নিরাপত্তার কারণে পাকিস্তানে গিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি না খেলে ভারত নিজেদের সব ম্যাচই খেলছে দুবাইয়ে। সম্প্রতি অনেকেই এ বিষয়ে আপত্তি তুলেছেন। ভারতকে বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেই সব অভিযোগ উড়িয়ে দিলেন দিলীপ বেঙ্গসরকর। জানালেন, বাকি দেশগুলি জিততে পারছে না বলেই এমন অভিযোগ তুলছে।
শুক্রবার কাশীপুর-বেলগাছিয়া এমএলএ কাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার উদ্বোধন উপলক্ষে শহরে এসেছিলেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক। সেখানেই আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, “কিসের সুবিধা পাচ্ছে ভারত? ক্রিকেট ম্যাচে পিচ এবং পরিবেশ দুটো দলের জন্যই সমান থাকে। এমন নয় যে একটা দল খেলতে নেমেছে। স্পিন সহায়ক পিচে বিপক্ষ দলে ভাল স্পিনার থাকলে তারাই জিতবে। একই কথা বলা যায় পেস বোলিং সহায়ক পিচ নিয়েও। ব্যাটারদের তো মানিয়ে নিতেই হবে। পিচ তো সবার কাছেই সমান। ভারত তো আলাদা পিচে খেলছে না।”
বেঙ্গসরকরের সংযোজন, “ভারতের কী ভাবে বিপক্ষ দলের শক্তির মোকাবিলা করছে সেটা খেয়াল রাখতে হবে। আমার মতে, এক দিনের ক্রিকেটে শেষ ১০ ওভার খুব গুরুত্বপূর্ণ। যে ওই ১০ ওভারে ভাল খেলবে সেই জিতবে।”
কিছু দিন আগে ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক মাইকেল আথারটন বলেছিলেন, “ভারত শুধু দুবাইয়ে খেলছে। আমার মনে হয় এই সুবিধা পাওয়াটা আটকানো যাবে না, অস্বীকারও করা যাবে না। ভারত একটা মাঠেই খেলছে। ওদের কোথাও যেতে হচ্ছে না। অন্য দলগুলোকে দুটো আলাদা দেশে যাতায়াত করতে হচ্ছে। ভারত জানে কোন মাঠে খেলবে। তাই ওরা সেটা মাথায় রেখে দল নির্বাচন করতে পেরেছে। ওরা এটাও জানে সেমিফাইনাল কোথায় খেলবে। আমার মনে হয়, এই সুবিধাটা অস্বীকার করা যাবে না।”
তা শুনে আর এক প্রাক্তন ইংরেজ অধিনায়ক নাসের হুসেন বলেছিলেন, “এটা সত্যিই বাড়তি সুবিধা। প্রতিযোগিতার অন্যতম সেরা দল এই সুবিধা পাচ্ছে। সে দিন সমাজমাধ্যমে একটা লেখা দেখলাম, ‘পাকিস্তান আয়োজক, কিন্তু ভারত ঘরের মাঠে খেলার সুবিধা পাচ্ছে।’ আমার মনে হয় এই কথাটা খুব সত্যি। ওরা একটা জায়গায় রয়েছে। একই হোটেলে রয়েছে। কোথাও যেতে হচ্ছে না। একটাই সাজঘর। পিচও চেনা। দল নির্বাচনও করেছে, ওই পিচের কথা ভেবে। ওরা জানত, দুবাইয়ে কেমন পিচ হবে। সেই অনুযায়ী দল নির্বাচন করেছে। দলে সব স্পিনার নিয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম প্রশ্ন তুলেছিল যে, কেন এত স্পিনার নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এখন সেটা বোঝা যাচ্ছে।”
এই দু’টি উক্তি মনে করাতেই হেসে ফেললেন বেঙ্গসরকর। তাঁর সংক্ষিপ্ত উত্তর, “আসলে ইংল্যান্ডের কাজই হল হেরে গেলে কান্নাকাটি করা। এটা তো সব সময় চলতে পারে না। খারাপ খেলেছে বলেই ওরা হেরেছে।”
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বিরাট কোহলির খেলা মনে ধরেছে বেঙ্গসরকরের। দরাজ গলায় প্রশংসা করে বলেছেন, “কোহলি অসাধারণ ক্রিকেটার। এত বছর ধরে ভাল ক্রিকেটে খেলে চলেছে। বড় ম্যাচে খেলতে ভালবাসে ও। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোহলি একটু বেশিই ভাল খেলে। শুধু শতরানই করেনি, শেষ পর্যন্ত ক্রিজ়ে থেকেছে। আশা করি বাকি প্রতিযোগিতায় ও এ রকমই ফর্মে থাকবে। ক্রিকেটের প্রতি ওর আবেগ বাকি অনেকের থেকে আলাদা।”
ভারতের খেলা দেখে অনেকেই তাদের ট্রফি জেতার দাবিদার হিসাবে চিহ্নিত করে ফেলেছেন। একই মত ঋদ্ধিমান সাহারও। বেঙ্গসরকরের পাশে বসে তিনি বললেন, “ভারতের হয়ে খেলার সময় হোক বা তার পরেও, আমি সব সময় চাই আমাদের দেশই জিতুক। সেটা অনায়াস জয় হোক বা শেষ বলে জয় হোক। ভারতের জয় দেখাই আসল। আমরা সবাই ট্রফির জন্য অপেক্ষা করি। এ বারও ট্রফি জিতবে বলেই আশা করছি।”
আরও পড়ুন:
ঋদ্ধির সুরে সুর মিলিয়েছেন বেঙ্গসরকরও। তাঁর মতে, প্রতিটি বিভাগে ভাল খেলার জন্যই ভারত বাকি দলগুলির থেকে আলাদা। বলেছেন, “জসপ্রীত বুমরাহ না থাকা সত্ত্বেও বাকিরা সেই সুযোগটা কী ভাল ভাবে কাজে লাগাচ্ছে! আমরা অনেক অভিযোগ করি দল নিয়ে। কিন্তু যে ১১ জন খেলছে তারাই আসল নায়ক। কোহলি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কী অসাধারণ শতরান করল। রোহিত শর্মা ভাল ফর্মে রয়েছে। শুভমন গিল প্রথম ম্যাচে অর্ধশতরান করল।”
তবে নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতের আসল পরীক্ষা বলে মনে করেন তিনি। বেঙ্গসরকরের ব্যাখ্যা, “নিউ জ়িল্যান্ড দলে ভাল স্পিনার রয়েছে। ভারতের বিরুদ্ধেও ওদের রেকর্ড ভাল। দলটায় ভারসাম্য রয়েছে। তাই আমার মতে, কঠিন প্রতিপক্ষ। ওদের বিরুদ্ধে জিততে গেলে ভারতকে খুবই ভাল খেলতে হবে।”