ডিউক বল নিয়ে ক্ষোভ কমছে না সুনীল গাওস্করের। ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটারের মতে, ভারতে যদি এই ঘটনা ঘটত তা হলে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড ও সেখানকার সংবাদমাধ্যম সমালোচনা শুরু করত। যে হেতু ইংল্যান্ডে এটা হয়েছে তাই সকলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
লর্ডস টেস্টের মাঝে ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় গাওস্কর বলেন, “যদি এই ঘটনা ভারতে ঘটত। যদি এমনটা হত যে বল বদলের পরেও তার আকার তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তা হলে তো ইংল্যান্ড বোর্ড ও সেখানকার সংবাদমাধ্যম রে রে করে তেড়ে আসত। তা হলে এখন কেন কথা হবে না?”
ভারত-ইংল্যান্ড টেস্টে ডিউক বল নিয়ে বিতর্ক বেড়েই চলেছে। তাড়াতাড়ি বলের আকার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভারতীয় ক্রিকেটারদের অভিযোগ, খুব তাড়াতাড়ি বল নরম হয়ে যাচ্ছে। ফলে বোলারদের সমস্যা হচ্ছে। তার মধ্যেই ভারতের অভিযোগ, তাদের পুরনো বল দেওয়া হয়েছে। আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কেও জড়িয়েছেন শুভমন গিলেরা।
লর্ডসে প্রথম দিন কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু দ্বিতীয় নতুন বল নিয়ে সমস্যা হয়। দ্বিতীয় দিন শুরুর স্পেলে জসপ্রীত বুমরাহ ইংল্যান্ডের তিন ব্যাটারকে আউট করার পরেও বল নিয়ে খুশি ছিল না ভারতীয় দল। তাঁরা অভিযোগ করেন আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা সৈকতের কাছে। বাংলাদেশের আম্পায়ার খতিয়ে দেখেন, সত্যিই বলের আকার বদলে গিয়েছে। তত ক্ষণে সেই বলে মাত্র ১০.৩ ওভার খেলা হয়েছে।
বল বদলের পর যে বল দেওয়া হয় তা নিয়েও খুশি ছিলেন না শুভমনেরা। বল হাতে পেয়েই শুভমন তা নিয়ে আপত্তি করেন। তাঁদের অভিযোগ, বল মোটেই ১০ ওভার পুরনো নয়। আরও পুরনো। মহম্মদ সিরাজকে তো স্টাম্প মাইক্রোফোনে বলতে শোনা যায়, “এটা ১০ ওভার পুরনো বল মনে হচ্ছে? সত্যি সত্যি?” শরফুদ্দৌলা অনুরোধ করেন তাড়াতাড়ি বল করতে যাওয়ার জন্য। সিরাজ রান-আপ শুরু করতে যাবেন এমন সময় আকাশদীপ এগিয়ে এসে আবার বলের পালিশ দেখান। ভারতীয় ক্রিকেটারদের দেখে বোঝা যাচ্ছিল, এই বলে একেবারে সন্তুষ্ট নন তাঁরা। কিন্তু আম্পায়ার কোনও কথা শোনেননি।
সেই সময় ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন গাওস্কর। তিনিও বল দেখে অবাক হয়ে যান। গাওস্কর বলেন, “এখান থেকে দেখেও বোঝা যাচ্ছে যে ওটা কোনও ভাবেই ১০ ওভার পুরনো বল নয়। অন্তত ২০ ওভার পুরনো বল।” তিনি আরও বলেন, “বার বার ডিউক বল নিয়ে অভিযোগ হচ্ছে। আগে এই বলে যা সুইং হত এখন তার ধারেকাছেও হয় না। এ বার সত্যি ভাবার সময় এসেছে। ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডকে ভাবতে হবে, এর পরেও ডিউক বলে ওরা খেলবে কি না।”
আরও পড়ুন:
সেই বলেও বেশি ক্ষণ খেলা হয়নি। আট ওভার পর আবার আম্পায়ারের কাছে অভিযোগ করে ভারতীয় দল। দেখেন বল আকারে বড় হয়ে গিয়েছে। বল পরীক্ষা করার ‘রিং’-এর মধ্যে ঢুকছে না। ফলে আবার বল বদলানো হয়। তবে কি ভারতের অভিযোগই সত্যি ছিল? পুরনো বল দেওয়া হয়েছিল তাদের? সেই কারণেই সেই বলে বেশি ক্ষণ খেলা হল না! দ্বিতীয় বার বল বদলের পরে অবশ্য কোনও অভিযোগ করেনি ভারতীয় দল।
টেস্টে একটা বলে ৮০ ওভার খেলা হয়। সেখানে ডিউক বলের আকার ১০ ওভারও ঠিক থাকছে না। এতে অবাক ইংল্যান্ডেরই প্রাক্তন ক্রিকেটার স্টুয়ার্ট ব্রড। তিনি সমাজমাধ্যমে লেখেন, “বল সবসময় একজন ভাল উইকেটরক্ষকের মতো। তাকে নিয়ে বেশি আলোচনা হয় না। কিন্তু এই সিরিজ়ে বল নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। এটা মানা যায় না। পাঁচ বছর ধরে এই সমস্যা হচ্ছে। ডিউক বলে সমস্যা হচ্ছে। একটা বলে ৮০ ওভার হওয়া উচিত। ১০ ওভার নয়। এই সমস্যা মেটাতেই হবে।”
বিতর্কের মাঝে সাফাই দিয়েছে ডিউক। বলের নির্মাতা সংস্থার মালিক দিলীপ জাজোদিয়া সংবাদ সংস্থাকে বলেন, “ক্রিকেট বল বানানো খুব একটা সহজ কাজ নয়। তা হলে সকলেই বানাতে পারত। বিশ্বক্রিকেটে মাত্র তিনটে স্বীকৃত সংস্থা রয়েছে যারা বল বানায়। কোকাবুরা, এসজি এবং আমরা। বল বানানো সহজ কাজ হলে শ’য়ে শ’য়ে সংস্থা এই কাজ করত।” পাশাপাশি তিনি এ-ও জানিয়েছেন যে, বলের সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছেন। দিলীপ বলেন, “ক্রিকেটারদের বোঝা উচিত, আমরা হাত-পা গুটিয়ে বসে নেই। চুপচাপ বসে বসে পা দুলিয়ে সিগার খাচ্ছি না। আপ্রাণ চেষ্টা করছি ভাল বল বানানোর।” তার পরেও ক্ষোভ কমছে না গাওস্করের।