ্গ পরিবর্তন করানো বেআইনি। এই দ্বন্দ্বে পড়ে তাঁর মতো ক্রিকেটারদের স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁর। ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে গেলেও নিজের আর এক স্বপ্ন ভাঙতে দেননি অনয়া। নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী বাঁচার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।